ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার টিস্যু বক্সে বঙ্গবন্ধুর ছবি

প্রকাশিত: ১০:২৯, ৬ মার্চ ২০২০

  এবার টিস্যু বক্সে বঙ্গবন্ধুর ছবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখোশ পরা শত শত শিক্ষার্থীর অভ্যর্থনা গ্রহণ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার মধ্যেই এবার টিস্যু বক্সে বঙ্গবন্ধুর ছবি জুড়ে দিয়েছে শিক্ষা অধিদফতর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানের এমন কান্ডে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি সেই টিস্যু বক্স বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল এ্যান্ড কলেজে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। সকালে শিক্ষামন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির মুখোশ পরে শিক্ষামন্ত্রীকে স্বাগত জানান। মন্ত্রীর ঘটনার প্রতিবাদ না জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির মুখোশ পরা শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোকে গ্রহণ করে নেন। তবে এর পর থেকেই তীব্র সমালোচনার মধ্যে পড়েন মন্ত্রী। এরই মধ্যে গত ২ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ সভায় ডাঃ দীপু মনির ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনও সেই ঘটনা নিয়ে দলের মধ্যেও চলছে নানামুখী সমালোচনা। কিন্তু নেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির অতি উৎসাহী কর্মকর্তারা জাতির পিতার ছবি ছেপে দিয়েছে টিস্যু বক্সে। এই টিস্যু পেপারগুলো ব্যবহার করবেন শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সহ সকল পরিচালক, উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা। জানা গেছে, সাত-আটমাস আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর তাদের লোগো ব্যবহার করে এক হাজার টিস্যু বক্স তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেভাবেই এসএমএস টেকনলোজিস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু শিক্ষা অধিদফতরের অতি উৎসাহী কর্মকর্তারা টিস্যু বক্সে অধিদফতরের লোগোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ছবিও জুড়ে দেয়। সেই টিস্যু বক্সের দামও ধরা হয় অনেক বেশি। প্রতিটি টিস্যু বক্সের দাম ধরা হয়েছে ৫৬ টাকা। যা বাজারে পাইকারি দরে ত্রিশ টাকায় পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত এই এক হাজার প্রশ্নবিদ্ধ টিস্যু বক্স শিক্ষা ভবনের মূল ভবনের নিচ তলার স্টোর রুমে রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত টিস্যু বক্সেও খবর ছড়িয়ে পড়লে দুদিন ধরেই এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। তবে এবার দ্রুতই টিস্যু বক্স বাজেয়াপ্তের খবর জানিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি এ নিয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেছেন, মুজিববর্ষের লোগো অনাকাক্সিক্ষতভাবে যত্রতত্রভাবে প্রিন্ট করার একটি ঘটনা যা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে হয়েছে, তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে এই প্রিন্টের বক্সগুলো বাজেয়াপ্ত করেছি এবং এর পেছনে কে সেটি জানাতে বলেছি। তিনি আর বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করা হয়ে থাকলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। আমাদের সমাজ, প্রশাসন, রাজনীতিক পরিম-লের সবখানেই অবিবেচক আর অতিউৎসাহীর কোন কমতি নেই। পাশাপাশি অপরাজনৈতিক শক্তির দোসররা তো আছেই! এরা চাইবে যে কোনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, বিতর্ক সৃষ্টি করতে। এই চ্যালেঞ্জটি আমাদের আছেই। এই বিশাল প্রশাসনের কোথায় কে কোন্ বিতর্ক ঘটিয়ে ফেলেছে তা আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ কঠিন। তাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আর ব্যবস্থা নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। উপমন্ত্রী বলেন, সকলের অবগতির জন্য আমরা জানাচ্ছি ‘মুজিববর্ষের’ আনুষ্ঠানিকতা কার্যক্রম, ইত্যাদির দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য একটি জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি আছে। এর প্রধান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। এই কমিটি কর্তৃক নির্দেশিত কাজের বাইরে কিছু করতে চাইলে আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন দুস্থ, গৃহহীন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যানমূলক কিছু করতে, যেমন তাদের জন্য গৃহনির্মান। এতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় তার সাধারণ মানুষের জন্য যেই সমান অধিকারের দেশ তিনি রেখে যেতে চেয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নের পথে আমরা অনেক দুর এগুতে পারবো। সুতরাং অতিউৎসাহীরা সাবধান!’ এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে এ বিষয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের স্বাক্ষরিত বক্তব্যে দাবি করা হয়েছে, মাউশি মুজিববর্ষের লোগো সংবলিত কোন টিস্যু বক্স ক্রয় করেনি। মাউশির Procurement and Finance DBs থেকে টিস্যু বক্স কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু কারিগরি নির্দেশে টিস্যু বক্সে মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহারের কথা বলা হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গ্রহণ কমিটির বক্তব্য হচ্ছে, নিয়মানুযায়ী সরবরাহ করার আগে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গ্রহণ কমিটির সদস্যদের নমুনা প্রদর্শন করে। সেই নমুনায় শুধুমাত্র মাউশির লোগো ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে www.mujib.100.gov.bd ওয়েবসাইটে স্টেশনারিতে মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহারের কথা অনুযায়ী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঐ লোগো সংবলিত কিছু টিস্যু বক্স মাউশি স্টোরে রেখে যায়। এ টিস্যু বক্সগুলো সংশ্লিষ্ট কমিটি গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে এখনও কোন মিটিং হয়নি। যে কোন সরবরাহকৃত পণ্য গ্রহণের পূর্বে এ কমিটি সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এ টিস্যু বক্সগুলো স্টোর রুমে ছিল বলে চাহিদা অনুযায়ী স্টোরকীপার কয়েকটি টিস্যু বক্স সরবরাহ করে। বিষয়টি নজরে আসা মাত্র কর্তৃপক্ষ টিস্যু বক্সগুলো প্রত্যাহার করে নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। টিস্যু বক্সে এ লোগো ব্যবহার সমীচীন না হওয়ায় ইতোমধ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে এ লোগো ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
×