ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ৬ মার্চ ২০২০

 কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেকের বৈঠকে ৯টি জনগুরুত্বসম্পন্ন প্রকল্প অনুমোদন নেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম সারাদেশের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন। এর আওতায় দেশের সব সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যা এবং জেলা হাসপাতালে ১০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। এটি জনস্বাস্থ্যবান্ধব সরকারের একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে। কেননা, কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এও সত্য যে, দেশের কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন প্রধানত ভেজাল খাদ্য ও পানীয়ের কারণে। এর পাশাপাশি কিডনি প্রতিস্থাপনসহ মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য প্রণীত আইনটি আরও নমনীয় করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বিশিষ্ট চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, সার্জন ও কিডনি বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের মৃত্যুর পর একমাত্র মস্তিষ্ক ব্যতিরেকে চোখ, কিডনি, লিভার ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করা যায়। এর মাধ্যমে অর্থাৎ, ক্ষেত্রবিশেষে এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নতুন জীবনদান করা সম্ভব সহজেই। উন্নত দেশের মতো বর্তমানে বাংলাদেশেও চোখের কর্নিয়া, কিডনি, লিভার ইত্যাদি প্রতিস্থাপন হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার ব্যয়ও তুলনামূলকভাবে অনেক কম বিদেশের তুলনায়। তবে দেশে সেই অনুপাতে প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায় না বললেই চলে। কেননা, প্রথমত এ ক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলন তেমন জোরালো নয়। এর পাশাপাশি নানা সংস্কারও রয়েছে। সর্বোপরি রয়েছে নানা আইনী প্রতিবন্ধকতা। কিডনি, লিভার ইত্যাদির ক্ষেত্রে তা জটিল ও ঝামেলার। সরাসরি রোগীর নিকটাত্মীয় ও স্বজন ছাড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেয়া যায় না। নিকট অতীতে এ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বেআইনী ও নীতিনৈতিকতাহীন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় তা রয়েছে প্রায় নিষেধাজ্ঞার পর্যায়ে। অপেক্ষাকৃত সহজ হলেও চক্ষুদানও যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, এমন কথা বলা যাবে না। তবে আইনের চেয়েও বেশি প্রয়োজন সর্বস্তরে জনসচেতনতা এবং সামাজিক আন্দোলন। মানুষকে বুঝতে হবে যে, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হলেও সুস্থ ও নীরোগ দেহে বেঁচে থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এর জন্য প্রয়োজন নিরন্তর গবেষণা ও অনুসন্ধান। গত কয়েক বছরে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং ওষুধ শিল্পের প্রভুত উন্নতি সাধন হয়েছে। এর ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে অনেক, এমনকি বাংলাদেশেও। এও সত্য যে, নিত্যনতুন রোগ-ব্যাধি ও জটিলতা দেখা দিচ্ছে, যেমন করোনা ভাইরাস, যা সময় সময় রীতিমতো হুমকি হয়ে দাঁড়ায় মানুষের জন্য। এক সময় ক্যান্সার, এইচআইভি এইডস ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধি হিসেবে পরিগণিত হতো। বর্তমানে অনেক ভাল ওষুধ আবিষ্কৃত হওয়ায় তা অনেকটাই আয়ত্তের মধ্যে। এর পরও কিছু ক্ষেত্রে তা আজও অনিরাময়যোগ্য। পারকিনসন্স, আলঝেইমার অদ্যাবধি নিরাময়যোগ্য নয়। বার্ধক্য বা বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধও মানুষের আকাক্সিক্ষত। এর বাইরেও লিভার, কিডনি, হার্ট প্রতিস্থাপনও যে খুব সহজসাধ্য ও সহজলভ্য তা নয়। সে জন্য মরণোত্তর দেহ, চোখ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সুস্থ দেহ সুস্থ মনে বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যক নিরন্তর গবেষণা। ইতালির এক বিশ্বখ্যাত শল্য চিকিৎসক প্রফেসর সের্গিও কানাভারো একটা পূর্ণাঙ্গ মানুষের মস্তক প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। অনেক উন্নত দেশে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর যন্ত্রণা লাঘবে ইউথেনাসিয়া বা স্বেচ্ছা মৃত্যুবরণের আইন রয়েছে। মানুষের মঙ্গল তথা কল্যাণার্থেই তা অত্যাবশ্যক।
×