ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৬ মার্চ ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মুজিব নামটি মুছে ফেলার কত যে ষড়যন্ত্র হয়েছে! সবই ব্যর্থ করে দিয়েছে বাঙালী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশ। মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিবকে আজ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে জাতি। শ্রদ্ধা ভালবাসা জানাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে সামনে আরও বড় উপলক্ষ। আগামী ১৭ মার্চ অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এদিন থেকে শুরু হচ্ছে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। এ সময়ের মধ্যে শহর ঢাকায় নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠান ক্রমে নিজেদের কর্মসূচী ঘোষণা করছে। কাজ শুরু করেছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দফতর ও অধিদফতর। তবে আপাতত দৃষ্টি ১৭ মার্চের দিকে। এদিন খুব ভোরে সেনাবাহিনীর ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিন শুরু করা হবে। সরকারী, বেসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এদিনের মূল অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হবে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে। এতে উপস্থিত থাকবেন প্রায় ২ লাখ মানুষ। বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে মুজিবর্ষের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হবে। বছরব্যাপী উদ্যাপনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও এ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সব ঠিক থাকলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বিষয়ে বক্তৃতাও করবেন তিনি। আলোচনা ছাড়াও এদিন বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বর্তমানে প্যারেড স্কয়ার সেভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া। বেসরকারী উদ্যোগেও এদিন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ফলে এদিন শহর ঢাকার ছবিটা বদলে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। জাতির জনকের জন্মদিনে উৎসবমুখর হয়ে ওঠবে গোটা রাজধানী। আপাতত অপেক্ষা। অন্য প্রসঙ্গ। জরুরী প্রসঙ্গও বলা যায়। যত দিন যাচ্ছে ততই ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাথমিক ঠিকানা চীনে হলেও, খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি ঠিকানা বদল করছে। চীনের পরপরই আক্রান্ত হয় দক্ষিণ কোরিয়া। ইরান। এভাবে একটির পর একটি দেশ আক্রন্ত হচ্ছে। একটি সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্বের মোট ৭৭ দেশে ভয়ঙ্কর এ ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। বর্তমানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৩ হাজার ৯০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় যোগ হয়েছে ২ হাজার ২২৩ জন। মোট মারা গেছেন ৩ হাজার ১৯৮ জন। আর শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮৬ জন। চীনের বাইরে ৭৬টি দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৬৮৬ জন। এদের মধ্যে ২ হাজার ১০৩ জন গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ঝুঁকি কতটা? হ্যাঁ, ঘুরে ফিরেই সামনে আসছে এ প্রশ্ন। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগেই কাবু হয়ে গিয়েছিল ঢাকা। করোনার মতো কিছু হানা দিলে কী ঘটবে? ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী কতটা প্রস্তুত? সুস্পষ্ট কোন জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, আশঙ্কার দিক থেকে উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, মংলাবন্দরে একটি জাহাজের তিনজন যাত্রীর মধ্যে করোনার লক্ষণ-উপসর্গ রয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে জাহাজটি গভীর সমুদ্রে রাখা হয়েছে। পুরো বিষয়টি ইনভেস্টিগেশন করে তথ্য জানাতে পারবেন বলে জানান তিনি। এ অবস্থায় নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আতঙ্কিত না হয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার কথা বলছেন। সাধারণ মানুষও খোঁজ খবর রাখছেন বলে মনে হয়। এখন অনেকেই মাস্ক পরে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। কাজের ফাঁকে হাত মুখ ধুয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হবে তো? যেন হয়। শত দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ অন্তত করোনা থেকে রক্ষা পাক। মুক্ত থাকুক। আমাদের সকলের আজ এই একমাত্র চাওয়া।
×