ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা ফুটবল লীগ

এবার ১৩ গোলে জিতল বসুন্ধরা কিংস ॥ মনিকা চাকমা এবং সাবিনা খাতুনের হ্যাটট্রিক

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ২ মার্চ ২০২০

 এবার ১৩ গোলে জিতল বসুন্ধরা কিংস ॥ মনিকা চাকমা এবং সাবিনা খাতুনের হ্যাটট্রিক

রুমেল খান ॥ মহিলা ফুটবল লীগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ বেগম আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাবকে ডজন গোলের বন্যায় ভাসিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। সেই ম্যাচে তারা ১২-০ গোলে জিতবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু। রবিবারও কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বসুন্ধরা কিংসের দ্বিতীয় ম্যাচটিও দেখতে এসেছিলেন তিনি (সঙ্গে ছিলেন নারী জাতীয় ফুটবল দলের হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন)। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো রবিবারের ম্যাচে বসুন্ধরা কয় গোল দেবে প্রতিপক্ষ স্পার্টান এমকে গ্যালাকটিকো সিলেট এফসিকে, তখন তিনি বললেন, ‘আগের ম্যাচের মতোই গোল হবে এই ম্যাচেও।’ লিটুর ভবিষ্যদ্বাণীর চেয়ে একটি গোল রবিবারের চেয়ে বেশি হয়েছে। অর্থাৎ তারা জিতেছে ১৩-০ গোলে। খেলার প্রথমার্ধে বিজয়ী দল এগিয়ে ছিল ৬-০ গোলে। বিজয়ী দলের মনিকা চাকমা এবং অধিনায়ক সাবিনা খাতুন হ্যাটট্রিক করেন। প্রথম ম্যাচেও সাবিনা হ্যাটট্রিক করেছিলেন। মিডফিল্ডার মনিকা ১৮, ২৩ ও ৭৬ মিনিটে এবং ফরোয়ার্ড সাবিনা ৫, ৪৫ ও ৭৩ মিনিটে গোল করেন। এছাড়া তহুরা খাতুন (৫৭ ও ৭৯ মিনিটে) এবং মুন্নী আক্তার (৮৫ ও ৮৮ মিনিটে) জোড়া গোল করেন। এছাড়া ১টি করে গোল করেন কৃষ্ণা রানী সরকার (৬ মিনিটে), শিউলি আজিম (৪৫ মিনিটে) এবং একটি গোল হয় আত্মঘাতী (মুক্তা দাস, ৬৮ মিনিটে)। ২ খেলায় ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বসুন্ধরা কিংস নারী ফুটবল দল। ৬ গোল নিয়ে দ্বিতীয় থেকে শীর্ষ গোলদাতার আসনে চলে গেছেন সাবিনা খাতুন। ৫ গোল নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে তারই সতীর্থ কৃষ্ণা রানী সরকার। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরার মেয়েরা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে ঠিকই, কিন্তু তাদের খেলায় মন ভরেনি উপস্থিত দর্শকদের। কেননা যতগুলো গোল করেছে তার দ্বিগুণেরও বেশি তারা গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে। তাছাড়া মাঠ বড় করে না খেলা, অহেতুক প্রতিপক্ষের বক্সের ভেতরে জটলা পাকানো, বেশি ড্রিবলিং করার প্রবণতা ... এগুলো বড্ড চোখে পড়েছে। বসুন্ধরার কোচ মাহমুদ শরীফা অদিতিকেও খেলা শেষে খুব একটা প্রসন্ন মনে হলো না। এই ম্যাচে বসুন্ধরার তিন ফুটবলার আঁখি খাতুন, তহুরা খাতুন এবং শামসুন নাহার সিনিয়রকে খেলানো হয়। এসএসসি পরীক্ষা আগেরদিনই শেষ হয় তাদের। এ জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি দলের প্রথম ম্যাচে খেলতে পারেননি তারা। দলের আরেক গোলরক্ষক মাহমুদা আক্তারও পরীক্ষার্থী ছিলেন। তবে তাকে এই ম্যাচে খেলাননি কোচ। আঁখি, তহুরা ও শামসুন নাহার প্রত্যেকেই জানান, পরীক্ষার কারণে তারা দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে পারেননি। ফলে ফিটনেস এখনও ফিরে পাননি তারা। তার মানে ‘আনফিট’ অবস্থাতেই তাদের রবিবার অভিষেক হয় বসুন্ধরার জার্সিতে। এদের মধ্যে আঁখির ওজন যে বেশ বেড়েছে সেটা তার মুভমেন্ট দেখেই বোঝা গেছে। ম্যাচ শেষে কথা হয় বিজয়ী দলের অন্যতম জয়ের কারিগর মনিকা চাকমার সঙ্গে। যে কোন পর্যায়ের ফুটবলে তার সর্বশেষ হ্যাটট্রিক ছিল তাজিকিস্তানের বিপক্ষে, ২০১৬ সালে এএফসি অনুর্ধ-১৪ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে। কেমন লাগছে লীগে প্রথমবারের মতো হ্যাটট্রিক করে? মনিকার ভাষ্য, ‘অনেক ভাল লাগছে। লীগে খেলার জন্য অনেকদিনের প্রতীক্ষা ছিল। ম্যাচের আগে আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিপক্ষকে যত বেশি সম্ভব গোল দেয়া। হ্যাটট্রিক করে অনেক ভাল লাগছে, কারণ গত ম্যাচে একটিও গোল পাইনি।’ লীগে বসুন্ধরা সবচেয়ে শক্তিশালী দল। প্রতিপক্ষ দলগুলো কি একেবারেই দুর্বল হয়ে গেল না? ‘হ্যাঁ। তবে পুরোপুরি দুর্বল না। কারণ তারা আমাদের বিরুদ্ধে সারাক্ষণই নিচে নেমে খেলছে। এ জন্য আমাদের জন্য গোল করাটা অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে তারা যদি আক্রমণ করে খেলত বা ফিফটি-ফিফটি খেলা হতো, তাহলে ওদের বিরুদ্ধে খেলে এতগুলো গোল করলে আরও ভাল লাগত।’ গত সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন মনিকারা। এরপর আর কোন খেলা নেই। সেক্ষেত্রে এই মহিলা ফুটবল লীগে খেলাটা তাদের জন্য মন্দের ভাল বলেই মনে করেন মনিকা। জাতীয় দলে সেন্ট্রাল মিডফিল্ড পজিশনে খেলে অভ্যস্ত মনিকা। কিন্তু বসুন্ধরায় তাকে খেলতে হচ্ছে লেফট উইঙ্গার হিসেবে। তার ওই পজিশনে খেলছেন মিশরাত জাহান মৌসুমী। মৌসুমীকে তুলে নিলে মনিকাকে আবার দেখা যাচ্ছে সেন্ট্রাল মিডিফিল্ডে চলে আসতে। অন্য পজিশনে খেলতে গিয়ে কোন সমস্যা হচ্ছে কী? মনিকার জবাব, ‘না, আমি নতুন পজিশনে মানিয়ে নিয়েছি। কোন সমস্যা হচ্ছে না।’
×