ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দৈনিক লেনদেন এক হাজার ৩শ’ ৫৮ কোটি ;###;মাসে লেনদেন ৪২ হাজার কোটি টাকা

৮ কোটির বেশি এ্যাকাউন্ট ॥ মাইলফলক মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৬ মার্চ ২০২০

  ৮ কোটির বেশি এ্যাকাউন্ট ॥ মাইলফলক মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

রহিম শেখ ॥ মনসুরা বেগম রাজধানীর মিরপুর ভাসানটেক এলাকার একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন। চাকরির উপার্জিত অর্থের একটি অংশ প্রতি মাসের শুরুতেই গ্রামে থাকা বৃদ্ধা মা মর্জিনা বেগমকে পাঠান। মনসুরা বেগম জানান, ‘আগে আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাতাম। এমনও সময় গেছে, খুব জরুরী সময়েও টাকা পাঠাতে পারিনি। এখন নিজের মোবাইল থেকে মায়ের মোবাইলে টাকা পাঠাই মুহূর্তেই।’ দেশে এই মুহূর্তে মনসুরা বেগমের মতো মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হচ্ছে। এ হিসাবে গত জানুয়ারি মাসে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। এ তো শুধু দেশের কথা, প্রতিদিন বিদেশ থেকেও মোবাইলে আসছে টাকা। বাংলাদেশে থাকা আত্মীয় স্বজনের কাছে বৈধ উপায়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। তেমনি একজন আবুল হোসেন। কাজ করছেন সৌদি আরবে। প্রতি মাসের সাংসারিক খরচ মেটাতে স্ত্রী সুমি আক্তারকে টাকা পাঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। সুমি আক্তার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আগে ৩-৪ মাস পর পর ডাকযোগে স্বামীর টাকা আসত। তখন সাংসারিক খরচ মেটাতে সমস্যা হতো। এখন মোবাইল ব্যাংকিং থাকায় প্রতি মাসের টাকা প্রতিমাসেই পাই।’ সর্বশেষ হিসাব মতে, দেশে জানুয়ারি মাস শেষে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮ কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার। এর আগে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শুধু টাকা পাঠানো বা উঠানো নয়, কেনাকাটা, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, বেতনভাতা বিতরণ, সরকারী অনুদানপ্রাপ্তি, মোবাইলে তাৎক্ষণিক ব্যালান্স রিচার্জসহ বিভিন্ন সেবা এখন হাতের মুঠোয়। জানা গেছে, মূলত সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১১ সালের মার্চে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথমবারের মতো দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে। দেশের সরকারী-বেসরকারী ৫৮টি ব্যাংকের মধ্যে ২৮টি ব্যাংককে এই সেবা চালুর অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ২০টি ব্যাংক সেবাটি চালু করতে পারলেও পরবর্তী সময় চারটি ব্যাংক সেবাটি বন্ধ করে দেয়। ফলে বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা ব্যাংকের সংখ্যা ১৬টিতে নেমে এসেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ এবং সরকারী ডাক ব্যবস্থায় পরিচালিক ‘নগদ’ এ সেবায় এগিয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমএফএস লেনদেনের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন গ্রাহক তার এ্যাকাউন্টে দিনে পাঁচবারে ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন বা জমা করতে পারবেন। মাসে ২৫ বার সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ক্যাশ ইন করা যায়। আগে প্রতিদিন দুবারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা করতে পারতেন একজন গ্রাহক। মাসে ২০ বারে এক লাখ টাকা ক্যাশ ইন করতে পারতেন তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ৮ ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এগুলো হলো- ইনওয়ার্ড রেমিটেন্স, ক্যাশ-ইন ট্রানজেকশন, ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন, পিটুপি ট্রানজেকশন, বেতন বিতরণ (বিটুবি), ইউটিলিটি বিল (পিটুবি), মার্চেন্ট লেনদেন ও সরকারী বিভিন্ন বিল পরিশোধ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম জনকণ্ঠকে বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নতুন নতুন সেবা যুক্ত হচ্ছে। এজন্য সক্রিয় হিসাবও বাড়ছে। তিনি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা এখন বিকাশে টাকা পাঠাতে পারছেন। বিকাশ এ্যাপ ও ব্যাংকগুলোর অনলাইন ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নতুন এ সেবা নিতে পারছেন ব্যাংকের গ্রাহকরা। তিনি বলেন, বর্তমানে সারাদেশে তিন কোটি ৭০ লাখের বেশি বিকাশ গ্রাহক রয়েছে। বিকাশ এ্যাপ থেকে পল্লী বিদ্যুত, নেসকো, ডেসকো প্রিপেইড এবং বিটিসিএলসহ আরও নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানের ফি পরিশোধ করা যাচ্ছে। এছাড়া বিকাশ থেকে যখন তখন মোবাইল রিচার্জ, সব ধরনের বিল পরিশোধসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। তিনি আরও বলেন, আর্থিক লেনদেনে গ্রাহকের জন্য আরও সুযোগ এবং সক্ষমতা তৈরির প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে। খুব অল্প সময়ে ৮ কোটি গ্রাহক বিস্ময়ের বিষয়। তিনি বলেন, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যাংকিং চ্যানেল এখন অনেক সজাগ। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর। এ ক্ষেত্রে যেসব আইন রয়েছে তার পরিপালন নিয়ে কাজ করছি আমরা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি’র অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম জনকণ্ঠকে বলেন, যাদের লক্ষ্য করে এই ব্যাংকিংয়ের কথা বলা হচ্ছে অর্থাৎ অল্প আয়ের মানুষ এবং স্বাভাবিকভাবেই স্বল্পশিক্ষিত মানুষের আওতায় ব্যাংকিং সেবায় আসতে পারে অনায়াসেই। তিনি বলেন, ব্যাংকের শাাখা খুলে মানুষকে আর্থিক সেবার আওতায় আনা ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ বিষয়। যা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজে এরং স্বল্প খরচেই সম্ভব। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, দরিদ্র ও ব্যাংকিং সেবাবহির্ভূত জনগণকে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে এবং প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দ্রুত, সহজ ও নিরাপদে গ্রামীণ এলাকায় বসবাসরত উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ২০১০ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের কার্যক্রম শুরু করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে তফসিলি ব্যাংকগুলো। যার ফলে আজ মোবাইল ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা নতুন মাত্রা ছুঁয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলেও তিনি জানান। ড. আতিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় খোলা ব্যাংক হিসাবগুলোকে ধরলে গ্রাহকের দিক দিয়ে প্রথম দিকে থাকবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রশংসা করেছেন স্বয়ং বিল গেটস। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিংয়ে তথ্য-প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় আর্থিক সেবা এখন গরিবের কাছে পৌঁছে গেছে। ধনীরা ঋণ মঞ্জুর এবং ইন্স্যুরেন্সসহ অন্য আর্থিক সেবা ব্যাংক থেকে নিতে পারেন, কিন্তু গরিবদের সেখানে সুযোগ একেবারে কম। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদান আর্থিক সেবার ব্যয় কমায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জানুয়ারি মাসে মোবাইলের মাধ্যমে পার্সন টু পার্সন বা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। আগের মাস ডিসেম্বরে এই লেনদেন ছিল ৯ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একজন গ্রাহক মামুন-অর-রশীদ জনকণ্ঠকে জানান, দেশের সুপারশপগুলোতে এখন মোবাইলের মাধ্যমেই লেনদেন বেশি হয়। বিকাশ, রকেট, নগদসহ অন্য ব্যাংক এখন ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশব্যাক অফার দেয়। এতে কেনাকাটার পাশাপাশি সাশ্রয়ও হয় কিছু টাকা। এসব লেনদেন ব্যক্তিগত হিসাবের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। পার্সন টু পার্সন পেমেন্টস (পিটুপি) হলো একটি অনলাইন প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে অন্য ব্যক্তির এ্যাকাউন্টে ইন্টারনেট বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তর করতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে মোট ১৬টি ব্যাংক। এ সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৮১ হাজার ৫৩৭ জনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, জানুয়ারি মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৪২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৭৪ লাখ ২২ হাজার ২৬৪টি লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে আদান-প্রদান হয়েছে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ১৭ টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১৪ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। জানুয়ারি মাসে উত্তোলন হয়েছে ১৩ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৮৩ কোটি টাকার বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে; যা আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় রেমিটেন্স এসেছে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা; যা ডিসেম্বর মাসে ছিল ৩০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে রেমিটেন্স কমেছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে মার্চেন্ট পেমেন্ট (কেনাকাটার বিল) করা হয়েছে ৬২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা; যা আগের মাসের চেয়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। তবে এ সময় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭২ কোটি ২ লাখ টাকা। আর সরকারী পেমেন্ট রেকর্ড পরিমাণে ১৩৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। রেমিট্যান্স এলেই মোবাইলে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে ব্যাংক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স সুবিধাভোগীর কাছে দ্রুত পৌঁছে দিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ‘বিশেষ সুবিধা’ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকিং চ্যানেলে কোন প্রবাসী রেমিটেন্স পাঠালে সেই টাকা আসার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সুবিধাভোগীর কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে ব্যাংক। গত ডিসেম্বরে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মোবাইল ব্যাংকিং বিপ্লব, আছে ঝুঁকি ও প্রতারণা মোবাইল ফোন থাকলেই যে কেউ ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন আর টাকা লেনদেন করতে পারেন বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে। তাকে ব্যাংকের শাখায় যেতে হয় না। মোবাইল ফোনের কল রিচার্জ বা ‘ফ্লেক্সিলোড’ করেন যারা, তারাই এ্যাকাউন্ট খুলে দেন, ব্যাংকের হয়ে তারাই টাকা-পয়সা লেনদেন করেন। মোবাইল ফোন নম্বরটিই গ্রাহকের এ্যাকাউন্ট নম্বর। এই এ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই অন্য কোন মোবাইল ব্যাংক এ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন তিনি। নগদ টাকা তুলতে মাঝখানে থাকেন একজন এজেন্ট। তারা মূলত ছোট ব্যবসায়ী, যারা নিজের দোকান-ঘরেই লাইসেন্স নিয়ে থাকেন ব্যাংকের কাছ থেকে। অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিং মানুষের সময় বাঁচিয়ে দিয়েছে, কমিয়েছে ভোগান্তি। এ কারণেই এ পদ্ধতি এত দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে যারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করেন, তাদের বেশিরভাগেরই নিজেদের কোন এ্যাকাউন্ট নেই। তারা এজেন্টদের মাধ্যমেই টাকা লেনদেন করেন। এক হিসেবে দেখা গেছে ৬০/৭০ শতাংশ টাকা লেনদেন নিজস্ব এ্যাকাউন্ট ছাড়া। গড় হিসেবে দেখা যায়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু পাঁচ হাজার টাকার লেনদেনই বেশি। সাধারণত যারা অল্প আয়ের মানুষ এবং যারা ব্যাংকে গিয়ে এ্যাকাউন্ট খোলার মতো দক্ষ নন, তাদের একটি বড় অংশ এই ব্যাংকিং সেবার দিকে ঝুঁকছেন। তাছাড়া এই সেবায় যখন তখন টাকা পাঠানো এবং গ্রহণ করা যায়, যা এই সেবা জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেনে শতকরা দুই টাকা খরচ হয়। এতে দিনে পাঁচবারে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা লেনদেন করা যায়। তবে কেউ চাইলে একাধিক এজেন্ট বা এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরও অনেক বেশি টাকা লেনদেন করতে পারেন। নতুন নীতিমালায় এজেন্ট ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে আইন মানার নির্দেশনা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, গ্রাহকের এ্যাকাউন্টে টাকা জমা ও উত্তোলন ছাড়া অন্য কোন ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না এজেন্টরা। এজেন্টদের তৃতীয় পক্ষ হিসেবে টাকা পাঠানো বা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ এমএফএসের লাইসেন্স দেবে। গ্রাহকের স্বার্থহানিকর কোন কাজ বা গুরুতর অপরাধ করলে লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও হুন্ডি প্রতিরোধে প্রচলিত মানিলন্ডারিং আইন মেনে চলতে হবে এমএমএফগুলোকে। এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এ্যাকাউন্টে টাকা জমাতে পারবেন গ্রাহকরা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সব লেনদেনের তথ্য নেবে দুদক এখন থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সব লেনদেনের তথ্য নেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য ও সব লেনদেনের তথ্য দুদকের কর্মকর্তাকে নিয়মিত জানাবে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। দেশের সব মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও ই-ওয়ালেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সব এমএফএস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান এমএফএস এ্যাকাউন্টের সব ধরনের ক্যাশ ইন বা ক্যাশ আউটের ডিজিটাল মানি রিসিটের বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধান অথবা তদন্তের প্রয়োজনে দুদক সরবরাহ করবে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অংশীদার হতে পারবে না অপারেটর কোম্পানিগুলো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মুঠোফোনে আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য অংশীদার হতে পারছে না মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও)। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নীতিমালায় ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানকেও এ সেবা দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। ওই নীতিমালার পর কয়েকটি অপারেটর আর্থিক সেবা চালু করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপের মুখে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এরপর থেকেই তারা এ সেবার মালিকানায় অংশগ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমএফএস প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আসার সুযোগ পাচ্ছে না গ্রামীণফোন ও রবির মতো মোবাইল অপারেটররা। তবে এসব অপারেটরের নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করেই চলবে সেবাটি। এমএফএস প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে শতকরা ৫১ ভাগের মালিকানা থাকবে ব্যাংকের হাতে এবং সেবাটি ব্যাংকের নেতৃত্বেই চলবে। বাকি ৪৯ শতাংশ অংশের মালিকানায় আসতে পারবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাসহ অন্যরা।
×