ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিন নির্দেশনা

করোনা রোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট

প্রকাশিত: ১০:১৬, ৬ মার্চ ২০২০

 করোনা রোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চীনের উহান থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা জানানোর আদেশসহ তিনটি নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট । নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশ থেকে যারা দেশের স্থল, নৌ, ও বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে তাদের কি ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়া। একই সঙ্গে সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারী হাসপাতালগুলোতেও করোনাভাইরাসের জন্য প্রাক প্রস্তুতিমূলক সকল ধরনের ব্যবস্থা (পৃথক কেবিনসহ চিকিৎসকের সরঞ্জাম) নেয়া, প্রত্যেকটি হাসপাতালে বা বন্দর যেখানে শনাক্তের জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজন হবে সেখানকার সরঞ্জামগুলো দেশে পর্যাপ্ত রয়েছে কি না, যদি না থাকে জরুরী ভিত্তিতে আমদানি করার জন্য সরকারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কি না। এ প্রতিবেদন ৯ মার্চের মধ্যে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সম্বন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছে। এদিকে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর বধ্যভূমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নেয়ায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আইনী নোটিস পাঠানো হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা ৯ মার্চ সোমবারের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর তিনটি মৌখিক নির্দেশনা দেয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। পরে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে এ মর্মে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। পরে আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে তিনটি মৌখিক নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনাগুলো হলো- প্রথমত: স্থলবন্দর, নৌবন্দর, বিমানবন্দর, বিশেষ করে বিমান বন্দরে যখন বিদেশীরা বাংলাদেশে আসছেন, তখন দেশের ভেতরে ঢোকার আগে তাদের কি ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে, যারা পরীক্ষা করছেন তারা প্রশিক্ষিত কি না এবং যে যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেগুলোর সক্ষমতা রয়েছে কি না তা জানাতে হবে। দ্বিতীয়ত: সারাদেশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসের জন্য পৃথক কেবিনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলো এখন পর্যন্ত প্রাক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। আদালত নির্দেশনা দিয়েছে, সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি সকল বেসরকারী হাসপাতালগুলোতেও করোনাভাইরাসের জন্য প্রাক প্রস্তুতিমূলক সকল ধরনের ব্যবস্থা (পৃথক কেবিনসহ চিকিৎসকের সরঞ্জাম) নিতে হবে। তৃতীয়ত: প্রত্যেকটি হাসপাতালে বা বন্দরগুলোতে যেখানে শনাক্তের জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজন হবে সেখানকার সরঞ্জামগুলো দেশে পর্যাপ্ত রয়েছে কি না, যদি না থাকে জরুরী ভিত্তিতে আমদানি করার জন্য সরকারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কি না। ৯ মার্চের মধ্যে এ বিষয়ে আদালতকে জানাতে হবে। এ বিষয়ে কেউ যেন ভীতি সঞ্চার না করে সে বিষয়ে সচেতনতার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছে আদালত। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ দুইজনকে আইনী নোটিস সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর বধ্যভূমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নেওয়ায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আইনী নোটিস পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ নোটিস পাঠিয়েছেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আপীল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে পাহাড়তলি বদ্ধভূমির জন্য জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর বধ্যভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে ২০১৪ সালে রায় দেন আপীল বিভাগ। মামলার বিবরণে জানা যায়, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য প্রজন্ম-৭১’র এক আবেদনে ১৯৯৮ সালে ওই বধ্যভূমি সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। এরপর ১ দশমিক ৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় এবং প্রাথমিকভাবে ৯৪ লাখ টাকাও বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ২০০৫ সালে তৎকালীন সরকার (বিএনপি-জামায়াত) ওই প্রকল্প বাতিল করে টাকা ফেরতের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ড. গাজী সালেহ উদ্দিন, ড. মুনতাসীর মামুন, মিলি রহমানসহ ৮ বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে একটি রিট করেন। ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে তা নিষ্পত্তি করে দেয়। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল আবেদন করে রিটকারীরা। হাইকোর্টের ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে আপীল বিভাগ আপীল মঞ্জুর করে রায় দেয়।
×