ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ৬ মার্চ ২০২০

প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে

দেশের প্রথম ট্রাফিক বিরতিহীন সড়ক এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ১২ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এই সড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ লেনবিশিষ্ট এই সড়কটি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ককে সংযুক্ত করেছে। সড়কটি চালুর মাধ্যমে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত মহাসড়ক তথা এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার্স কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি চালু তথা সচল হলে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ, যাতায়াত যে অত্যন্ত সুগম, যানজটমুক্ত, সময় ও ব্যয়সাশ্রয়ী হবে তাতে দ্বিমতের অবকাশ নেই। বাংলাদেশের বর্তমান অভাবনীয় ও ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মূলে যে সড়ক যোগাযোগ অন্যতম প্রধান নিয়ামক সে বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা চলে না। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে তখন সড়ক যোগাযোগ বলতে প্রায় কিছুই ছিল না। এমনকি ছোট-বড় ব্রিজ কালভার্ট- সেতুগুলোও ছিল যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত, ভাঙ্গাচোরা ও বিপদসঙ্কুল। অথচ বর্তমানে সারাদেশের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে সুপ্রশস্ত, সুন্দর ও মসৃণ সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। সময় সময় অতিবর্ষণ ও বন্যায় সড়কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেসব সাময়িক দুর্ভোগের সৃষ্টি করে। সওজের উদ্যোগ ও স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় সেসব মেরামতও করা হয়। অধুনা ব্যস্ত মহাসড়কগুলো চার লেন ও আট লেনে উন্নীত করা হচ্ছেÑ সড়ক যোগাযোগ আরও দ্রুত, ব্যয়সাশ্রয়ী সর্বোপরি সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু অবহেলিত উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ প্রশস্ত করেছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নও বর্তমানে দৃশ্যমান অনেকটাই। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতু সচল হলে দক্ষিণ বাংলার সঙ্গে সড়ক ও রেলযোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অফুরান সম্ভাবনাসহ জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যা যোগ করবে বাড়তি মাত্রা। এর বাইরেও নির্মিত হচ্ছে রাজধানীতে মেট্রোরেল, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি। তবু স্বীকার করতে হবে যে, দেশে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অত্যন্ত বেশি। সে কারণে অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত সড়ক দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক। এই প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক জাতিসংঘ। বিশ্বব্যাংক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখতে পেয়েছে, বাংলাদেশে অধিকাংশ সড়কের অবকাঠামো আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত নয়, বরং ঝুঁকিপূর্ণ। সড়ক-মহাসড়কে সিগন্যালিং ব্যবস্থাও ত্রুটিপূর্ণ। তদুপরি মানুষসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের উপযোগী বিভিন্ন লেন নেই। নেই প্রয়োজনীয় গতিরোধক। এসব ত্রুটিবিচ্যুতি দূরীকরণসহ সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী দশকে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ করতে হবে ৭৮০ কোটি ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় ৬৬ হাজার তিন শ’ কোটি টাকা। অবশ্য এতে বিশ্বব্যাংক কত অর্থ দেবে অথবা কিভাবে সহায়তা করবে তা সুস্পষ্ট হয়নি এখনও। তবে যানজটে অচল রাজধানীকে সচল করতে এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশকে সাহায্য সহযোগিতা করতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক। এটি নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক খবর। সড়ক-মহাসড়কে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান, নসিমন, করিমন, লেগুনা চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এসব ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে বিশ্বব্যাংক-জাতিসংঘ। এর পাশাপাশি ২০১৮-এর ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইনটি যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর করা বাঞ্ছনীয়।
×