ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধুত্বের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ঠিক না

প্রকাশিত: ১১:১৯, ৩ মার্চ ২০২০

বন্ধুত্বের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ঠিক না

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে তা বন্ধে উদ্যোগ নিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সোমবার সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে এই আহ্বান জানান তিনি। বৈঠক শেষে মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বললাম, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাদের জিরো কিলিং হবে বর্ডারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ বছরে কিলিংটা অনেক বেড়ে গেছে, এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।’ ‘আমি বললাম, আপনারা আমাদের বন্ধু মানুষ। এই বন্ধুত্বের মধ্যে কিলিং হওয়া ঠিক না।’ জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সীমান্ত হত্যা বন্ধে ‘চেষ্টা চালাবেন’ বলে আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ‘উনি বললেন যে উনারা ট্রাই করবেন, এটা যাতে না হয়,’ বলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত নিরাপত্তার আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বরাবরই আসে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড। ২০১১ সালে বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানীকে হত্যা বিশ্বজুড়ে আলোচনা তৈরি করেছিল। এরপর দুই দেশের আলোচনায় সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতি আসে। মাঝে কিছুটা কমলেও সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে বাংলাদেশীর মৃত্যু এখন আবার বেড়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ৩৭ জন এবং তাদের শারীরিক নির্যাতনের কারণে ছয়জনসহ মোট ৪৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ফেব্রুয়ারির শুরুতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানায়, আগের দেড় মাসে সীমান্তে ১১ বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন সামনে রেখে দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন শ্রিংলা, যিনি কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। সকালে সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া: এ প্রমিজিং ফিউচার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তিস্তা প্রসঙ্গ সাক্ষাতে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বললাম যে, আমাদের তিস্তা আপনারা বললেন যে, সবকিছু রেডি আছে, কিন্তু এখনও এটা শেষ হলো না।’ ‘উনি বললেন, মোটামুটি এটাতে অসুবিধা আছে উনাদের, কিন্তু আশা করতেছি, এটা আগামীতে হবে।’ ‘আমি বললাম, আমাদের জবাবদিহি আছে, আমরা একটি নির্বাচিত সরকার। গণতান্ত্রিক সরকার, মানুষ আমাদের এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলে, ’ তোমাদের বন্ধুত্ব, কিন্তু কাজ হচ্ছে না তো।’ নয় বছর আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিরোধিতায় তা আটকে যায়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য তিস্তার পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে দ্বিপক্ষীয় সব ফোরামেই ঢাকার পক্ষ থেকে নয়াদিল্লীকে ওই চুক্তির বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়। ২০১৪ সালে ভারতে ক্ষমতায় আসা বিজেপির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তা চুক্তির আশা দিলেও এখনও মমতাকে তিনি রাজি করাতে পারেননি। তিস্তার বাইরে অন্য ছয়টি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে মোদির সফরে চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনার কথা শ্রিংলা বলেছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উনি বললেন, আরও কয়েকটি নদী আছে, সেটা আমরা মোটামুটি চূড়ান্ত করে ফেলেছি এবং আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী মোদি আসলে পরে... ‘আপনারা গতবারে আমাদের ফেনী নদীর কিছু সাহায্য করেছেন এবং এখন ভারতের প্রয়োজন আপনাদের সাহায্য করা। বললাম, দিস ইজ গুড। উনি বললেন, ‘এবার আমরা আপনাদের প্রতিদান দিতে চাই।’ ভারতে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে চলমান সহিংসতার বিষয়টি আলোচনায় তোলার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘তোমাদের দেশের অনেক ইস্যু আছে, যেগুলো আমাদের দেশে সময়ে সময়ে চিন্তার কারণ হয়। উদ্বেগ আমাদের জনগণও করে এবং সে জনগণের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। সেসব সম্পর্কে আমরা চাই তোমরা এমন কোন কাজ করবা না, যাতে আমাদের অসুবিধার সৃষ্টি হয়।’ ‘উনি (শ্রিংলা) বললেন যে, ইস্যুগুলো কোনভাবে বাংলাদেশকে এ্যাফেক্ট করবে না। ইস্যুগুলো অল্পদিনের জন্য, উনি জাস্টিফাই করতে চাইলেন, এগুলো কেন করার দরকার পড়ল।’
×