ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে

করোনার উপসর্গ নিয়ে মংলা বন্দরে জাহাজে কয়েক যাত্রী

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৬ মার্চ ২০২০

 করোনার উপসর্গ নিয়ে মংলা বন্দরে জাহাজে কয়েক যাত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে সন্দেহজনক করোনাভাইরাস রোগীর নমুনা বেড়ে ১০৫টিতে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষায় তাদের কারো শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন তিন জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আর মংলাবন্দরে একটি জাহাজে কয়েকজন যাত্রী আছেন, তাদের তিনজনের মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ইতোমধ্যে তাদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য দেন। এ সময় আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। ওই জাহাজটির বিষয়ে অধ্যাপক ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, জাহাজটি এখনও বন্দরে এসে পৌঁছায়নি। বন্দর থেকে দূরে, গভীর সমুদ্রে রাখা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে পুরো তথ্য জানাতে পারব। একইসঙ্গে নাম উল্লেখ না করে গণমাধ্যমে আসা চীনা রাষ্ট্রদূূতের কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে দেখেছি, চীন থেকে আসা যাত্রীদেরই কেবল স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। কিন্তু সেটা সঠিক নয়। আর এ তথ্য বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। হয়তো চীনা রাষ্ট্রদূতের কাছে ভুল তথ্য যেতে পারে। তিনি ভুলবশত বলতে পারেন। আমরা সেটা জানি না, তবে আমরা আমাদের দিক থেকে সঠিক তথ্য জানাবো। ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, গত ২১ জানুয়ারি থেকে প্রথমে চীন থেকে আসা বিমানগুলোকে স্ক্রিনিং করা হচ্ছিল। যদিও সেখানে কেবলমাত্র চীনা নাগরিকরাই ছিলেন না। শুধু চীনা নাগরিক নন, চীন থেকে আসা প্রত্যেকেই স্ক্রিনিং করা হয়েছে। পরবর্তীতে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে যখন লোকাল ট্রান্সমিশন পাওয়া গেল তখন সব বন্দর অর্থাৎ স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দরসহ সব যানবাহনের যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখের বেশি যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতার জন্যও কাজ করা হচ্ছে। কেবল দুটি আচরণগত চর্চাতেই করোনাভাইরাসের মতো মারাত্মক রোগকে প্রতিরোধ করতে পারে। সেগুলো হলো- কাশি শিষ্টাচার এবং সাবান পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধোঁয়া। সংবাদ সম্মেলনে ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্ত দেশের সংখ্যা চীনসহ ৭৭। নতুন করে বুধবার আরও পাঁচটি দেশ যোগ হয়েছে। বিশ্বে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৩ হাজার ৯০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় যোগ হয়েছেন দুই হাজার ২২৩ জন। মারা গেছেন ৩ হাজার ১৯৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮৬ জন। চীনে মোট রোগীর সংখ্যা ৮০ হাজার ৪২২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২০ জন। মারা গেছেন ২ হাজার ৯৮৪ জন। চীনের বাইরে ৭৬টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৬৮৬ জন, যাদের মধ্যে ২ হাজার ১০৩ জন গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন। চীনের বর্তমান পরিস্থিতি উন্নতি দিকে জানিয়ে ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চীনের বাইরে প্রতিদিন নতুন দেশ ও রোগীর সংখ্যা শনাক্ত হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত হটস্পট হিসেবে চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইতালি এবং জাপানের প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনের বাইরে সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াতে। আজ সকাল পর্যন্ত সেখানে রোগী ছিল পাঁচ হাজার ৭৬৬ জন। অধ্যাপক ডাঃ ফ্লোরা আরও বলেন, ইতালিতে এক বাংলাদেশী আক্রান্ত হয়েছেন, তার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইতালিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। তিনি এখনও হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। সিঙ্গাপুরের পাঁচ রোগীর মধ্যে তিনজন বাড়ি ফিরেছেন। একজন স্থিতিশীল অবস্থাতেই আছেন, যে কোন দিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন। আর আইসিইউতে ছিলেন তিনি এখনও সেখানেই আছেন। তিন নাবিক গভীর পর্যবেক্ষণে নিজস্ব সংবাদদাতা মংলা থেকে জানান, করানোভাইরাসে আক্রান্তের সন্দেহে মংলাবন্দরে অবস্থানরত একটি বিদেশী জাহাজের তিন নাবিককে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এ তিন নাবিকের ওপর শারীরিক অবস্থার নজরদারি করছেন পোর্ট হেলথের স্বাস্থ্য কর্মীরা। মার্সেল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী এমভি সেরিনোটাজ এন নামক এ জাহাজটি ২৪ হাজার টন কয়লা নিয়ে বুধবার রাতে মংলাবন্দরের পশুর চ্যানেলের হারবাড়িয়ায় নোঙ্গর করে। এ সময় স্বাস্থ্য কর্মীরা নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গেলে ফিলিপিন্সের তিন নাবিককে গুরুতর অসুস্থ দেখতে পায়। জাহাজ জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ আতঙ্ক রূপ নেয় মৃত্যুর ‘গুজবে’।
×