ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বসুন্ধরা কিংস ৯-০ নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি

সাবিনার হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ৬ মার্চ ২০২০

 সাবিনার হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক

রুমেল খান ॥ আগের দুই ম্যাচে দুটি দলই তাদের নিজ নিজ ম্যাচে জিতে অপরাজিত ছিল। দুই দলেই আছে জাতীয় দলের খেলোয়াড়। এক দলে সিনিয়র, অন্য দলে বয়সভিত্তিক বা জুনিয়র খেলোয়াড়। মহিলা ফুটবল লীগের সবচেয়ে শক্তিশালী ও শিরোপা প্রত্যাশী দল হচ্ছে এই দুই ক্লাব। বৃহস্পতিবার ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি এই দুই দল, যাদের নাম বসুন্ধরা কিংস এবং নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি। তুলনামূলক শক্তির নিরিখে নাসরিনের চেয়ে এগিয়ে বসুন্ধরা, এটা পরিষ্কার। কাজেই তারাই যে ম্যাচে জিতবে এটা অনুমেয়ই ছিল। শুধু প্রশ্ন ছিল, কয় গোলে জিতবে তারা। অনেকেই ধারণা করেছিলেন আগের দুই ম্যাচে বসুন্ধরা যেভাবে ১২ বা ১৩ গোলে জিতেছিল, এই ম্যাচে এত গোল করতে পারবে না। বড়জোর ৪-৫টা গোল করবে। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে বৃহস্পতিবারের ম্যাচে বসুন্ধরা জেতে ৯-০ গোলে। বিজয়ী দল খেলার প্রথমার্ধে ৪-০ গোলে এগিয়েছিল। বিজয়ী দলের সাবিনা খাতুন হ্যাটট্রিক করেন। লীগে এটা তার তৃতীয় হ্যাটট্রিক। স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে ইন্টারনেটের সংযোগ না দেয়া, সাংবাদিকদের বসার ব্যবস্থা না করা ... এগুলো করে চরম অব্যবস্থাপনার পরিচয় দিয়েই যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ভাবটা এমন, কোনমতে দায়সারা গোছের এই লীগটা শেষ করতে পারলেই বেঁচে যায় তারা। তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই জিতে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়ে লীগে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বসুন্ধরা। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা নাসরিনের প্রথম হার। ৬ পয়েন্ট নিয়ে আছে দুইয়ে। প্রথম হারের মতো এই ম্যাচে প্রথম গোলটিও হজম করল তারা। প্রথম গোল তো বটেই, এক ম্যাচেই ৯ গোল হজম। পক্ষান্তরে তিন ম্যাচে এখনও কোন গোল খায়নি বসুন্ধরা। তাদের গোলরক্ষক রূপনা চাকমা প্রতিটি ম্যাচেই অক্ষত রেখেছেন গোলপোস্ট। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে অবশ্য রূপনা পুরো ম্যাচে খেলতে পারেননি। শেষ ২০ মিনিট থাকতে তাকে উঠিয়ে নামানো হয় মাহমুদা আক্তারকে। এসএসসি পরীক্ষার কারণে দলের হয়ে প্রথম দুটি ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। ম্যাচশেষে বসুন্ধরার কোচ মাহমুদা শরীফা অদিতি বলেন, ‘প্রথম তিন ম্যাচে আমরা ৩৪ গোল করেছি। আমরা লীগের প্রথম লেগে কমপক্ষে ১০০ গোল করতে চাই।’ ম্যাচের ৩ মিনিটেই গোলের সন্ধান পেয়ে যায় বসুন্ধরা কিংস। বক্সের ভেতরে ডান পায়ের উঁচু শট নেন ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। নাসরিনের গোলরক্ষক ইয়াসমিন আক্তার ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পাননি (১-০)। এরপর লম্বা সময় পর ৪১ মিনিটে আবারও ব্যবধান দ্বিগুণ করে মাহমুদা শরীফা অদিতির শিষ্যারা। এবারের গোলদাতা ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুন (২-০)। এর ১ মিনিট পরই আবারও গোল একই দলের। নাসরিনের ডি-বক্সের বাইরে বাঁপ্রান্তে ফ্রি কিক পায় বসুন্ধরা। অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুনের ডান পায়ের উড়ন্ত শটটি গোলরক্ষক না বুঝে সামনে এগিয়ে গিয়ে ধরতে গিয়ে ধরা খান। কেননা বলটি তার মাথার ওপর দিয়ে জালে ঢুকে যায় (৩-০)। প্রথমার্ধের সংযুক্তি সময়ে গোলের ‘হালি’ পূর্ণ করে বসুন্ধরা। নাসরিনের ডি-বক্সের ঠিক সামনে থেকে ডান পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন আবারও সাবিনা (৪-০)। বিরতির পরও গোলবন্যা বজায় রাখে বসুন্ধরা। ৪৮ মিনিটে মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দার কাছ থেকে থ্রু পাস পেয়ে ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রাণী সরকার প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের শটে পরাস্ত করেন গোলরক্ষককে (৫-০)। ৫১ মিনিটে ডি-বকেèর ভেতরে সাবিনা-তহুরা-সানজিদা কম্বিনেশনে সুন্দর একটি গোল হয়। তহুরার শট নাসরিনের পোস্টে লেগে ফিরলে ফিরতি বলে আবার শট মেরে ঠিকই গোল করেন তহুরা (৬-০)। এরপর কিছুক্ষণের জন্য গোলবন্যার কিঞ্চিৎ বিরতি। ৭১ মিনিটে বাঁপ্রান্ত দিয়ে কৃষ্ণা বক্সে ঢুকে যে গড়ানো ক্রস করেন তা থেকে বাঁ পায়ের গড়ানো শটে গোল করতে কোন সমস্যা হয়নি রাইট উইঙ্গার সানজিদা আক্তারের (৭-০)। ৮৫ মিনিটে বক্সের ভেতরে বল পেয়ে ডান পায়ের শটে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সাবিনা (৮-০)। সংযুক্তি সময়ে (৯০+৩ মিনিটে) আরেকটি গোল করে নাসরিনের হারের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয় বসুন্ধরার মেয়েরা। এবারের গোলদাতা কৃষ্ণা। ম্যাচশেষে বসুন্ধরার হ্যাটট্রিক ওম্যান সাবিনা খাতুন বলেন, ‘এই লীগে টানা তিন ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে খুব ভাল লাগছে। এ জন্য টিমমেটদের অবদান আছে। অবশ্য এর আগেও হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিকও করেছি। সেটা ২০১১ সালের লীগে। ওই লীগে ২৭ গোল করেছিলাম শেখ জামালের হয়ে। চলতি লীগে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত গোল ও হ্যাটট্রিক আমার ... এটা নিয়ে যতটা না খুশি, তারচেয়েও বেশি খুশি আমাদের দল সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বরে আছে বলে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাবিনা বলেন, ‘যেভাবে টিম সাজানো হয়েছে এবং অনুশীলন করানো হয়েছে তাতে লীগে ভাল রেজাল্ট করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’ গত দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষের চেয়ে এই ম্যাচের প্রতিপক্ষ নাসরিন অনেক ভাল দল বলে মনে করেন সাবিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা জিতলেও গোল পেতে কষ্ট করতে হয়েছে। তাছাড়া তীব্র রোদ ও গরমের কারণে খেলতেও কিছুটা সমস্যা হয়েছে আমাদের। ওরা হারলেও ভাল খেলেছে।’ চলতি লীগে সাবিনা ৯ গোল করে আছেন এক নম্বরে। সবচেয়ে বেশি গোল করবেন বা হ্যাটট্রিক করবেন, এ রকম কোন লক্ষ্য নেই তার। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘কারণ এখন মেয়েদের ফুটবলের মান অনেক ভাল হয়েছে। চাইলেই আগের মতো এত বেশি বেশি গোল করা যায় না। লক্ষ্য একটাই, আমরা যেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারি।’
×