ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার কারণে চীনা শ্রমিকরা ফিরতে পারছেন না

পদ্মা সেতু নির্মাণে স্থানীয় দক্ষ শ্রমিকদের কাজে লাগানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ৬ মার্চ ২০২০

 পদ্মা সেতু নির্মাণে স্থানীয় দক্ষ শ্রমিকদের কাজে লাগানো হচ্ছে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ করোনাভাইরাসের কারণে পদ্মা সেতু ও রেলসংযোগ প্রকল্পের আটকেপড়া চীনা কর্মীদের বিপরীতে স্থানীয় দক্ষ শ্রমিকদের কাজে লাগানো হচ্ছে। কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সে ব্যাপারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যথা সময়ে এবং দ্রুত কাজ শেষ করতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অনেক চীনা কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটিতে যাওয়ায় স্থানীয় দক্ষ শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) গোলাম ফখরুদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেছেন, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রায় দেড় শ’ চীনা কর্মী চীনে আটকা পড়েছেন। এদের পরিবর্তে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশী এসব কর্মীর বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সম্পৃক্ত করা হবে। এই কর্মীর পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানান, কিছু কাজ আছে সেখানে চীনাদের লাগবেই। কিছু কিছু টেকনিক্যাল বিষয় রয়েছে। সেসব ক্ষেত্রে চীনের অন্য প্রদেশ থেকে (যে প্রদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নেই) কর্মীদের আনার ব্যাপারেও পরিকল্পনা চলছে। প্রকল্প পরিচালক জানান, বর্তমানের রেল প্রকল্পে প্রায় ৭শ’ চীনা কর্মী কাজ করছে। বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছে প্রায় ২ হাজার। আরও শতাধিক বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। করোনাভাইরাসের কারণে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও প্রকল্পের কাজের স্বাভাবিক রাখার চেষ্টার চলছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, কাজের গতি ঠিক থাকবে। পদ্মা মূল সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, মূল সেতুতে লেবার সংক্রান্ত এখন আর সমস্যা নেই। কারণ হিসেবে তিনি জানান, ৩৩২ জন চীনা কর্মী চীনে আটকা পড়েছিলেন। তাদের অনেকেই ফিরে এসেছে। পরবর্তীতে ১৭২ জন চীনে আটকা পড়েন। এই ১৭২ জনের বিপরীতে প্রায় ২শ’ জন বাংলাদেশী জরুরী ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। এরা কাজ করে যাচ্ছে। তবে পরবর্তীতে ১৭২ জনের মধ্যে থেকেও অনেকে ফিরেছে। এখন মাত্র প্রায় ৮০ জন চীনে আটকা রয়েছে। পরবর্তীতে চীনা কর্মীরা আসলেও তাদের বদলে নিয়োগ দেয়া বাংলাদেশীরাও কাজ করছে। তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, তাই এখন আর লেবারের কারণে কাজে সমস্যা হবে না। তবে চীন থেকে সেতুর কিছু ম্যাটেরিয়েলসের কারণে সমস্যা হতে পারে। যেমন ৪১টির মধ্যে এখন দুটি স্প্যান চীনে রয়ে গেছে। দুটি স্প্যান ছাড়াও ওয়েল্ডিং কেবল এবং স্লাব ও গার্ডারের ভেতরে যেসব স্টিলের প্রি-স্ট্রেজিং ক্যাবলসহ কিছু কিছু ম্যাটেরিয়েলস আছে যেগুলো চীন থেকে আসে। তিনি আরও জানান, ১০ মার্চ সেতুর ২৬তম স্প্যান বসানো হবে। ম্যাটেরিয়েলসের সঙ্কট এখনই হচ্ছে না। কারণ যে স্প্যান রয়েছে সেগুলো বসাতে বাসাতে হয়তো চীনে থাকা বাকি দুটি স্প্যানও চলে আসবে। পদ্মা সেতুর নদী শাসন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, পদ্মা সেতুর নদী শাসন প্রকল্পে ২৬৭ জন চীনা কাজ করছে। তবে ৫৮ জন চাইনিজ কর্মী চীনে আটকা পড়েছে। এছাড়া প্রায় ৭শ’ বাংলাদেশী কর্মী এই প্রকল্পে কাজ করছে। চীনা ৫৮ কর্মী অনুপস্থিতিতে আপতত প্রকল্পে তেমন প্রভাব পড়েনি। তাদের বিকল্প হিসাবে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এদিকে বুধবার কেরানীগঞ্জের জাজিরা এলাকায় পদ্মা সেতুর রেলওয়ে প্রকল্প অফিসে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক শামছুজ্জামান, বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাউন্সিলর লিউ ঝেনহুয়া, বাংলাদেশ রেলওয়ের পিবিআরএলপির প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন এ চৌধুরী, সিআরইসির পিবিআরএলপির প্রকল্প পরিচালক ওয়াং কুন, সিআরইসির পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক লিউ জিয়ানহুয়া। ওয়াং কুন জানান, কাজের সুবিধার্থে, এই রেল প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি এখন ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে আনা হচ্ছে এবং প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ও যন্ত্রপাতির সরবরাহ নিশ্চিত করতে লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। ওয়াং কুন জানান, হুবেই ছাড়া চীনের অন্যান্য প্রদেশের কর্মকর্তা যারা এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন তারা এরই মধ্যে বাংলাদেশে ফিরেছেন। এছাড়াও হুবেই ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলের চীনা কর্মকর্তার ছুটি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। পরবর্তী নোটিস না দেয়া পর্যন্ত এ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা বাংলাদেশে কর্মরত আছেন তাদের বার্ষিক ছুটি না নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×