ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগ যোগ্যতার শীর্ষে থেকেও তলানিতে ব্যাংকের শেয়ার দর

প্রকাশিত: ০৯:২২, ৮ মার্চ ২০২০

বিনিয়োগ যোগ্যতার শীর্ষে থেকেও তলানিতে ব্যাংকের শেয়ার দর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের গড় মূল্য আয় অনুপাত অবস্থান করেছে ৬ দশমিক ৮৭ তে। যা কখনও দেখা যায়নি। কিন্ত এর পরও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই এই খাতে। বর্তমানে ১৯টি খাতের কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে ব্যাংকিং খাত। এর মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার অভিহিত দর বা ১০ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে। ১৩টির শেয়ার দর রয়েছে ২০ টাকার নিচে। বাকি নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ২০ টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে। এই খাতের সর্বোচ্চ দামী শেয়ার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের। বর্তমানে এর শেয়ার ৬৩ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী যে শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত যত কম সেই শেয়ারের চাহিদা তত বেশি থাকার কথা। কিন্ত ব্যাংকিং খাতে এর উল্টো পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে কাগজ ও প্রকাশের খাতের শেয়ারের গড় পিই-রেশিও ৪৯। আর্থিক খাতের ৫১ দশমিক ২৮। উচ্চমাত্রার এ পিই-রেশিও নিয়ে দর বৃদ্ধির দাপট দেখাচ্ছে এসব খাতের কিছু কোম্পানি। মূলত ২০১০ সালের পর থেকেই ব্যাংকিং খাতের প্রতি অনিহা দেখা যায় বিনিয়োগকারীদের। অধিকাংশ ব্যাংকেরই তখন আয়-মুনাফায় ভাটা পড়ে। পরবর্তীতে হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক দুর্নীতিসহ খাতটিতে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পরে এসব পরিস্থিতি অনুকূলে এলেও খাতটি আর বিনিয়োগকারী টানতে পারেনি। বর্তমানে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যাংকের সুদহার নয়ছয়। ব্যাংকিং খাতে ছয়-নয় সুদহারের বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তাকে অযৌক্তিক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ছয়-নয় বাস্তবায়নের কারণে ব্যাংকের মুনাফায় তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। আগামী এপ্রিল মাস থেকে ব্যাংকিং খাতে ছয়-নয় সুদহার কার্যকর হচ্ছে। অর্থাৎ তখন থেকে ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ দিতে পারবে। অন্যদিকে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে ঋণের সুদ। ব্যাংক যে আমানত নিয়ে থাকে, তারই একটি বড় অংশ আবার ঋণ হিসেবে বিতরণ করে। যে সুদে আমানত নেয়া হয়, ঋণের সুদ হয় তার চেয়ে কিছুটা বেশি। এই দুই সুদ হারের মধ্যে যে ব্যবধান তা-ই ব্যাংকের আয়। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের ফি ও কমিশন থেকেও ব্যাংকের কিছু আয় হয়ে থাকে। এই আয় থেকে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় মেটানো, মন্দ ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখা এবং আয়কর দেয়ার পর কোন অর্থ উদ্বৃত্ত হলে সেটি হয় ব্যাংকের নিট মুনাফা। আর এই মুনাফা থেকেই ব্যাংক লভ্যাংশ বিতরণ করে থাকে। মূলত এই কারণেই সম্প্রতি ব্যাংক শেয়ারের প্রতি আরও অনিহা তৈরি হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন ব্যাংকের লভ্যাংশ দেয়ার সামর্থ্য কমে যাবে। এমন আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের অনেকে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তাতে এই খাতের শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে সুদহার ছয়-নয়ের কারণে ব্যাংকের মুনাফায় তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। ব্যাংকের মুনাফা হয় মূলত স্প্রেড থেকে। ছয়-নয়ের কারণে সুদ খাতে ব্যাংকের আয় যেমন কমবে, তেমনই এই খাতে ব্যয়ও কমবে। অর্থাৎ আমানত ও ঋণের সুদ হারের ব্যবধান প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। এ কারণে বিষয়টি মুনাফায় প্রভাব ফেলবে না। এদিকে ব্যাংকিং খাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তলানিতে নামলেও গত মাসে এই খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়তে দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, যারা এই খাতে বিনিয়োগ করছেন আমি মনে করি তারা ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই খাতের শেয়ার এখন যে পরিস্থিতিতে রয়েছে সেখানে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ কররে ভাল ফল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
×