ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন থেকেই পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৭:২১, ৭ মার্চ ২০২০

 ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন থেকেই পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন থেকে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, মশানিধন কার্যক্রম বছরজুড়েই চালাতে হবে। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একদিন কমলেই পরদিনই বাড়ছে। সংখ্যাটা এখনও শূন্যে নেমে আসেনি। গত বছরের রেশ এখনও রয়ে গেছে। সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারী হিসাবে এই সংখ্যা আরও বেশি। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি হাসপাতালে রোগী ছিল ২২ জন। এর মধ্যে তার আগের ২৪ ঘণ্টায় (১ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ২ জানুয়ারি সকাল ৮টা) পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়েছিল ১৭ জন, বাকি পাঁচ জন আগে থেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তার ঠিক দুই দিন (৪ জানুয়ারি) পরে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ২১ জন। গত ৮ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ছিল ৯৮ জন। অথচ গত বছরের (২০১৯) জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৮ জন, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১৫ জন, ২০১৫ সালে জানুয়ারিতে রোগীর সংখ্যা শূন্য থাকলেও ২০১৬ সালে ১৩ জন, ২০১৭ সালে ৯২ জন ও ২০১৮ সালে ছিল ২৬ জন। আর ১০ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, নতুন বছরের প্রথম ১০ দিনে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১১৮ জন রোগী। আর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে ৬৮ জন রোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রধান বাহক হিসেবে এতদিন এডিস মশাকে বলা হলেও গত বছরে এ্যালবোপিকটাস মশার মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। যে কারণে কেবল ঢাকা নয়, সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। এরপরও এডিস মশাকে রাজধানীকেন্দ্রিক ধরে নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্ত্রী এডিস মশা একসঙ্গে ৬০ থেকে ১৫০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। ডিমগুলো শুকনো অবস্থায় এক বছর পর্যন্ত জীবন্ত থাকে। আর পানির স্পর্শ পেলেই সেগুলো থেকে মশার জন্ম হয়। স্ত্রী মশা একদিন পর পর ডিম দেয়। প্রতিবার ডিম দেয়ার আগে মানুষের রক্তের প্রয়োজন হয়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, বছরের কোন কোন সময় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও সেটা একেবারেই চলে যায় না। তিনি আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মশানিধন অভিযান বছরজুড়েই চালাতে হবে। এটা ‘সিজনালি’ করলে হবে না। আর রোগী সংখ্যা যদি একটা লেভেল পর্যন্ত রাখা যায়, তাহলে কখনোই কন্ট্রোলের বাইরে যাবে না। ডা. মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ডেঙ্গু থাকবে। তবে চলতি বছরে গত বছরের মতো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তবে মশানিধনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি। এদিকে গত ১৭ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা শহরে সর্বশেষ মশা জরিপ করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তহমিনা বলেন, এ জরিপে দেখা গেছে, গত বছর এই সময়ে যে পরিমাণ লার্ভা ছিল, এ বছর তার চেয়ে কম। তিনি আরও বলেন, ঢাকার বড় প্রকল্প এলাকার লার্ভা বা মশা নিধন করা কঠিন। এ বছর তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গণপূর্ত বিভাগ, আবহাওয়া অধিদফতরসহ সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এজন্য বাড়তি তহবিলও দরকার।’ জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু রোগ কম হতে পারে। তারপরও যে সংখ্যক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হবেন, সেই সংখ্যাটাও কম হবে না। তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী কার্যক্রম চালানোরও পরামর্শ দেন তিনি।
×