ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ বাংলাদেশ জিতলেই হোয়াইটওয়াশ জিম্বাবুইয়ে

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৬ মার্চ ২০২০

 আজ বাংলাদেশ  জিতলেই হোয়াইটওয়াশ জিম্বাবুইয়ে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে আজ অনুষ্ঠিত হবে। ম্যাচটি সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ২টায় ম্যাচটি শুরু হবে। ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতলেই জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করবে। আর জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশের কারণেই নেতৃত্বে মাশরাফি বিন মর্তুজা ৫০তম ওয়ানডে জয়ও করবেন। যিনি আজ ম্যাচটি শেষ হতেই অধিনায়কত্বও ক্যারিয়ারও শেষ করে দেবেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতেই সিরিজ জয় করে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে রেকর্ড ১৬৯ রানে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় টাইগাররা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কষ্ট করে ৪ রানে জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে নেয় মাশরাফিবাহিনী। ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় হয়। এবার জিম্বাবুইয়েকে হারাতে পারলেই হোয়াইটওয়াশ করা যাবে। কিন্তু তা কী সম্ভব? প্রথম ওয়ানডেতে দাপটেই জেতা গেছে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেই দাপট উধাও হয়ে যায়। ৩২২ রান করেও জিম্বাবুইয়েকে বড় ব্যবধানে হারানো যায়নি। ৩১৮ রান করে ফেলে জিম্বাবুইয়ে। নয় নম্বর ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে নেমেই বাংলাদেশ বোলারদের ভোগান। ডোনাল্ড তিরিপানো যে ২৮ বলে অপরাজিত ৫৫ রান করে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান, তাতে চিন্তা হয়। ভাবনা হয়, তৃতীয় ওয়ানডেতে না আবার হেরে যায় বাংলাদেশ। তিরিপানোর মতো যদি উপরের সারির ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেউ ব্যাটিং করতে পারতেন, তাহলে তো ম্যাচই জিতে যেত জিম্বাবুইয়ে। এরপরও যে ৩১৮ রান করে জিম্বাবুইয়ে, তাতেই প্রশংসা কুড়াচ্ছে। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেও সমালোচনায় পড়ছে। জয় জয়ই। কিন্তু জিম্বাবুইয়ের মতো দলের বিরুদ্ধে ৩২২ রান করেও যখন সহজ জয় মিলে না, তখন প্রশংসা কী আর মিলে? দ্বিতীয় ওয়ানডেতে যেভাবে জয় মিলেছে, এই জয়কে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো জয় হিসেবেই দেখতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি বলেন, ‘জয় তো জয়ই। তবে এটা খুব ক্লোজ জয় ছিল। আমরা এই জয়ে নিজেদের স্নায়ু ভালভাবেই ধরে রাখতে পেরেছি। জয় এমন একটি বিষয়, যেটি নিয়ে পরের ম্যাচে যাওয়া যায়। যখন আপনি টাইট ম্যাচ জিতবেন, ভবিষ্যতে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস পাবেন।’ জিম্বাবুইয়ে ২১৩ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ২৫৫ রান করতেই ৭ উইকেট হারায়। এরপর তো জিম্বাবুইয়ানদের উড়ে যাওয়ার কথা। অথচ তিরিপানোর মতো নিচের সারির ব্যাটসম্যান কী ঝলক দেখালেন, তাতে হারের সম্ভাবনায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। বোলাররা যে কী ব্যর্থ হয়েছেন, তাতেই ধরা পড়ে। মাশরাফিও তা বুঝেছেন। তাই তো বলেছেন, ‘সবাই হয়তো বোলিং নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। কিন্তু এটা খুব ভাল উইকেট ছিল। শিশিরও ছিল মাঠে। বোলারদের জন্য তাই কাজটা কঠিন হয়ে যায়।’ বোলারদের মধ্যে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজুর রহমানের পরিবর্তে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে একাদশে খেলেন শফিউল ইসলাম ও আল আমিন হোসেন জুনিয়র। দুইজনই ওভারপ্রতি সাড়ে আট রানের মতো করে দেন। আজ তৃতীয় ওয়ানডেতে তাই শফিউল ও আল আমিনকে বসিয়ে আবার সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজকে একাদশে দেখা যেতে পারে। এ দুই বোলার যোগ হওয়া মানে বাংলাদেশের শক্তি আরও বেড়ে যাওয়া। তাতে তৃতীয় ওয়ানডেতে আবার বাংলাদেশের দাপট দেখা যেতে পারে। যদি দাপট দেখা যায়, তাহলে মাশরাফির অধিনায়কত্বে বিদায়ী ম্যাচটি স্মরণীয় হয়েই থাকবে। প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ নিয়েই যে নেতৃত্ব শেষ করতে পারবেন মাশরাফি। প্রথম ওয়ানডেতে লিটন কুমার দাস দেখান ব্যাটিং ঝলক। ১২৬ রান করেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তামিম ইকবাল জ্বলে উঠেন। ১৫৮ রানের ইনিংস খেলেন। দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়ানডেতে সেরা ইনিংস উপহার দেন। প্রতিম্যাচেই একটি করে সেঞ্চুরি হচ্ছে। আর সেই সেঞ্চুরিতে ভর দিয়েই শেষপর্যন্ত জয় মিলছে। আজ তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে কে বড় ইনিংস বা সেঞ্চুরি উপহার দেবেন? সেঞ্চুরি করার মতো ব্যাটসম্যান বলতে লিটন, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহই আছেন। বাকিরা সেঞ্চুরি করে ফেলবেন, এমন ভাবনা কমই হয়। তাহলে সেঞ্চুরি করলে এই ব্যাটসম্যানদের কারও কাছ থেকেই আসতে পারে। তবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে সৌম্য সরকারও যুক্ত হচ্ছেন। যিনিও সেঞ্চুরি করতে সক্ষম। ব্যাটিং উইকেট পেলে তো কথাই নেই। নাজমুল হোসেন শান্ত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফিল্ডিংয়ের সময় ক্যাচ ধরতে গিয়ে বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে আঘাত পেয়েছেন। তার সেলাইও পড়েছে। নিশ্চিতভাবেই শান্তর আজ খেলা হবে না। তার পরিবর্তে সৌম্য ব্যাটিংয়ে নামতে পারেন। তাতে করে সৌম্যও ব্যাটিং ঝলক দেখিয়ে দিতে পারেন। অবশ্য ম্যাচটিতে মুশফিকুর রহীমের খেলা নিয়ে আছে ধোঁয়াশা। যেহেতু মুশফিক পাকিস্তান সফরে যাবেন না। পাকিস্তানে গিয়ে ওয়ানডেতে খেলবেন না। তাই মুশফিকের পরিবর্তে একাদশে একজন ব্যাটসম্যানকে দেখা যেতে পারে। তবে তা নিশ্চিত নয়। কারণ, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে যেভাবে বাংলাদেশ দল বিপদে পড়ে জিতেছে, যদি মুশফিককে না খেলানো হয়, কী হয় তৃতীয় ওয়ানডেতে বলা মুশকিল। তাই ঝুঁকি নাও নিতে পারে বাংলাদেশ দল। মুশফিকের খেলা নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, একাদশে মুশফিককে রেখেই সেই ধোঁয়াশা কেটে যেতে পারে। কী হবে, তা আজ ম্যাচেই বোঝা যাবে। মাশরাফির অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচে মুশফিক থাকবেন না, তা কী হয়? তবে দ্বিতীয় ওয়ানডে থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃতীয় ওয়ানডেতে দাপট আবার দেখাতে পারে বাংলাদেশ। একমাত্র টেস্ট ম্যাচে জিম্বাবুইয়ে উড়ে যাওয়ার পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পাচ্ছে না। টেস্টে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারের পর প্রথম দুই ওয়ানডেতে ১৬৯ ও ৪ রানে হারে জিম্বাবুইয়ে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে যায় বাংলাদেশ। এবার জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার পালা। জিম্বাবুইয়েকে আজ হারাতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৭৫ ম্যাচে জয় সংখ্যা ৪৭টি হয়ে যাবে। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে যে জিম্বাবুইয়েকে ওয়ানডেতে টানা হারানো শুরু হয়েছে, টানা ১৫ ওয়ানডেতে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আজ জিতলে টানা ১৬ জয় মিলবে। দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৪১ ওয়ানডে খেলে ৩০টিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। জয়ের সংখ্যা এবার আরও ২টি বেড়েছে। যদি তৃতীয় ওয়ানডেও জেতা যায়, তাহলে ৩৩টি জয় মিলে যাবে। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৭ ওয়ানডে সিরিজ খেলে ১১টিতেই জয় মিলেছে। দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ১০ ওয়ানডে সিরিজ খেলে ৯টিতেই জয় মিলেছে। এখন জিম্বাবুইয়েকে পঞ্চমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার পালা। জিম্বাবুইয়েকে টানা চার সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার পালা।
×