ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো ইসির দায়িত্ব নয় ॥ সিইসি

প্রকাশিত: ১১:১৩, ৩ মার্চ ২০২০

ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো ইসির দায়িত্ব নয় ॥ সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে বেশ সমালোচনা ও বিতর্কের শেষ নেই। তবে নির্বাচন কমিশন এর দায়দায়িত্ব নিতে নারাজ। তারা এর দায় যেমন চাপাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়াকে তারা আবার ভোটারদের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন। ইসির পক্ষ থেকে যেমন দাবি করা হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বই কেবল নির্বাচন কমিশনের। তেমনি তারা এও উল্লেখ করেছেন যে ভোট দেয়া ভোটারদের অধিকার। তাই নিজের অধিকার নিজের প্রতিষ্ঠা করতে হয়। তাই ভোট দিতে না পারাকে তারা ভোটারদের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন। নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রায় সব মহল থেকেই সমালোচনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে এর দায় অনেকে নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপানো হচ্ছে। তাদের যুক্তি নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের কোন আস্থা নেই। ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তাই সাধারণ ভোটার কেন্দ্রমুখী হচ্ছে না। আবার অনেকে যুক্তি রয়েছে নির্বাচনের দিনে যানবাহন বন্ধ থাকার কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে পারে না। কিন্তু এর পেছনে যুক্তি যাই থাক নির্বাচন কমিশন সরাসরি এর জবাবে জানিয়েছে দিয়েছে ভোটার উপস্থিতি বাড়নো ইসির দায়িত্ব নয়। তাদের দায়িত্ব শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কেবল ইসির। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন নির্বাচনে ভোট দেয়া পরিবেশ, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কমিশনের ওপর বর্তায়। তারা এর দায় অস্বীকার করতে পারে না। গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও ভোটার উপস্থিতি কম নিয়ে তখন থেকেই নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়। খোদ নির্বাচন কমিশনেও এ নিয়ে বেশ অসন্তুষ্টি রয়েছে। কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ২৭.১৫ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে ভোট পড়েছে ২৯.২ শতাংশ এবং উত্তরের ২৫.৩০ শতাংশ। ওই সময় ইসি সচিব জানিয়েছিলেন এবারের ধারণার চেয়ে কম ভোট পড়েছে। সিটি নির্বাচনে ভোট পড়ার হার নিয়ে ইসি সন্তুষ্ট নয়। এই সমালোচনার মধ্যে সামনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন। আগামী ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার ধানম-ির এই আসনের নির্বাচন। আর চট্টগ্রাম সিটি ভোটের আয়োজন করা হয়েছে মার্চের ২৯ তারিখে। এই দুটি ভোটেই সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে। এবারের কম ভোট পড়ার কারণ হিসেবে অনেকে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট নেয়াকে দুষছেন। এ কারণে সামনে এই দুটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন জল্পনা কল্পনা এখন থেকেই শুরু হয়েছে। বিএনপি প্রথম থেকে ইভিএমের ব্যবহারের বিরোধিতা করে আসছে। বিএনপির আবেদন উপেক্ষা করে ইসি ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ঢাকা সিটি নির্বাচনে দেখা গেছে ইভিএমে ভোটগ্রহণের কারণে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন প্রকার জাল ভোট বা কেন্দ্র দখলের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে বিএনপি ইভিএম নিয়ে প্রথম থেকেই নেতিবাচক প্রচার চালিয়েছে। ফলে ঢাকার সিটি নির্বাচনে ভোটার কেন্দ্রে যায়নি। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে এর পাল্টা অভিযোগে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনে প্রতি সাধারণ ভোটারদের কোন আস্থা নেই। ফলে সাধারণ ভোট নির্বাচন থেকে মুখ ফিরে নিয়েছে। তবে বিএনপি এই অভিযোগও মানতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা। তারা বলছে বিএনপি নেতিবাচর প্রচারে পাশাপাশি, যানবাহন বন্ধ থাকা, ভোটের আগে পরে তিনদিন ছুটি থাকার কারণে ওই সময় অনেকেরই রাজধানী ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। ঢাকা উত্তরের মেয়র ওই সময় আরও একধাপ এগিয়ে তিনি মন্তব্য করেন দেশ উন্নত হচ্ছে। এ কারণেই ভোটার উপস্থিতি কমছে। উন্নত দেশে ভোটার উপস্থিতি কম থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর দায় দায়িত্ব অস্বীকার করলে বিষয় আমলে নিয়ে ইসি। সম্প্রতি এক বৈঠকে ইসির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনের দিন যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে না। শুধু মোটরসাইকেল চলচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এটি সফল হলে আগামীতে সব নির্বাচনে এটি কার্যকর করা হতে পারে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছে ইসির পক্ষ থেকে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর দায় দায়িত্ব অস্বীকার হলে তারা দায় এড়াতে পারে না। কারণ ভোটারদের আস্থা নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার বা ভোট দেয়ার পরিবেশ নিশ্চিতের দায় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তারা দায় এড়াতে পারে না। সোমবার সারাদেশে একযোগে পালিত হয়েছে জাতীয় ভোটার দিবস। ভোটারদের সচেতন করতেই একটি জাতীয় দিবস পালনের উদ্যোগ ইসির পক্ষ থেকে নেয়া হয়। গত বছর প্রথম দেশে জাতীয় ভোটার দিবস পালন করা হয়েছে। এবার নানা আয়োজনে এই দিবস পালনের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। সোমবার সকালে এ উপলক্ষে একটি র‌্যালিও বের করা হয়। র‌্যালির নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেছেন ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি না থাকার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। এজন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী না। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাজ নয়। সুষ্ঠু ভোটের আয়োজন করাই ইসির দায়িত্ব।
×