ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের;###;১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল সুবিধা চায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো

সঙ্কটে পড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনঃসংস্কারের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ৪ মার্চ ২০২০

সঙ্কটে পড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনঃসংস্কারের উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনঃসংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসি)। আগামী সপ্তাহের মধ্যে নীতি নির্ধারণ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও কাজ করছে। পাশাপাশি ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল সুবিধা চেয়েছেন আর্থিক খাতের প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসি)’র চেয়ারম্যান ও আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম। মমিনুল ইসলাম বলেন, আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে কিভাবে উত্তরণ ঘটানো যায় সে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে তারল্য সঙ্কট, আর্থিক খাতের ওপর অনাস্থা, এবং বিশেষ তহবিল ছিল অন্যতম। সঙ্কটকালীন সময়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিশেষ একটি তহবিল গঠনের আবেদন জানিয়েছি আমরা। তবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। কি ধরনের কোন তহবিল পেলে দেশের আর্থিক খাতে তারল্য ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও জানান, আর্থিক খাতের দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিভাবে রিকনস্ট্রাকশন বা পুনঃসংস্কার করা যায় সে বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান সঙ্গে একীভূত করা যায় কিনা সে বিষয়ে ভাবছি। আর্থিক খাতের অবস্থা ভয়াবহ রকমের খারাপ নয় দাবি করে মমিনুল ইসলাম বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যেই বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করবে দেশবাসী। শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বলদের একীভূত করার বিষয়ে রাজি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সবলদের ব্যবসাতেও প্রভাব পড়েছে। তাই দুর্বলদের একীভূত করে সামনে আঘাতেও একমত শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে নিজের ঘরকে বিপদমুক্ত ভাবার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, গত সোমবার বিএলএফসিএ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে একটি তহবিলের বিষয়ে আবেদন জানিয়েছে। একই বিষয় মঙ্গলবার গবর্নরকে জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি আর্থিক খাতে আস্থা ফেরাতে নতুন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কিনা সে বিষয়ে পরামর্শ হয়েছে। তবে কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএলএফসিএ এর ভাইস চেয়ারম্যান এবং আইআইডিএফসি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে আর্থিক খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক প্রবৃদ্ধি অনেক ভাল। কিন্তু একটি মাত্র ঘটনা সকল অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। বাজারে তৈরি করেছে আস্থার সঙ্কট। খুব শীঘ্রই আমরা এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠব বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। গোলাম সারওয়ার আরও জানান, আমাদের এই খাতটিকে অনেক সময় লিজিং খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু আমাদের ব্যবসার মাত্র ১০ শতাংশ লিজিং খাতে বিনিয়োগ হয়। তাই লিজিং খাতের পরিবর্তে এটাকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি দিতে হবে। নতুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনেও কথাটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। উল্লেখ, মালিকদের লুটপাট আর বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় দূরবস্থায় দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)। পিপলস লিজিং অবসায়নের পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আমানতকারীরা। আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তি নয়, অনেক প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীও অর্থ তুলে নিচ্ছে। দেশে ব্যাংকবহির্ভূত ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৬টির চেয়ারম্যান-এমডিদের অনিয়মের কারণে একেবারে সর্বস্বান্ত। পিপলস লিজিংয়ের বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বিআইএফসি, এফএএস ফাইন্যান্স, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ফার্স্ট ফাইন্যান্স বন্ধের উপক্রম। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দুর্নীতির মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার।
×