ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক শিল্প ‘বড় ধরনের সঙ্কটে’ পড়েছে

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২ মার্চ ২০২০

পোশাক শিল্প ‘বড় ধরনের সঙ্কটে’ পড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনের মতো বাংলাদেশের পোশাক শিল্পও ‘বড় ধরনের সঙ্কটে’ পড়েছে মনে করছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের সভাপতি রুবানা হক বলছেন, পণ্যের ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির বিপরীতে ক্রেতাদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, সরবরাহ ঘাটতির কারণে অনেক কাঁচামালের দাম ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। দুয়েক দিনের মধ্যে তা ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যে ক্রয় আদেশ আসছে সেখানে এয়ার শিপমেন্টের মাধ্যমে চীন থেকে কাঁচামাল আনার শর্ত দিচ্ছেন ক্রেতারা। কিন্তু তারা এয়ার শিপমেন্টের খরচ হিসাবে রাখছেন না। চীনে গত জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে কাঁচামালের সঙ্কটের কথা শোনা যাচ্ছিল। এই শিল্পের ৩৮ রকমের কাঁচামালের ৩৩টিই চীন থেকে আসে। জানুয়ারিতে চীনা নববর্ষের ছুটির কারণে এমনিতেই কাঁচামাল আমদানি কম হয়। এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিভিন্ন দেশ চীনের সঙ্গে জাহাজ ও বিমান চলাচল কমিয়ে দেয়ায় সেই সঙ্কট আরও জটিল হয়ে ওঠে। সরকারের সরফ থেকে এতদিন বলা হচ্ছিল, সঙ্কট দীর্ঘায়িত না হলে বাংলাদেশ এ ধকল সামলে উঠতে পারবে। কিন্তু প্রায় দুই মাস পরেও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি প্রক্রিয়া চালু না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। রুবানা হক বলেন, সমুদ্র পথে আমদানি চালু হবে কিনা তা নিশ্চিত হতে চীনা কর্তৃপক্ষ আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছে। এই ধরনের পরিস্থিতি পোশাক খাতকে একেবারে শেষ করে দিচ্ছে। পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে কী যে হবে সেটা বলা মুস্কিল। তবে আমরা এখনও আশায় আছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হব। আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রফতানির দিক দিয়ে চীনের পরেই এখন বাংলাদেশের অবস্থান। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাংলাদেশ ৩৪.১৩ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা মোট রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশের বেশি। কিন্তু এ শিল্পের কাঁচামালের ৬০ শতাংশ চীন থেকেই কিনতে হয় বাংলাদেশকে। পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের নিট পোশাকের বেশ কিছু কাঁচামালের দেশীয় জোগান থাকলেও উভেন অনেকটাই আমদানি নির্ভর। কাঁচামাল সঙ্কটের বড় ধাক্কা লেগেছে ওভেন খাতে। এছাড়া গত এক মাস ধরে দেশীয় কাঁচামালের দামও বাড়তে শুরু করেছে। রুবানা হক বলেন, ব্লেজার বা এ ধরনের ভ্যালু এ্যাডেড পণ্যগুলো নিয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ এ ধরনের পোশাকের প্রায় সবটাই বিদেশী কাঁচামাল নির্ভর। ভ্যালু এ্যাডেড পণ্য তৈরি ও রফতানির ক্ষেত্রে আগামী ৩/৪ মাসের একটা শূন্যতা দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন বলেন, জিপার, বোতামসহ ফিলামেন্ট জাতীয় ইয়ার্নগুলোর দামও বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশীয় জোগানের ‘কারসাজি’। দেশের মিলগুলোতে তৈরি সুতার দামও প্রতি পাউন্ডে ১৫ থেকে ২০ সেন্ট বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে করোনাভাইরাসের কোন সম্পর্ক রয়েছে বলে আমি মনে করি না। কারণ তুলা আসে ভারত, উজবেকিস্তানের মতো দেশ থেকে। আর করনোভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীনে। নরসিংদীর আশা টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম বিল্লাহ চৌধুরী জানান, গত এক মাস ধরে সুতার বাজার ঊর্ধমুখী। প্রতি পাউন্ড সুতার মানভেদে ৫ টাকা থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। সুতার কাঁচামাল হিসাবে তুলার জোগানে ঘাটতি না হলেও মেশিনারিজপণ্যগুলো চীন নির্ভর। এখানে করনোভাইরাসের একটা প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সহ-সভাপতি খন্দকার লতিফুর রহমান বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে তার তিনটি শিপমেন্ট বাতিল হয়েছে। অন্য আমদানিকারদের পরিস্থিতিও একই রকম। এরকম চললে আগামী সপ্তাহ নাগাদ অনেক সুইং কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। পোশাক শিল্পের কাঁচামালের জন্য চীনের বিকল্প বাজার হিসেবে রয়েছে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, তুরস্ক ও থাইল্যান্ড। তবে এসব দেশের পণ্যের দাম চীনের তুলনায় বেশি হওয়ায় এখনই সেদিকে যাওয়ার কথা ভাবছেন না বলে জানান খন্দকার লতিফ।
×