ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলে রুশদীর পর মা জান্নাতও চলে গেলেন দিলু রোডের অগ্নিকান্ডে

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২ মার্চ ২০২০

  ছেলে রুশদীর পর মা জান্নাতও চলে গেলেন দিলু রোডের অগ্নিকান্ডে

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর মগবাজার দিলুরোডে অগ্নিকান্ডে ছেলে রুশদীর পর মা জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত (৩৮) না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে সর্বনাশা আগুনে জীবন্ত দগ্ধ হয়েছেন তারই আদরের চার বছরের ছেলে রুশদীও। একই ঘটনায় মারাত্মক দগ্ধ হয়ে জান্নাতের স্বামী শহিদুল কিরমানি রনিকেও (৪৫) বার্ন ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে চারজনের মৃত্যু হলো। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডাঃ সামন্ত লাল সেন জানান, জান্নাতের শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়ছিল। তার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। নিহত জান্নাতের শ্বশুর একেএম শহীদুল্লাহ কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার ভোররাতে নাতি রুশদিকে তার বাবা-মা আঁকড়ে ধরে বাঁচাতে পারেনি। তিনি জানান, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে চেতনা ফিরলে জান্নাত কষ্ট ও যন্ত্রণায় মৃদুস্বরে বলেছিল, আমার ছেলে রুশদী কই? ওকে দেখছি না। আমি কোথায়? মিনিট দুয়েকের মধ্যেই এই কথাগুলো বলে আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এর কয়েক ঘণ্টার পরই একমাত্র আদরের সন্তান ছেলে রুশদীর পথ ধরে জান্নাতও পরপারে চলে যান। শহীদুল্লাহ জানান, জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নান বেক্সিমকো ফার্মাসিউক্যাল লিমিটেডের হিসাবরক্ষক ছিলেন। এছাড়া তিনি একজন অনলাইন উদ্যোক্তা ছিলেন। রুশদি’স ক্লজেট নামে একটি অনলাইন পেজের মাধ্যমে বাংলাদেশী শাড়ি বিক্রি করতেন তিনি। নিহতের ননদ রেশমা জানান, হাসপাতালে আইনী প্রক্রিয়া শেষে জান্নাতুলের মরদেহ কর্মস্থলে নেয়া হবে। সেখানে জানাজা শেষে তার মরদেহ নরসিংদীর মনোহরদীতে নেয়া হবে। সেখানে জানাজা শেষে তার আদরের একমাত্র চার বছরের সন্তান রুশদির পাশেই তাকে দাফন করা হবে। রেশমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার ভাবির ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। তিনি একেবারেই চলে গেলেন তার ছেলে রুশদির কাছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জান্নাতের স্বামী রনির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বার্ন ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। তার শরীর ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, গত বৃহস্পতিবার দিলু রোডের ৪৫/এ নম্বর ছয়তলা বাড়ির নিচতলার গ্যারেজ থেকে প্রথমে আগুন লাগে। এতে নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসের চার বছরের সন্তান রুশদি জীবন্ত দগ্ধ হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছিল এইচএসসি পরীক্ষার্থী আফরিন জাহান জুঁথি (১৭) ও আব্দুল কাদের লিটন (৪০)। এদিকে নিহত জান্নাতের স্বামী শহিদুল কিরমানী রনির মারাত্মক দগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। একই অগ্নিকাণ্ডে ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়েছে ওই বাড়ির আরও চারজন বাসিন্দা। তারা হচ্ছেন, কাঁচামাল ব্যবসায়ী মনির হোসেন (৪০), তার স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার (৩০), ছেলে মাহমুদুল হাসান (৯ মাস) ও মাহাদি হাসান রিফাত (৯)। স্থানীয়রা জানান, বাড়িটির তৃতীয় তলায় জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার স্বামী রনি, ছেলে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। আর নিহত আফরিন জাহান জুঁথি পাঁচতলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন এবং আব্দুল কাদের লিটন থাকতেন ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষে। তিনি ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার ক্লাসিক ফ্যাশন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বায়িং অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনারদিন নিহত জুঁথির চাচা মোঃ সুরুজ্জামান জানান, আগুন লেগেছে সে আতঙ্কে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিল জুঁথি। আর ওপর থেকে বাবা, ভাই গ্রিল বেয়ে বাইরে দিয়ে নামেন। তারা দুজনেই সামান্য আহত হন। মাও নামার সময় পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। তার পা ও কোমরের হাড় ভেঙ্গে যায়। তিনি পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, পোড়া এই মেয়েটি আমাদেরই মেয়ে।
×