ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৫০ এলাকায় ৫৩ কিমি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হচ্ছে ;###;গোটা দেশই মূল বিদ্যুত সরবরাহে যুক্ত হবে

সব দুর্গম চরে বিদ্যুত

প্রকাশিত: ১০:৫২, ৪ মার্চ ২০২০

সব দুর্গম চরে বিদ্যুত

রশিদ মামুন ॥ দুর্গম চরের জীবনে আলো জ্বালতে দেশের ৫০ এলাকায় ৫৩ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল নির্মাণ করে বিদ্যুত সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সমতল দিয়ে গোটা দেশই মূল বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ইতোমধ্যে দুর্গম এসব এলাকার তালিকা তৈরি করে কাজও শুরু হয়েছে। সরকারের অফগ্রিড এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহে ৩১৭ কোটি টাকার বড় প্রকল্পের বেশির ভাগ ব্যয় হবে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে। সম্প্রতি শরীয়তপুরের পদ্মা বেষ্টিত দুর্গম চর নওপাড়া, চরআত্রা ও কাঁচিকাটা ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার ঘরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে উপকূল থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের গহীনে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু করেছিল বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সাগর অতিক্রম করে সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুত সরবরাহ করার প্রথম প্রকল্পটিই আশা জাগিয়েছিল। দেশের অভ্যান্তরের দুর্গম চরে সহজেই এই প্রক্রিয়াতে বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব মনে করেই শরীয়তপুরের চরগুলোকে বেছে নেয়া হয়েছিল। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান শুরুতে সাগর অতিক্রম করে বিদ্যুত সরবরাহ করে সফল হওয়ার পরই বিতরণ কোম্পানিগুলোকে দুর্গম এলাকার তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তারা সেই তালিকা তৈরির পর দেখা গেছে ৫০টি এলাকা রয়েছে সমতলে যেখানে মাথার ওপর দিয়ে লাইন নির্মাণ করা কঠিন। সেসব জায়গাতে বিকল্প হিসেবে সাবমেরিন ক্যাবেল বসানো যায়। ইতোমধ্যে বিদ্যুত বিভাগ প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরের মধ্যে সব জায়গার কাজ শেষ হবে। সাবমেরিন ক্যাবলের এক প্রান্ত স্থলভাগের একটি সাবস্টেশনে অন্যপ্রান্ত যেখানে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে সেখানের একটি সাবস্টেশনে সংযুক্ত করা হয়। আর চরে বিদ্যুত সরবরাহে ওভারহেড লাইন নির্মাণ করা হয়। সাবমেরিন ক্যাবলের স্থায়িত্বকাল সাধারণত ৫০ বছর। ফলে একবার স্থাপন করলে ৫০ বছরের জন্য আর চিন্তা থাকে না। তবে কতটুকু বিদ্যুত সরবরাহ করা হবে তার উপর নির্ভর করে সাবমেরিন ক্যাবলের দর কি হবে। এছাড়া ওই এলাকায় সাবস্টেশনের ক্ষমতা এবং কত মানুষের কাছে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে তার ওপর প্রকল্প ব্যয় নির্ভর করে। জানা গেছে, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দেশে অফগ্রিড এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহে বিশেষ মনিটরিং করা হচ্ছে। দেশের গ্রিড সংযুক্ত এলাকায় আগামী জুনের মধ্যে বিদ্যুত সরবরাহর কাজ শেষ করা হচ্ছে। কিন্তু অফগ্রিড এলকায় বিদ্যুত সরবরাহে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে বিতরণ কোম্পানি। সরকার চাইছে এই সময়ের মধ্যে গ্রিডের বাইরে যারা রয়েছেন তাদের ঘরেও বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার কাজ শেষ করতে। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অফগ্রিড এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ নিয়ে এক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়। আরইবি সূত্র বলছে, মূলত অফগ্রিডে এখন এক হাজার ৮৩ গ্রাম রয়েছে। এরমধ্যে দুই ধাপে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ৬৪৬ গ্রাম এবং দ্বিতীয় ধাপে ৩৩০ গ্রামকে গ্রিডের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হবে। যেসব এলাকায় সাবমেরিন ক্যাবল নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলো হলোÑ শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, জামালপুর, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, গাইবান্ধা, কুঁড়িগ্রাম, রাজশাহীর দুর্গম কয়েকটি চরে। মূলত এই জেলাগুলোর উপর দিয়ে প্রবাহমান নদীতে চর পড়েছে। বহু বছর ধরে এসব এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠেছে। তবে চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরবরাহ শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিলেও বিদ্যুত না থাকাতে এখানে মানুষ অনঅগ্রসরই থেকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বিস্তৃর্ণ এলাকার মানুষ আয়ের বহুমুখী ধারার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারছে না। এসব চর সবদিক থেকে জল বেষ্টিত হওয়াতে এখানে সরাসারি গ্রিড পৌঁছানো কঠিন। এছাড়া ব্যয় সাপেক্ষও। সঙ্গত কারণে এসব এলাকায় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হচ্ছে। আরইবির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা মনে করছি এরপর সমতলের কোন এলাকাই আর গ্রিডের বাইরে থাকবে না। তিনি বলেন, এরমাধ্যমে তৃণমূলে বিদ্যুতের সেবা সম্প্রসারিত হবে। সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
×