ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরের পাঁচ জেলার চা শিল্পে অশনী সঙ্কেত

প্রকাশিত: ১২:১৪, ৩ মার্চ ২০২০

উত্তরের পাঁচ জেলার চা শিল্পে অশনী সঙ্কেত

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ আবারও কাঁচা চা পাতার দাম কমেছে। এবার সরকারীভাবে মূল্য নির্ধারণ কমিটি উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার সমতল ভূমিতে উৎপাদিত প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য ১৪ টাকা নির্ধারণ করে দেয়ার পাশাপাশি সাড়ে চার পাতার বেশি কাঁচা চা পাতা কারখানাগুলোতে সরবরাহ করা যাবে না মর্মে শর্ত জুড়িয়ে দিয়েছে। এর বেশি হলে শতকরা ১০ ভাগ থেকে ৪০ ভাগ পর্যন্ত পাতা কর্তন করা হচ্ছে। এতে মাথায় হাত পড়েছে চা চাষীদের। এ যেন উত্তরের পাঁচ জেলার চা শিল্পে অশনীসঙ্কেত। চা চাষীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে চা পাতা বিক্রি করলে তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। প্রতিকেজি কাঁচা চা পাতার উৎপাদন খরচই পড়ে যায় ১৭ টাকার বেশি। চাষীদের অভিযোগ, উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমিতে চা চাষে নিরুৎসাহিত করতে মহল বিশেষ কাঁচা চা পাতার দর কমিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এ অঞ্চলের চা চাষীরা চায়ের পরিবর্তে বিকল্প চাষে ঝুঁকে পড়বে। এতে করে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে সমতল ভূমির চা শিল্প। চট্টগ্রামের অকশন মার্কেটে পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের উৎপাদিত চায়ের (মেডটি) নিলাম মূল্য কমে যাওয়াকেই দায়ী করছেন কাঁচা কারখানা মালিকপক্ষ। একই অকশন মার্কেটে পঞ্চগড়ের চায়ের চেয়ে সিলেট অঞ্চলের চা ১ থেকে দেড় শ’ টাকা বেশি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সেই চা (মেড টি) ভোক্তাদের বাজারে ৪শ’ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এখানেই বিশাল মূল্য ফারাক। কারখানা মালিক ও চা কোম্পানিগুলো অধিক মুনাফা অর্জন করে অল্প কিছুদিনের মধ্যে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেলেও চা চাষীরা বরাবরই ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ এসব দেখার কেউ নেই। ক্ষুদ্র চা চাষী আতাউর রহমান বলেন, সরকারীভাবে যে দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সেটাও মানছেন না কারখানা মালিকরা। পাতার বয়স বেশিসহ নানা অজুহাতে শতকরা ১০ ভাগ কর্তনের পরও প্রতিকেজি পাতা ১০ টাকা পেয়েছি। সারোয়ার হোসেন নামে আরও এক চাষী বলেন, তার বাগানের পাতার বয়স একটু বেশি হওয়ায় কোন কারখানাই পাতা কিনতে চাচ্ছেন না। অগত্যাই পাতা কেটে ফেলেছি। মতিয়ার রহমান নামে এক চা চাষী বলেন, সাড়ে চার পাতার বেশি ৫ পাতা হলেই শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ পাতা কর্তন করে নেয়া হচ্ছে। চা চাষীরা কারখানা মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, প্রতিবছর চায়ের মৌসুমে চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের নিলাম বাজারে মোট ৪৫টি করে নিলামে তৈরি চা বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া নিলাম বাজারে তৈরি চায়ের গড় মূল্যে ওপর বিবেচনা করে কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটি সভা করে কাঁচা চা পাতার নির্ধারণ করে থাকে। যা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটির এক সভায় প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তিনি বলেন, দিন দিন সমতল ভূমিতে চা চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চা চাষ সম্প্রসারণে চা চাষীদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। চাষীদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে ইতোমধ্যে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ নামে একটি মোবাইল এ্যাপস চালু করা হয়েছে। এই এ্যাপসের মাধ্যমে নানা সহযোগিতা পাচ্ছেন চাষীরা। সরকারীভাবেই গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৩ মাস কাঁচা চা পাতা সংগ্রহ বন্ধ থাকার পর ১ মার্চ থেকে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় স্থাপিত ১৮টি কারখানায় চা পাতা সরবরাহ শুরু হয়েছে। চলবে আগামী নবেম্বর পর্যন্ত। এই নয় মাস চায়ের উৎপাদন মৌসুম বলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্রমতে, পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলার সমতল ভূমিতে বিগত মৌসুমে চা উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯৬ লাখ কেজি, যা দেশের চা উৎপাদনের শতকরা ১০ ভাগ। পঞ্চগড়কে অনুসরণ করে পার্শ¦বর্তী ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলাতেও চা চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। পাঁচ জেলায় নিবন্ধিত ৯টি ও অনিবন্ধিত ১৯টি বড় চা বাগান (২৫ একরের বেশি), ক্ষুদ্রায়তনের চা বাগান (২৫ একর পর্যন্ত) এক হাজার ৩৫৮টি নিবন্ধিত ও পাঁচ হাজার ২শ’টি অনিবন্ধিত রয়েছে। এছাড়াও ক্ষুদ্র আকারের অনেক চা বাগান গড়ে উঠেছে। এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৬৮০ দশমিক ৬৮ একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।
×