ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১০৫ বলে ১৩ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ১২৬ রান করে ইনজুরিতে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ

নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন লিটন

প্রকাশিত: ০৮:০৭, ২ মার্চ ২০২০

  নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন লিটন

মিথুন আশরাফ ॥ জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ারে একটি সেঞ্চুরিই ছিল লিটন কুমার দাসের। রবিবার জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডেতে আরেকটি সেঞ্চুরি করলেন। হলো দুটি সেঞ্চুরি। এ সেঞ্চুরি আবার জাতীয় দলে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ইনিংসও হয়ে থাকল। ১০৫ বলে ১৩ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ১২৬ রান করে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ করেন লিটন। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। তার এই সেঞ্চুরিতেই বড় স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। ৬ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ৩২১ রানের স্কোর গড়ে। লিটনের এ অসাধারণ ইনিংসে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ স্কোরও গড়ে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম ১৭ ম্যাচে কোন হাফ সেঞ্চুরিও ছিল না লিটনের। ২০১৫ সালের জুনে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে লিটনের ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু হয়। সেই থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন হাফ সেঞ্চুরিও করে দেখাতে পারেননি। অবশেষে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরেই এশিয়া কাপে ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে সেঞ্চুরি পান। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন। দুবাইয়ে ১১৭ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১২১ রানের ইনিংস উপহার দেন লিটন। প্রশংসাও কুড়ান। দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় লিটন যে ইনিংসটি খেলেন তাতে সবখানে লিটনের নামই শুধু শোনা গেছে। এরপর লিটন বড় বড় ইনিংস খেলতে শুরু করেন। যেখানে টানা ১৭ ম্যাচে কোন হাফ সেঞ্চুরি ছিল না। সেখানে ১৮তম ম্যাচে সেঞ্চুরি করতেই রবিবারের আগ পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকান। সবকটিই সেঞ্চুরির কাছাকাছি থাকে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৮৩ রান, গত বছর মে মাসে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭৬ রান ও জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংস খেলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচটিতে লিটনের সেঞ্চুরির সুযোগ থাকেনি। তার সেঞ্চুরি হতে ৬ রান বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বাকি দুই হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারেননি লিটনই। জিম্বাবুইয়েকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওপেনিংয়ে খেলার সুযোগ পেয়েই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দেন লিটন। সেই সেঞ্চুরি আবার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস হয়ে গেল। ৩৪টি ওয়ানডে খেলে দুটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৮.৮৩ গড়ে ৮৯৪ রান করেন লিটন। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডেতে লিটন শুরু থেকেই মারমুখী হয়ে ব্যাটিং করতে থাকেন। ৪৫ বলেই হাফ সেঞ্চুরি করেন। এর মধ্যে ৬টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান। ৯৫ বলেই সেঞ্চুরিও করেন। ১০টি চার হাঁকান। দলের রান শুরুতে কম, ১০ ওভারে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৪৪ রান হলেও এরপর বাড়তে থাকে। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গে ৬০ রানের জুটি গড়েন। তামিম এই সময় আউট হওয়ার পর লিটনই হাল ধরেন। দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। তামিমের পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়েও ৮০ রানের জুটি গড়েন লিটন। যে ব্যাটসম্যানই এসেছেন, লিটনকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন। একদিকে হাল ধরেছেন। আরেকদিকে লিটন মারমুখী হয়ে খেলেছেন। এভাবে খেলতে থেকেই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটিও তুলে নেন লিটন। আট মাস পর হাফ সেঞ্চুরিটি এবার সেঞ্চুরিতে পরিণত করেছেন। পাঁচ মাস পর আবার সেঞ্চুরি করেন। দলের ৩ উইকেটে ২০৬ রান হয় ৩৬.২ ওভার থাকে, তখন লিটন আর টিকতে না পেরে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ করেন। আর যে রান নিতে পারছিলেন না। গত বছর বিশ্বকাপের পর লিটনের মাধ্যমে আবার ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির দেখা মিলল। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশেষ মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ১০২ রান করেছিলেন। সেই থেকে আরও সাতটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু কোন সেঞ্চুরির দেখা মিলেনি। এবার লিটনের মাধ্যমে সেঞ্চুরি মিলল। লিটনকে নিচের দিকেই নামানো হচ্ছিল। এবার লিটনকে ওপেনিংয়ে নেয়া হয়। আর নিতেই চমক দেখান তিনি। ডানহাতি এ ওপেনার প্রথম থেকেই মারমুখী হয়ে খেলেন। ব্যাটিং ঝড় তোলার ইঙ্গিত দেন। প্রথম ওভারের শেষ বলেই এমপফুকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ধুন্ধুমার ব্যাটিং শুরু করেন। এরপর একটু ঝিমিয়ে পড়ার পর আবার পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে এমপফুর বলেই বাউন্ডারি হাঁকান লিটন। তিনি যে একটি ছক্কা হাঁকান, সেটি তিরিপানোর বলে মারেন। ইনিংসের প্রথম ছক্কাও এটি। ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে তিরিপানোর করা লেগ স্টাম্পের হাফ ভলি বলকে কবজির কারুকাজে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেন লিটন। তার সামনে থাকে নিজের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে ক্যারিয়ারের একমাত্র ১২১ রানের সেঞ্চুরিকেও পেছনে ফেলার। সেঞ্চুরি করার পর আরও বিধ্বংসী হয়ে ব্যাটিং করতে থাকেন লিটন। তিরিপানোর করা দলের ৩৬তম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান লিটন। যুব বিশ্বকাপ খেলে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া তামিমকে আউট করা স্পিনার ওয়েসলি মাধেভেরের বলে স্লগ সুইপ করে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে আগের সেঞ্চুরিকেও পেছনে ফেলেন লিটন। ১২০ থেকে ১২৬ রানে চলে যান। তিনি যে চোট পেয়েছেন তা রান নেয়াতেই বোঝা যাচ্ছিল। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রান নিতে থাকেন লিটন। শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে ফিজিও’র সঙ্গে মাঠ ছাড়েন লিটন। আর তাকে নামতে হয়নি। তার এই সেঞ্চুরিতে অনুপ্রাণিত হয়ে বাকিরাও বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা করেন। তা পারেননি কেউই। মোহাম্মদ মিঠুন শুধু ৫০ রানের ইনিংস খেলেন। তবে প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই মারমুখী হয়ে খেলার চেষ্টা করেন। তাতে দলের স্কোরও অনেক বড় হয়। সব স্কোরের মধ্যে লিটনের স্কোরই জ্বলজ্বল করতে থাকে। ১২০ স্ট্রাইক রেটে রান করেন লিটন। তাতেই বোঝা যাচ্ছে কতটা আগ্রাসী ব্যাটিং করেছেন লিটন। তার এই সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে গড়া ৩২০ রানের আগের সর্বোচ্চ স্কোর পেছনে ফেলে নতুন সর্বোচ্চ স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। এ ব্যাটসম্যান নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন।
×