ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা ফুটবল লীগে সহকারী রেফারিদের ‘অফসাইড জ্ঞান’-এর এক ম্যাচ!

নাসরিন স্পোর্টসের টানা দুই জয়

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ৩ মার্চ ২০২০

নাসরিন স্পোর্টসের টানা দুই জয়

রুমেল খান ॥ মহিলা ফুটবল লীগে মহিলা ফুটবলাররা যেমন খেলছেন, তেমনি তাদের খেলাগুলোও পরিচালনা করছেন মহিলা রেফারিরা। তবে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে চলমান এই লীগের শুরু থেকেই রেফারিরা ভুলভাল অনেক সিদ্ধান্ত দিয়ে যাচ্ছেন, যা নিয়ে যেমন হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি প্রবল সমালোচনাও হচ্ছে। এই যেমন সোমবারও হলো। এদিন দিনের প্রথম ম্যাচে নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি ২-০ গোলে হারায় বেগম আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাবকে। খেলার প্রথমার্ধে অবশ্য কোন গোল হয়নি। টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে যুগ্মভাবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এলো নাসরিন স্পোর্টস। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচের প্রতিটিতেই হেরে আনোয়ারা এখনও পয়েন্টশূন্য। খেলায় প্রধান রেফারি ছিলেন জয়া চাকমা। আর দুই সহকারী রেফারি ছিলেন তাহমিনা আক্তার এবং আঁখি মনি। তাহমিনা ও আঁখি এদিন যেন পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছিলেন, কে কত বেশি ভুল করতে পারেন! এই দুজন মিলে গোটা ম্যাচে তারা কমপক্ষে ১০টি ভুল সিদ্ধান্ত দেন। এগুলোর সবই ছিল অফসাইড সংক্রান্ত। অফসাইডের নিয়ম হলো আক্রমণে যাওয়া দলের খেলোয়াড় যদি প্রতিপক্ষ দলের সীমানায় বল পাওয়ার আগেই যদি অবস্থানে থাকেন, তাহলে তিনি অফসাইডের ফাঁদে পড়বেন। সাধারণত এই বিষয়টি নজরে রাখেন মাঠের দুই প্রান্তের দুই সহকারী রেফারি। তাদের সংকেত (ফ্ল্যাগ উঁচিয়ে প্রধান রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণ করা) পেলেই রেফারি বাঁশি বাজিয়ে খেলা থামিয়ে দেন। এটাই হচ্ছে নিয়ম। কিন্তু সোমবার আনোয়ারা-নাসরিন ম্যাচে দেখা গেছে সম্পূর্ণ উল্টো ও আজব চিত্র। বলের পরে যাওয়ার পর নাসরিনের ফুটবলারা বার বার অফসাইড ঘোষিত হচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, নাসরিনের ফুটবলারা অনেক সময় সত্যিই অফসাইড পজিশনে থাকলেও তাদের অফসাইড দিচ্ছিলেন না দুই সহকারী রেফারি! এগুলো দেখে তাজ্জব বনে যেতে হয়েছে স্টেডিয়ামে খেলা উপভোগ করতে আসা দর্শক ও সাংবাদিকদের। ম্যাচ কমিশনার হারুন-উর-রশীদকে বিষয়টি অবগত করার কেউ ছিলেন বলে মনে হয়নি। ম্যাচের পুরো সময় বেশ গোছালো ফুটবল খেলে নাসরিন। তাদের সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু শুধু গোলটাই পাচ্ছিল না! প্রথমার্ধে অনেক আক্রমণ করেও যখন তারা গোলখরার ভুগছিল, তখন অনেকেই ধরেই নিয়েছিলেন ম্যাচটি বুঝি ড্রতে পর্যবসিত হতে যাচ্ছে। ঠিক তখনই গোলের সন্ধান পায় তারা। খেলার তখন ৬৫ মিনিট। গোল করে নাসরিনকে এগিয়ে দেন লেফট ব্যাক ও লেফট মিডফিল্ডার উভয় পজিশনে খেলা উন্নতি খাতুন। বাঁ প্রান্ত থেকে বক্সের কোনা থেকে তার নেয়া উঁচু ক্রসটি আনোয়ারার বদলি গোলরক্ষক আশা কর্মকারের মাথার ওপর দিয়ে জালে প্রবেশ করে (১-০)। ৭৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ক্লাব নাসরিন। প্রতিপক্ষের জটলার ভেতরে বল পেয়ে ডান পায়ের ভলিশটে গোল করেন অধিনায়ক রাজিয়া খাতুন (২-০)। ম্যাচ শেষে কথা হয় বিজয়ী দলের অধিনায়ক ও রাইট উইঙ্গার রাজিয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে দল ১২-০ গোলে জিতলেও কোন গোল পাইনি। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে গোল পেলাম।’ লীগ শুরুর আগে মাস খানেক অনুশীলন করতে পেরেছে নাসরিন একাডেমি, বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে। এ প্রসঙ্গে রাজিয়ার আক্ষেপ, ‘আরেকটু সময় পেলে ভাল হতো। আমাদের দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের ক্যাম্প থেকে এসেছে। আমিই একমাত্র সিনিয়র জাতীয় দলে খেলেছি।’ নাসরিনের পরের ম্যাচ ৫ মার্চ বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে রাজিয়ার ভাষ্য, ‘তারা আমাদের চেয়ে শক্তিমত্তায় এগিয়ে। কেননা জাতীয় সিনিয়র দলের ১৯ ফুটবলার খেলছে এই দলে। তাদের বিরুদ্ধে জেতাটা অনেক কঠিন। আমরা নিজেদের শতভাগ দিয়ে খেলার চেষ্টা করব। লক্ষ্য থাকবে যেন হেরে না যাই।’ সোমবারের ম্যাচ নিয়ে রাজিয়ার বিশ্লেষণ, ‘আমরা আজ জিতলেও আমরা গোলের অনেক সুযোগ নষ্ট করেছি, এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে আমাদের চেষ্টার কোন কমতি ছিল না। আমাদের আরও গোলে জেতার ইচ্ছে ছিল। তারপরও কম গোলে জিতলেও যে তিন পয়েন্ট পেয়েছি এতেই আমরা অনেক খুশি।’ * কুমিল্লা ইউনাইটেডকে বড় ব্যবধানে হারাল এফসি উত্তরবঙ্গ ॥ একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে বড় ব্যবধানে জয় কুড়িয়ে নিয়েছে এফসি উত্তরবঙ্গ। তারা ৭-০ গোলে হারায় কুমিল্লা ইউনাইটেডকে। বিজয়ী দল খেলার প্রথমার্ধে ৪-০ গোলে এগিয়েছিল। বিজয়ী দলের সুলতানা একাই করেন হ্যাটট্রিকসহ ৪ গোল। জোড়া গোল করেন রেখা। একটি গোল করেন মালিনী। ২ ম্যাচে উত্তরবঙ্গের সংগ্রহ ৬ এবং সমান ম্যাচে এখনও পয়েন্টহীন কুমিল্লা।
×