ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল ॥ শেখ জামাল ধানমণ্ডি ৪-১ আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ

নান্দনিক খেলা উপহার দিয়ে শেখ জামালের জয়

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ৩ মার্চ ২০২০

নান্দনিক খেলা উপহার দিয়ে শেখ জামালের জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সোমবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে দিনের প্রথম খেলায় যেসব দর্শক শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেড বনাম আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি দেখেননি, তারা বড় রকমের বিনোদন লাভ করা থেকে ‘মহা’ বঞ্চিত হয়েছেন। পুরো ম্যাচে উভয় দলই গতিশীল, নান্দনিক ও উঁচুমানের খেলা উপহার দেয়। যা দেখে মুগ্ধ হয় স্টেডিয়ামে আগত গুটিকয়েক দর্শক। খেলায় আরামবাগকে ৪-১ গোলে হারিয়ে পূর্ণ তিন পয়েন্ট অর্জন করে ‘বেঙ্গল ইয়োলোস’ খ্যাত জামাল। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে এটা জামালের দ্বিতীয় জয়। ২ জয় ও ১ হারে তাদের পয়েন্ট ৬। পক্ষান্তরে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে এটা ‘রাইজিং স্ট্রেন্থ’ খ্যাত আরামবাগের দ্বিতীয় হার। ১ জয় ও ১ ড্রতে তাদের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। গত লীগে আরামবাগের বিরুদ্ধে দু’বারের মোকাবেলায় প্রতিবারই জয়ী হয়েছিল জামাল (১-০ এবং ২-০)। চলতি লীগে আরামবাগ ১-০ গোলে হারে মোহামেডানের কাছে। এছাড়া ২-১ গোলে হারায় চট্টগ্রাম আবাহনীকে। এছাড়া ২-২ গোলে ড্র করে মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। পক্ষান্তরে জামাল নিজেদের প্রথম ম্যাচে ০-২ গোলে হেরে যায় চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে। দ্বিতীয় ম্যাচে ২-১ গোলে মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। সোমবার উভয় দলের জার্সি দেখে মনে হচ্ছিল মাঠে খেলছে আর্জেন্টিনা বনাম তুরস্ক! খেলার শুরুতে জামাল ৪-৩-৩ এবং আরামবাগ খেলে ৪-৪-২ ফর্মেশনে। ১৪ মিনিটে জাহিদ হোসেনের পাস পেয়ে আরামবাগের ডি বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের জোরালো শট নেন আইভরি কোস্টের ফরোয়ার্ড বাল্লো ফামৌসা। তার নেয়া শটটি ঝাঁপিয়ে পড়ে কোন মতে ধরে ফেলেন আরামবাগ গোলরক্ষক রাকিবুল ইসলাম শাওন। ২০ মিনিটে আরেকটি গোলের সুযোগ নষ্ট করে জামাল। আরামবাগের বক্সের ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে পড়ে রাইট উইঙ্গার জাহিদ হোসেন উড়ন্ত ক্রস করেন। বক্সের ভেতরে লাফিয়ে উঠে মাথা ছুঁইয়ে সেই বল অল্পের জন্য জালে পাঠাতে ব্যর্থ হন ফামৌসা। কেননা বলটি পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। তবে পরের মিনিটেই (২১ মিনিটে) আক্ষেপ দূর হয় তিনবারের লীগ চ্যাম্পিয়নদের। এবারও সেই একই কম্বিনেশনের একই ধরনের আক্রমণ। ডান প্রান্তে বক্সের ভেতরে জাহিদের উড়ন্ত ক্রস, ফামৌসার হেডে গোল। এগিয়ে যায় জামাল (১-০)। ৩৪ মিনিটে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে জামালের ডিফেন্ডার মোজাম্মেল হোসেন নিরার নেয়া শটটি আরামবাগের সাইডবার ঘেঁষে বাইরে চলে গেলে আবারও গোলবঞ্চিত হয় জামাল। ৩৫ মিনিটে সমতায় ফেরে আরামবাগ। বাঁপ্রান্ত দিয়ে জামালের বক্সে ঢুকে মিসরীয় মিডফিল্ডার মোস্তফা মাহমুদ বক্সের ভেতরে যে বলটি ফেলেন, তা অনায়াসেই ডান পায়ে রিসিভ করে আলতো করে জালে ঢুকিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন আরামবাগের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড এলিটা কিংসলে (১-১)। চলতি লীগে এটা তার ব্যক্তিগত পঞ্চম গোল, যা এখনও পর্যন্ত সবার চেয়ে বেশি। ৪৪ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে জামাল। আরামবাগের বক্সের ভেতরে লব ফেলেন গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড সলোমন কিং কানফর্ম। সেই বলে ডান পায়ে চমৎকার ভলি শট মেরে জালে জড়ান আবারও সেই ফামৌসা (২-১)। ৫১ মিনিটে পেনাল্টি পায় জামাল। জাহিদকে বক্সের ভেতরে ফেলে দেন আরামবাগ গোলরক্ষক রাকিবুল ইসলাম শাওন। রেফারি মিজানুর রহমান পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পরের মিনিটে পেনাল্টি শট নেন সলোমন কিং। গোলরক্ষক শাওন কিংয়ের ডান পায়ের গড়ানো শট ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। সেই সঙ্গে করেন ‘পাপের প্রায়শ্চিত্ত!’ ৫৫ মিনিটে আবারও গোল মিস করে জামাল। ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে সলোমন ডান পায়ের যে জোরালো-উঁচু শটটি নেন গোলপোস্ট লক্ষ্য করে, তা ফিস্ট করে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন শাওন। ৫৬ মিনিটে অবশেষে গোলপ্রচেষ্টা সফল হয় জামালের। বক্সের ভেতরে নিরার ক্রস থেকে নিচু হেডে আরামবাগের জালে বল পাঠিয়ে এবার পাপমোচন করেন সলোমন কিং (৩-১)। ৬৫ মিনিটে গাম্বিয়ান ডিফেন্ডার পা ওমর জোবে ডান প্রান্ত দিয়ে আরামবাগের বক্সে ঢুকে পড়ে ডান পায়ের যে গড়ানো ক্রস করেন, তা ঠিকমতো পায়ে সংযোগ ঘটাতে পারলে ফামৌসা তার হ্যাটট্রিক পূরণ করতে পারতেন! ৭৫ মিনিটে আবারও গোল জামালের। কর্নার পায় তারা। জাহিদের কর্নারে বল বক্তের ভেতরে কয়েক জনের মাথা ও পা ঘুরে চলে আসে পা ওমর জোবের পায়ে। কালবিলম্ব না করে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি (৪-১)। শেষ পর্যন্ত ওই স্কোরলাইনেই খেলা শেষ হলে জয়ের তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ে শফিকুল ইসলাম মানিকের দল।
×