ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ট্রাম্পের ভারত সফর ॥ কার প্রাপ্তি কতটুকু

প্রকাশিত: ১২:১৮, ৪ মার্চ ২০২০

ট্রাম্পের ভারত সফর ॥ কার প্রাপ্তি কতটুকু

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে এসে ৩৬ ঘণ্টার সফর শেষ করে চলে গেছেন। তিনি আশা করেছিলেন এক কোটি লোক তাকে স্বাগত জানাবে। তা অবশ্য হয়নি। কিন্তু বাকি আর সব কিছুই পরিকল্পনামতোই হয়েছে। এই সফর তাঁর ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’জনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বহুল আলোচিত বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে দু’দেশ মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারলেও ট্রাম্প মার্কিন জনগণকে দেখাতে পেরেছেন যে তিনি বিদেশে বিপুল জনপ্রিয় এবং চুক্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে তিনি এক তুখোর আলোচক। অন্যদিকে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল ও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী যে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে তাতে মোদির ভাবমূর্তি বেশ ম্লান হয়ে গিয়েছিল। ট্রাম্পের সফর এবং মোদির উদ্দেশে ট্রাম্পের প্রশস্তিবর্ষণ মোদিকে আবার পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছে যেটা তার জন্য বড়ই প্রয়োজন ছিল। ট্রাম্পের প্রশস্তি ও অন্যান্য উক্তি মোদিকে নেতিবাচক সংবাদ শিরোনাম কাটাতে সাহায্য করবে। প্রত্যাশিত এক কোটি লোক ট্রাম্পকে স্বাগ জানাতে আসেনি বটে তবে আহমেদবাদ বিমানবন্দর থেকে গুজরাটের মোতেরা ক্রিটে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ট্রাম্পের যাত্রাপথে বিপুল জনসমাগম হয়েছিল। স্টেডিয়ামে অর্থাৎ যেখানে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি ছিল। এগুলো ট্রাম্পের স্বদেশে নির্বাচনী প্রচারের কাজে লাগবে। ‘নমস্তে ট্রাম্প’ ভিডিও ইতোমধ্যে-প্রচারণায় ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে কলকাতাসহ কয়েকটি শহরে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভও হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে ভিসা সমস্যাসহ রফতানি সমস্যা কোনটির সমাধানের কোন আশ্বাস ট্রাম্প দিয়ে যাননি। অবশ্য ৩শ’ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তির বদৌলতে ভারত এ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পাবে। এই চুক্তি নিঃসন্দেহে পাকিস্তান ও চীনের বিরোধী। ট্রাম্প মোদির প্রশাংসা করেছেন, ভারতকে ধর্মীয় সম্প্রীতির মহান দেশ আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু মোদি সরকারের মুসলাম বিদ্বেষীয় কর্মকা- সম্পর্কে টু করেননি। দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়েও কোন মন্তব্য করেননি। বলেছেন নাগরিকত্ব আইন ভারতের ব্যাপারে। সবাই এটাকে মোদির জয় হিসেবে দেখেছে। কিন্তু সত্যিই কি মোদির জয় হয়েছে সেটাই প্রশ্ন। ট্রাম্পের সফরে বাণিজ্য চুক্তি হয়নি। বাণিজ্য চুক্তি যে হবে না তা আগেভাগেই বোঝা গিয়েছিল। তবে চুক্তি সম্পাদনের পথ খোলা কবে হবে সেটাই এখন প্রতীক্ষার বাপার। বলা বাহুল্য দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আমেরিকার অনুকূলে নয়। দু’দেশের বাণিজ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস ও আস্থার অভাব রয়েছে। সুস্পষ্ট মতানৈক্য ও রয়েছে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যে শুল্ক সুবিধা পেত তা আগেই বাতিল করে দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। ভারত চায় যুক্তরাষ্ট্র তার আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যকে মার্কিন বাজারে ঢুকতে দিক। এসব নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে ও চলবে। পরিণতিতে কি দাঁড়াবে, শেষ পর্যন্ত বাণিজ্য চুক্তি হবে কি হবে না তার ভিত্তিতে বলা যাবে কে কাকে কতটুকু ছাড় দিল। লাভের পাল্লা কোন্ দিকে ভারি হলো। মনে রাখতে হবে ট্রাম্প ধুরন্ধর ব্যবসায়ী। কোথায় লাভ, কোথায় লোকসান তা তার ভালমতোই জানা। তবে ভারত যেন কোনভাবেই রুষ্ট না হয় সেদিকে ট্রাম্পের সযতœ দৃষ্টি ছিল। তাই অভ্যন্তরীণ সমস্যাবলী নিয়ে তাঁকে একেবারেই মুখ খুলতে দেখা যায়নি। কারণ ট্রাম্প জানেন বৈশ্বিক রাজনীতিতে আমেরিকার ভারতকে প্রয়োজন। ভারতেরও তাই। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব খর্ব করতে আমেরিকা যে ভারতকে কাজে লাগাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তেমনি দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব খর্ব করতে ভারত আমেরিকাকে পাশে চায়। এই বিষয়গুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় স্থান পাওয়াটাই স্বাভাবিক। স্ট্র্যাটেজিক ও নিরাপত্তার কারণে মোদির ট্রাম্পকে তাঁর পাশে রাখা প্রয়োজন। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে যে বিপুল ও উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। তা থেকেই বোঝা যায় তিনি এই সম্পর্কের ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস। ট্রাম্প-মোদির উষ্ণ সম্পর্ক এই সফরকালে পরিপূর্ণরূপে প্রকাশ পেয়েছে। ভারতের পক্ষে এমন এক নেতার সঙ্গে বোঝাপড়া করা সহজতর হবে যার পেছনে ইতোমধ্যে দেশটি যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছে। ভারত আশা করছে যে ট্রাম্পের অনিশ্চিত চরিত্র দু’দেশের সম্পকের কোন ক্ষতি করবে না। সেটা কতদূর সত্যি হয় ভবিষ্যতই বলে দেবে। সূত্র : দি উইক ও অন্যান্য
×