ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর-রুনী হত্যার তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে আজ শুনানি

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ৪ মার্চ ২০২০

সাগর-রুনী হত্যার তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে আজ শুনানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ বুধবার সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকা-ের আলোচিত ঘটনায় উচ্চ আদালতে র‌্যাবের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার আদালতকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী র‌্যাবের দেয়া অগ্রগতি প্রতিবেদনের বিষয়টি অবহিত করেন। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাবের তরফ থেকে দেয়া অগ্রগতি প্রতিবেদনে হত্যাকা-ের সঙ্গে দু’জন অপরিচিত ব্যক্তির সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে বলে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সেই অপরিচিত দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব। যদিও র‌্যাবের তরফ থেকে সেই দুই ব্যক্তি কে বা কারা সে সর্ম্পকে কিছুই জানানো হয়নি। আজ বুধবার আলোচিত এই হত্যা মামলার শুনানি ঘিরে ইতোমধ্যেই ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিকে নতুন করে সাগর-রুনী হত্যাকা-ের মামলাটি আলোচনায় আসায় দেশ-বিদেশের মিডিয়া, নিহতদের পরিবার পরিজন ছাড়াও সাধারণ মানুষের নজরও স্বাভাবিক কারণেই আদালতের দিকে। এর আগে সোমবার র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার শফিকুল আলম এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেন। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দিনগত রাতের কোন এক সময় রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানাধীন পশ্চিম রাজাবাজারের শাহজালাল প্রপার্টিজের নির্মিত রশিদ লজের ৫৮/এ/২ নম্বর ৬ তলা বাড়ির চতুর্থ তলার এ-৪ নম্বর ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন বেসরকারী মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সরোয়ার হোসেন সাগর ও তার স্ত্রী বেসরকারী টেলিভিশন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনী। ২০১২ সালের ১৯ মে হাইকোর্ট এক আদেশে মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। ২০১২ সালের ২৬ মে ভিসেরা আলামতের জন্য সাগর-রুনীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। ভিসেরা প্রতিবেদনে তাদের দেহে কোন বিষক্রিয়ার আলামত পাওয়া যায়নি। পরে উন্নত তদন্তের জন্য ২০১২ সালের ১২ জুন প্রথম দফায় ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত হিসেবে জব্দ করা হয় একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, সাগরের জুতা মোজাসহ পরনের প্যান্ট এবং রুনীর পরনের প্যান্ট। জব্দকৃত আলামত য্্্্ুক্তরাষ্ট্রের ফোকল্যান্ড ফরেনসিক ও ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০১২ সালের ১৭ জুলাই হত্যাকা-ের সময় যে কাপড় দিয়ে সাগরের হাত ও পা বাঁধা হয়েছিল, সেই কাপড় এবং রুনীর টি-শার্ট পাঠানো হয় একই ল্যাবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই অর্থে এখনও প্রকৃত ডিএনএ রিপোর্ট আমেরিকা থেকে পাওয়া গেছে, সেটি বলা যাচ্ছে না। তবে ডিএনএ রিপোর্টের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য জানা গেছে। এদিকে এ মামলার অন্যতম আসামি হিসেবে ওই সময় আলোচনায় আসা দারোয়ান এনামুলকে ধরতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। এনামুলের পিতা কালা মিয়া পরে র‌্যাবকে জানায়, এনামুল তার তৃতীয় স্ত্রীর সন্তান। এনামুলের জন্ম ১৯৮৯ সালের ২০ জুলাই। সে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ছোটকাল থেকেই চুরি করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। তাদের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানাধীন দক্ষিণভাগ গ্রামে। ২০০৭ সালে এনামুল বিখ্যাত চোর হিসেবে এলাকায় আবির্ভূত হয়। ২০১০ সাল থেকে এনামুল বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেয়। সে সাংবাদিক দম্পতি খুনের মাত্র ১১ দিন আগে ওই বাড়িতে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি নিয়েছিল। ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে সে চাকরি করত। পরে এনামুল গ্রেফতার হয়। হত্যাকা-ের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৪৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ নবেম্বর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকা- নিয়ে র‌্যাবের তদন্তে হতাশা প্রকাশ করে আগামী ৪ মার্চের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি জানাতে র‌্যাবকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই দিন পর্যন্ত মামলার সন্দেহভাজন আসামি রুনীর বন্ধু তানভীরকে আদালতের হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আদালতে আসামি তানভীরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ সারওয়ার হোসেন। গত বছরের ১৪ নবেম্বর পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে দাখিলের দিন নির্ধারণ সত্ত্বেও ৬৯ বারের মতো প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপপরিচালক মেজর হোসাইন রইসুল আজম মনি জানান, মামলাটি বিচারাধীন ও তদন্তাধীন। তাই এ বিষয়ে এখনই সুস্পষ্টভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে তদন্ত অব্যাহত আছে।
×