ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য টাইগারদের

‘অধিনায়ক’ মাশরাফির শেষ ম্যাচ আজ

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ৬ মার্চ ২০২০

 ‘অধিনায়ক’ মাশরাফির শেষ ম্যাচ আজ

মিথুন আশরাফ ॥ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে আজ তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুপুর ২টায় ম্যাচটি শুরু হবে। এই ম্যাচটিই অধিনায়কত্বে মাশরাফি বিন মর্তুজার শেষ ম্যাচ হতে চলেছে। ম্যাচটির আগে বৃহস্পতিবার মাশরাফি নিজেই সেই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচই হবে অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ।’ অধিনায়কত্বে আজ শেষ ম্যাচ খেললেও ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে এখনই অবসর নিচ্ছেন না ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। সেই ২০০৯ সাল থেকে টেস্ট খেলতে পারেন না। ২০১৭ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজের পর স্বল্প ওভারের ক্রিকেট থেকেই অবসর নেন। শুধু ওয়ানডে খেলে যান। ওয়ানডের অধিনায়কও মাশরাফিই থাকেন। তবে আজকের পর আর ওয়ানডেতেও তাকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাবে না। অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন। তবে খেলা চালিয়ে যাবেন। মাশরাফিই বলেছেন, ‘তবে খেলা চালিয়ে যাব আমি। তবে খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করব। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পেশাদারিত্বের জায়গা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত আমার।’ কেন এভাবে সরে যাওয়া? এর জবাবও দিয়েছেন তিনি। মাশরাফি বলেন, ‘এ মুহূর্তে ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবছে বিসিবি। নতুন অধিনায়ক সেট করতে চাচ্ছে তারা। এ সিদ্ধান্তে আমি বোর্ডের সঙ্গে একমত। তাই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ালাম।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজই মাশরাফির অধিনায়কত্বে শেষ সিরিজ হতে চলেছে। তিনি বলেছিলেন, ‘সামনের ওয়ানডে বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে আমাদের দল গোছাতে হবে। একজন অধিনায়কও ঠিক করতে হবে। বিশ্বকাপের আগে অন্তত দুই বছর যেন ওই অধিনায়কের নেতৃত্বে টিমটা খেলতে পারে। সুতরাং খুব দ্রুত আমরা ওয়ানডেতে নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করব। সম্ভবত আগামী বোর্ড সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।’ নতুন অধিনায়কের ঘোষণা দেয়া মানেই মাশরাফিকে আর অধিনায়ক রাখা হচ্ছে না। বিসিবি সভাপতির এমন ঘোষণার পর নেতৃত্ব নিয়ে কথা উঠতেই মাশরাফি বলেছিলেন, ‘ক্লিয়ার (অধিনায়কত্বে শেষ সিরিজ) করার কী আছে? সব তো বোর্ড প্রেসিডেন্ট বলেছেন। আমার সঙ্গে তার কি কথা হয়েছে তা আমার মনে হয় না উচিত আপনাদের বলা। ক্রিকেট বোর্ড যা বলেছে সেটা তো আপনারা জানেনই। সেটাই তো আপনাদের জন্য যথেষ্ট। আমি আর কী বলতে পারি? সেটা তো আমি জানি না। এখন আসলে আপনাদের তো আমার বলার কিছু নেই। যদি থাকত তবে বলতাম। যেহেতু বোর্ড প্রেসিডেন্ট এটা বলেছেন, সেটা তো আপনারা জেনেছেন। এটা আবার আমার মুখ থেকে শোনার দরকার কী?’ মাশরাফির কণ্ঠে নেতৃত্ব ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভও ঝরেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হলো? নেতৃত্ব ছেড়েই দিচ্ছেন মাশরাফি। বিশ্বকাপে ব্যর্থ হন মাশরাফি। এরপর আর বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলেননি। গত বছর জুলাইয়ের পর আর জাতীয় দলের হয়ে নামা হয়নি। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ ছিল। তাতে চোটের জন্য খেলতে পারেননি। এবার যখন জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছেন, তখন চ্যালেঞ্জ নিয়েই খেলতে নামেন। কিন্তু নৈপুণ্য আশানুরূপ নয়। ২ ম্যাচে ১৬.১ ওভার বোলিং করে ৮৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন। এ সিরিজে খেলতে নামার আগে সর্বশেষ নিজের ১০ ম্যাচে মাত্র ১ উইকেট পান মাশরাফি। তাই পারফর্ম করার চাপ ছিলই। সঙ্গে এ সিরিজই নেতৃত্বের শেষ সিরিজ, এমন যে বলা হয়েছে, পারফর্ম দিয়ে নিজেকে সামনে তুলে ধরার চ্যালেঞ্জ থাকছে। কিন্তু পারফর্ম আসলে সেভাবে করতে পারেননি মাশরাফি। সাত মাস পর আবার বোলিং করতে নেমে নিজেকে প্রমাণ করার ব্যাপারও ছিল। তা কী করতে পেরেছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’? সেই প্রশ্ন থাকছে। খেলোয়াড় হিসেবে পারফর্ম করতে পারলেন কিনা, সেই প্রশ্ন এরপরও থাকবে। তবে নেতৃত্ব নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকছে না। আজ যে মাশরাফি তার ক্যারিয়ারে অধিনায়কত্বে শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলবেন। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে পুরোদমে নেতৃত্বে আসেন মাশরাফি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশ্বকাপে ভরাডুবি হওয়ার পর থেকেই মাশরাফির অবসর নিয়ে কথা হয়েছে। মাশরাফি অবসর নেননি। তবে নেতৃত্ব থেকে দুরে সরে গেলেন। সেই যাওয়া হচ্ছে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়েই। জিম্বাবুইয়ে সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির শেষ সিরিজ হলেও খেলোয়াড় হিসেবে তার দরজা এখনই বন্ধ হচ্ছে না। ফিট থাকলে, ফর্মে থাকলে অন্যদের মতো বিবেচনায় থাকবেন মাশরাফিও। তা বিসিবি সভাপতিই বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘অধিনায়ক আমরা ঘোষণা করে দেব। কারও যদি পারফর্মেন্স এবং ফিটনেস ঠিক থাকে তাহলে খেলতে তো কোন সমস্যা নেই। কেউ যদি খেলে যেতে চায় খেলবে। জাতীয় দলে চান্স পেতে হলে যা যা করতে হয় সেগুলো মাশরাফি পূরণ করতে পারলে খেলতে তো কোন সমস্যা নেই।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা দেখি নামী-দামী খেলোয়াড়রা পরিকল্পনা করেই বলে দেয়, এটা আমার শেষ সিরিজ। আমাদেরও ইচ্ছে ছিল মাশরাফি যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরা আয়োজন করে তাকে বিদায় জানাব। ইংল্যান্ডে থাকতে এমন ভাবনাই ছিল মাশরাফির। কিন্তু দেশে ফেরার পর দেখলাম ওর মানসিকতা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ও অবসর না নিলেও আমাদের তো একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খুব দ্রুতই আমরা আগামী বিশ্বকাপে যে নেতৃত্ব দেবে এমন একজনকে ওয়ানডে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেব। তারপর ও’ যদি নিজের পারফর্মেন্সে দলে ঢুকতে পারে ঢুকবে। এটা তো কারও জন্য বাধা নয়।’ মাশরাফির বেলাতে তাই হতে চলেছে। নেতৃত্ব আজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন ক্রিকেটার হিসেবেই দলে থাকবেন মাশরাফি। আর ক্রিকেটার হিসেবে থাকা মানে পারফর্ম করে, ফিট থেকেই দলে টিকে থাকতে হবে। মাশরাফি কী এভাবে দলে টিকে থাকতে পারবেন? সেই প্রশ্ন এখনই উঠছে। তবে সেই প্রশ্নের উত্তর সামনেই মিলবে। যখন বাংলাদেশ দল জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে আজ ওয়ানডে সিরিজ শেষ করে আবার কোন সিরিজ খেলবেন, তখন বোঝা যাবে। এখন মাশরাফি যে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিলেন, সেটিই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।
×