ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তাল দিনের স্মৃতি, সেইসঙ্গে মুজিববর্ষের রং

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২ মার্চ ২০২০

উত্তাল দিনের স্মৃতি,  সেইসঙ্গে  মুজিববর্ষের রং

মোরসালিন মিজান ॥ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই যাচ্ছিল বাঙালী। বঞ্চনার বিরুদ্ধে ছোট বড় প্রতিবাদ গড়ে তুলছিল। কিন্তু মার্চে সব চাওয়া এক জায়গায় এসে মিশে যায়। স্বাধীনতার ‘অমর-কবিতাখানি’ লেখা হয় এ মাসে। ১৯৭১ সালের মার্চ তাই আলাদা তাৎপর্যের। এখনও বাঙালীর রক্তে দোলা দেয়। আবেগে ভাসায়। মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে শাণিত করে বাঙালী। মাসের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় স্মৃতিচারণ। সময়টিকে ফিরে দেখার নানা আয়োজন চলে। কিন্তু এবারের মার্চে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আগামী ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন। মহা উপলক্ষ সামনে রেখে অযুত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে মার্চের নিয়মিত সব অনুষ্ঠান মুজিববর্ষের আয়োজনের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। বিশিষ্টার্থক হয়ে উঠবে উদ্যাপন। ১৯৭১ সালের মার্চের ইতিহাস অজানা নয় কারও। মাসের শুরুটা হয়েছিল দুঃসংবাদ দিয়েই। ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের পরও ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করছিল পাকিস্তানীরা। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর অপেক্ষায় যখন বাঙালী, ঠিক তখন ১ মার্চ পাকিস্তানী সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। ৩ মার্চ অধিবেশন বসার কথা থাকলেও, সেখান থেকে সরে আসে স্বৈরাচার ইয়াহিয়া। বহুকালের অভিজ্ঞতায় বাঙালীরা বুঝে যায়, পাকিস্তানীরা ক্ষমতা ছাড়বে না। সঙ্গত কারণেই ক্রোধে ফেটে পড়ে গোটা দেশ। অনেক সহ্য করেছি। আর নয়। আর কিছু দেখার নেই। ৭ মার্চ তাই স্লোগান ওঠে- ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর/বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। এদিন রেসকোর্সের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আভাস দেন, অমর কবিতা রচনা হচ্ছে। তর্জনী উঁচিয়ে রাজনীতির কবি বলেন, ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। মরতে যখন শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি, আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। একই ধারাবাহিকতায় আসে ২৫ মার্চের কালরাত। ঢাকায় বর্বর গণহত্যা চালায় পাকিস্তান আর্মি। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। এভাবে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রায় প্রতিটি দিনই ছিল ঘটনাবহুল। সে ইতিহাস ঘুরে ফিরে আসে। নানা আয়োজনের মাধ্যমে এবারও তুলে ধরা হচ্ছে। তবে শুধু মার্চ নয়, এবার মার্চের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুজিবর্ষের মতো বড় উপলক্ষ। এর ফলে উদ্যাপনের ছবিটা অন্যান্য বারের চেয়ে একটু আলাদা হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এরই মাঝে ১ মার্চ থেকে শুরু হয়ে গেছে নিয়মিত অনুষ্ঠানাদি। লক্ষ্য করে দেখা যাচ্ছে, আয়োজনগুলো মুজিববর্ষ এবং মার্চ মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। রবিবার শুরু হওয়া পথনাটক উৎসবেও তা-ই দেখা গেল। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ উৎসবের আয়োজন করেছে পথনাটক পরিষদ। উদ্বোধনী দিন আলোচনা হলো। গান নাচ হলো। নাটক হলো। সব আয়োজন থেকেই মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরা হলো। সে সূত্রে এলেন শেখ মুজিব। সন্ধ্যায় একাধিক পথনাটকেও তুলে ধরা হলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে। আজ সোমবার থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হচ্ছে শিল্পী আখতার মাহমুদ কাজলের একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। প্রাক প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও তুলে ধরা হবে জাতির জনককে। মার্চের পুরোটাজুড়েই থাকবে এ ধরনের অসংখ্য আয়োজন। আর আগামী ১৭ মার্চ থেকে শুরু হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর মূল আয়োজন। এদিন ঢাকার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন করা হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সরকার ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। আমন্ত্রিত হয়ে আসছেন কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। একইভাবে জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন দফতর, সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। প্রথম দিন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণাঢ্য আয়োজনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে দুই লাখ মানুষ অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেভাবেই চলছে প্রস্তুতি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও, এ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকতে পারেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বিষয়ে বক্তৃতা করার কথা রয়েছে তার। আলোচনা ছাড়াও এদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। জানা যায়, একইদিন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাবেন টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানে তাঁরা অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে জাতীয় শিশু দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তারা। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজন। অনুষ্ঠানে এক শ’ শিশু সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে। এর পর থেকে প্রতিদিনই থাকবে নানা উৎসব অনুষ্ঠান। চলবে আগামী বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত। আয়োজক সূত্রগুলো বলছে, মার্চের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু থাকছেন। তেমনই মুজিববর্ষের আয়োজনে তুলে ধরা হবে মার্চের ইতিহাস। আগেও এমনটি হয়েছে। তবে এবার বিশেষ মাত্রায় পাবে উদ্যাপন। মার্চের মহিমা আরও বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে মুজিববর্ষ। বাংলাদেশ এ সুযোগ কাজে লাগাবে। সেভাবেই নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি।
×