ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শত শত মানুষের উপস্থিতিতে পিতার সামনে ছেলেকে হত্যা

অবশেষে গ্রেফতার হলো সেই ভয়ঙ্কর খুনী

প্রকাশিত: ১১:১২, ৩ মার্চ ২০২০

অবশেষে গ্রেফতার হলো সেই ভয়ঙ্কর খুনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে গ্রেফতার হলো সেই ভয়ঙ্কর খুনী। যে পিতার সামনেই দিন দুপুরে শত শত মানুষের সামনেই ছেলেকে হত্যা করে। এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যার সময় পিতাপুত্র খুনীর কাছে বার বার জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল। কিন্তু সেই করুণ আকুতি খুনীর হৃদয় গলাতে পারেনি। তাই তো পিতার সামনেই একের পর এক ছুরিকাঘাতে নাড়িভুঁড়ি বের করে ছেলেকে হত্যা করে সেই খুনী। খোদ রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় শত শত মানুষের সামনেই নির্মম সেই হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে। তাকে সোমবার মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেফতারের পর ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করছে র‌্যাব। বাইসাইকেল চালানোর সময় অনবধানতাবশত গায়ে লেগে যাওয়ার সূত্র ধরেই হত্যাকা-টি ঘটে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর দুইটা। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন গোবিন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে পাগলা মেডিক্যাল রোডের খোকন মিয়ার বাড়ির সামনের ব্যস্ত সড়ক। সেখান দিয়ে কর্মস্থল থেকে পিতা আবু বকর সিদ্দিকের (৪২) সঙ্গে তার ছেলে ইমন (১৭) বাসায় যাচ্ছিল। তারা মূলত টাকা বাঁচাতে কর্মস্থলের কাছেই থাকা বাসায় যাচ্ছিল দুপুরের খাবার খেতে। কিন্তু বিধি বাম। এ সময় আচমকা ৪/৫ যুবক তাদের উপর হামলা চালায়। তখন পুরো এলাকা ব্যস্ত ছিল। আশপাশে শত শত মানুষ ছিল। শত শত মানুষের সামনেই ইমনকে একের পর এক ছুরিকাঘাত করা হয়। এ সময় ইমন ও তার পিতা খুনীদের কাছে জীবন ভিক্ষা চেয়ে আর্তনাদ করছিলেন। তাদের চিৎকারে আশপাশের মানুষ এগিয়ে আসার আগেই সব শেষ। পিতাপুত্রের জীবন ভিক্ষা চাওয়ার করুণ আর্তনাদ খুনীদের মন গলাতে পারেনি। তাই এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে ইমনের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পরেও খুনী ইমনকে ছুরিকাঘাত করছিল। মুহূর্তেই ঘটনাস্থল রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়ে। ইমন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয় তার। পাশেই বিলাপ করে কাঁদতে থাকেন ইমনের পিতা। আশপাশের মানুষ এগিয়ে আসার আগেই খুনীরা পালিয়ে যায়। ইমনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা ইমন অনেক আগেই মারা গেছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন। রোমহর্ষক এই ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ঘটনাটি সিনেমার কাহিনীকেও হার মানিয়েছে। খুনীরা চোখের পলকে শত শত মানুষের ভিড়ে মিশে গিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় ওই দিনই ১০৪ নম্বর খুনের মামলাটি দায়ের হয়। লাপাত্তা হয়ে যাওয়া খুনীদের গ্রেফতারে একের পর এক অভিযান চালাতে থাকে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য ইউনিট ও গোয়েন্দারা। গত ১ মার্চ র‌্যাব-১০ এর সিপিসি (ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি)- ১ এর কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি থানা এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান চালায় একদল র‌্যাব সদস্য। ছদ্মবেশে র‌্যাব সদস্যরা শেষ পর্যন্ত ইমনের সেই বহুল আলোচিত ভয়ঙ্কর খুনী রাজু বেপারীকে (১৮) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাকে ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এ্যাডিশনাল ডিআইজি) মোঃ কাইয়ুমুজ্জামান খান জানান, রাজু খুবই ভয়ঙ্কর খুনী। তার বিরুদ্ধে আরও কাউকে খুন করার অভিযোগ বা মামলা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজু নিজেই ইমনকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে শত শত মানুষের সামনে ব্যস্ত রাস্তায় খুন করে। খুনী রাজুর পিতার নাম মোঃ কামাল বেপারী। মায়ের নাম রানু বেগম। বাড়ি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানাধীন কেদারপুর গ্রামে। রাজু যাত্রাবাড়ীর গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আলমের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করত। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে এক পরিচিত লোকের বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল। হত্যাকা-ের সময় রাজুর সঙ্গে থাকা সহযোগীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃত খুনী রাজুর বরাত দিয়ে অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুর রহমান জানান, ইমনকে হত্যার মাত্র একদিন আগে বাইসাইকেল চালানো নিয়ে রাজুর সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। ঘটনার একদিন অর্থাৎ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সাইকেল চালানোর সময় রাজু বেপারী ও তার সহযোগীরা নিহত ইমনের গায়ে লাগিয়ে দেয়। এতে প্রতিবাদ করায় ইমনকে শাসায় রাজু ও তার সহযোগীরা। শেষ পর্যন্ত ইমন ঝগড়া করার জন্য ক্ষমা চেয়ে রাজুদের সঙ্গে মিলমিশ করে নেয়। কিন্তু রাজু বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি। রাজু ইমনকে আরও কঠোর শায়েস্তা করতে পরিকল্পনা করতে থাকে।
×