ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিবাসীদের জন্য দুয়ার বন্ধ করছে মেক্সিকো

প্রকাশিত: ১২:১৯, ৪ মার্চ ২০২০

অভিবাসীদের জন্য দুয়ার বন্ধ করছে মেক্সিকো

মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি দেশটির দক্ষিণে একটি সীমান্ত প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। মেক্সিকোর সঙ্গে গুয়েতেমালার মধ্যবর্তী সুচিয়াট নদী বিস্তৃত একটি ব্রিজ পেরিয়ে হাজার হাজার মধ্য আমেরিকান অভিবাসী তাদের গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করলে মেক্সিকান কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয়। হন্ডুরাস অভিবাসীরা সেতুর কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দেশের পতাকাটি উত্তোলন করে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শুরু করে। এপি। পরিস্থিতি দেখে গুয়েতেমালার কর্তৃপক্ষ অনুমান করেছিল যে ব্রিজের ওপরে দুই হাজার ৫০০ অভিবাসী থাকতে পারে অথবা সবাইকে খুশি করার জন্য এ রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। মেক্সিকান ন্যাশনাল গার্ডসম্যানরা একটি ধাতব বেড়ার নিচে লিখে রেখেছে ‘স্বাগতম মেক্সিকো’ অভিবাসীদের পথ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে লোকজন বিক্ষোভের সঙ্গে জ্বলে উঠতে থাকে। ধীরে ধীরে অভিবাসীরা একটি লাউড স্পীকারের সাহায্যে সেখান থেকে সরে না যাওয়ার জন্য সবাইকে সতর্ক করে। এরপর মেক্সিকান কর্মকর্তারা ২০ জনের দলে কয়েকজন অভিবাসীকে প্রবেশ করতে দেয়। দিন শেষ হয়ে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৫০ জনেরও বেশি অভিবাসী আশ্রয় বা মেক্সিকোতে থাকার অনুমতির কিছু অন্যান্য আবেদন করতে প্রবেশ করেছিলেন। কারণ, অনেক অভিবাসী মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে বেশি পছন্দ করেন। মেক্সিকোর জাতীয় অভিবাসন ইনস্টিটিউট টুইটারে জানিয়েছিল যে, তারা নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে একাধিক পয়েন্ট জোরদার করেছে। টুইটারে আরও জানানো হয়েছে, অঞ্চলটি পর্যবেক্ষণ করতে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের সময়ই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি নির্বাচিত হলে দেয়াল নির্মাণ করবেন মেক্সিকো সীমান্তে। ট্রাম্প চেয়েছিলেন এই দেয়াল হবে ‘দুর্ভেদ্য, দৃশ্যমান, উঁচু, শক্তিশালী, সুন্দর, দক্ষিণ সীমান্তপ্রাচীর’। যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যকার এ সীমান্ত প্রায় ১ হাজার ৯০০ মাইল। যার মধ্যে অনেক এলাকা খালি, ধুলাময় মরুভূমি, ঘন সবুজ ঝোপঝাড়, রিও গ্রেনেড নদীকে ঘিরে উঁচুনিচু পথ। তবে দীর্ঘ এই সীমান্তের মধ্যে এখন প্রায় ৬৫০ মাইল জায়গায় ছাড়া ছাড়া অবস্থায় বেড়া দেয়া আছে। কোথাও কোথাও আবার কংক্রিটের সø্যাব ও অন্যান্য অবকাঠামো দিয়ে ঘেরা। ট্রাম্প বলেছেন, এক হাজার মাইলজুড়ে হবে এ দেয়াল। আর বাকিটা প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে নিরাপদ থাকবে। সারা বিশ্বে ‘শরণার্থী সমস্যা’র মানচিত্রের শিরোনামে এখন রিয়ো গ্রান্ডে নদীর ও পারের সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষারত হাজার হাজার হিস্পানিকদের মিছিল। যুক্তরাষ্ট্র উত্তাল ও দ্বিখণ্ডিত অভিবাসী সমস্যা নিয়ে। আশ্রয়কারীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ‘অল অট্রো লাডো’, সীমান্ত-অধিকার সংক্রান্ত প্রকল্প। অন্যদিকে রিপাবলিকান ‘হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভস’ পাঁচ বিলিয়ন ডলার প্রস্তাব অনুমোদন করল, পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২ হাজার মাইলজুড়ে সীমান্ত-প্রাচীর গড়ে তোলার জন্য। ‘উই দ্য পিপল্ উইল ফান্ড দ্য ওয়াল’ প্রচারের ১৬ হাজার সমর্থক, এক বিলিয়ন ডলার তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে, এ যাবত এক মিলিয়ন ডলার তুলে ফেলেছে সীমান্ত-প্রাচীরের সপক্ষে। আইন অনুযায়ী, যাঁরা নিজ দেশে হিংসাত্মক ঘটনা বা ঘরোয়া অত্যাচারের শিকার, তাঁরা অন্যদেশে আশ্রয়প্রার্থনা করতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় অভিবাসী আইন ও প্রশাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি এক খাতে বইছে না। মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেক্সিকোর নেগ্রাস শহর। সেই শহর থেকে নেমে আসছে অগুনিত শরণার্থীর ঢল। কুখ্যাত ‘কায়োটে’ বা বিশেষ ধরনের ‘নেকড়ে’ বলা হয় তাদের, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, ‘রিয়ো গ্রান্ডে’ নদী এপার ওপার করে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে হিস্পানিক উদ্বাস্তুদের। মনে রাখতে হবে যে, মধ্য আমেরিকা থেকে শরণার্থীর স্রোত নেমে আসার কারণ শুধু উচ্চাভিলাষ নয়, দারিদ্র্যের সঙ্গে রয়েছে সেখানে ড্রাগ কার্টেল, মানব পাচারসহ নানা ‘ত্রাস’। মানবাধিকারের প্রশ্ন রয়েছে সেখানে। এই ঘটনাকে অবলম্বন করে সুযোগসন্ধানের জালও কম বিস্তৃত নয়। দক্ষিণ আমেরিকার অপরাধ জগতের মাফিয়ারা যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে তুলছে তাদের আশ্রয়ের ঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়াল তোলার স্বপক্ষে এটাই অনেক বড় যুক্তি। অন্যদিকে, মৃত্যু তাচ্ছিল্য করে একমাত্র সীমান্তপারের স্বপ্ন চোখে নিয়ে মাইগ্রেন্ট ক্যারাভানের যাত্রা শুরু হয় গুয়াতেমালা থেকে। তারপর সেই ক্যারাভান স্যান ডিয়াগো, টেক্সাস সীমান্তে। অনুপ্রবেশ নিয়ে শুরু হয় দুপক্ষের নানা রকমের কৌশল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৪৯ হাজারেরও বেশি শিশু সীমান্ত পার হয়ে এসেছিল, যাদের ত্রাণ শিবিরে ৬৯ দিন রেখে ফিরতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে ১৪ হাজার শিশু সীমান্তের ১৩৭টি সরকারী ত্রাণ শিবিরে আটক হয়ে আছে। শিবিরগুলোর ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য-সচেতনতা নিয়েও হাজারো প্রশ্ন। ন্যূনতম শীত নিবারণের কম্বলের ঘাটতিও রয়েছে সেখানে। এসিএলইউ বর্ডার রাইট সেন্টার-এর অধিকর্তা সিন্থিয়া পোম্পার মতানুযায়ী, সীমান্তে আটকে থাকার দরুনই অভিবাসীদের মৃত্যুসংখ্যা আরও বাড়ছে। টেক্সাসের টর্নিলোতে অনুপ্রবেশে অনুমোদনের বদলে শরণার্থী তাঁবু টাঙানোর কাজই চলছে বেশি। যেখানে ৪০০ বিছানার ব্যবস্থা, সেখানে ২ হাজার ৭০০ শিশু রয়েছে। ‘ইউএস হেল্থ এ্যান্ড হিউমেন সার্ভিসেস’-এর মার্ক ওয়েবার মনে করেন, এই শিবির হয়ত বন্ধ করতেই হবে। অভিবাসীদের আবেদনের মূল পদ্ধতি হলোÑ সিবিপি (কাস্টমস এ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন) প্রতিনিধিরা আশ্রয়ের জন্য আবেদনকারীদের ইউএস সিটিজেনশিপ এবং ইমিগ্রেশন সারভিসেসের বিশেষ প্রতিনিধির কাছে তুলে দেবেন, যাঁরা স্থির করবেন যে কেসটির আদৌ কোন যৌক্তিকতা আছে কি-না। মধ্য আমেরিকা থেকে এল চেপারাল পর্যন্ত হেঁটে এসে গণহারে আশ্রয় দাবি করলেও তা নাকচ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
×