ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাওনা ২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা

বিমানের কাছে বাকিতে জ্বালানি তেল বিক্রি করে ফেঁসে গেছে বিপিসি

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২ মার্চ ২০২০

  বিমানের কাছে বাকিতে জ্বালানি তেল বিক্রি করে ফেঁসে গেছে বিপিসি

রশিদ মামুন ॥ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে বাকিতে জ্বালানি তেল বিক্রি করে ফেঁসে গেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। জ্বালানি বিভাগের কাছে দুই হাজার ১৩৩ কোটি টাকার বকেয়া পাওনা আদায় করে দিতে ধর্না দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জ্বালানি বিভাগ থেকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়কে বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোকাব্বির হোসাইন অবশ্য বলছেন, বকেয়া এই অর্থ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আগের। এখন বিমান অগ্রিম অর্থ দিয়ে বিপিসির কাছ থেকে তেল নিচ্ছে। বকেয়া দুই হাজার ১৩৩ কোটি টাকার সবটাই তেলের দাম নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চার্জ এবং সুদ রয়েছে। বিমানের রুটিন আয় দিয়ে এই অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তবে কিভাবে এই অর্থ পরিশোধ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে বলেন, পরিশোধের প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট হলে বলা যাবে। বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়কে দেয়া চিঠির বিষয়ে সিইও বলেন, চিঠি এখনও আমার কাছে আসেনি। অন্যদিকে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (হিসেব) এটিএম সেলিম বলছেন, বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দেয়া এই তথ্য সঠিক নয়। বিপিসি বিমানের কাছে দুই হাজার ১৩৩ কোটি টাকাই পাবে। তিনি বলেন, বিমানের সঙ্গে বারবার আলোচনায় ব্যর্থ হওয়ার পর আমরা জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়েছি। জ্বালানি বিভাগ থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিমানের কাছে বিপিসির পাওনা আদায় নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে বিমানের কাছে দুই হাজার ১৩৩ কোটি বকেয়া থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা গেছে বিপিসি বলছে ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিমান জেট ফুয়েলের পাওনা বাবদ এই টাকা পাবে। সুদে আসলে এই পাওনার পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে বিপিসির তরফ থেকে বৈঠকে জানানো হয়েছে। বিপিসি সূত্র বলছে, বকেয়ার পরিমাণ নির্ধারণের জন্য বিপিসির একজন পরিচালকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি পর্যালোচনা করে বিমানের এই দেনার পরিমাণ নির্ধারণ করেছে। তখন কমিটি বিমানের সঙ্গেও একাধিকবার এ বিষয়ে আলোচনা করেছে। বিমান এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার কথা বললেও বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া রেখে কিভাবে লাভের হিসেব করেছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একক বৃহত্তম ক্রেতা হিসেবে বিমানের কাছে তেল বিক্রি করে বিপণন কোম্পানি পদ্মা অয়েল। প্রতিমাসে ৫০ কোটি টাকার বেশি জেট ফুয়েল কেনে বিমান। তবে বিভিন্ন সময়ে লোকসানের কথা বলে জ্বালানি তেলের দামই বকেয়া রেখেছে বিমান। বিপুল পরিমাণ বকেয়ার যোগান এসেছে দেশীয় ব্যাংক থেকে। অর্থাৎ পদ্মা অয়েল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিমানকে তেল সরবরাহ করেছে। বিমান তো তেলের দাম দেয়নি। উল্টো পদ্মা অয়েলকে সেই ঋণের সুদও পরিশোধ করতে হচ্ছে। বার্ষিক হিসেবের দিকে তাকালে দেখা যায় বিমান যেসব অর্থবছরে লাভ করেছে সেই অর্থবছরেও তেলের দাম বাকি রেখেছে। বিমানের লাভ ক্ষতির যে হিসাব দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় সেখানে দেখা যায় ২০১৬-১৭ সালে ৪৬ কোটি ৭৬ টাকা, ২০১৫-১৬ সালে ২৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২০১৪-১৫ সালে ২৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা লাভ করেছে বিমান। কিন্তু লাভ করার পরও বিমান বিপিসির তেলের মূল্য পরিশোধ করেনি। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঠিক নিরীক্ষা প্রয়োজন। বছর শেষে আয় ব্যয়ের সঠিক হিসাব নির্ধারণ করা হলেই এসব সমস্যা আর থাকে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর গাফিলতির কারণে এটি করা হয় না। এতে এক প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকার যেহেতু প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোম্পানি করে দিয়েছে। কোম্পানিগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে কঠোর না হলে কোন না কোন সময় লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এতে সরকারের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
×