ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাবিহা রহমান

নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২ মার্চ ২০২০

নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন

সংস্কৃত শব্দ Yoga এর মানে হচ্ছে স্রষ্টার সঙ্গে এক হয়ে যাওয়া। টানটান করে শরীরের পেশিগুলোকে চাগিয়ে নেয়াটা আসলে হাজার বছর পূর্বে শরীর ও আত্মার প্রতি নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ আনতে মানুষ ভেবে বের করেছিল। এই নিয়ন্ত্রণ জীবন শক্তির ওপর, এক আধ্যাত্মিক শক্তির ওপর যাকে ‘কুদালিনি’ বলা হতো। যখন এই শক্তি শিরদাঁড়ার ভিত্তি থেকে শুরু হয়ে মাথায় পৌঁছায় তখন প্রসারিত সচেতনতা তথা আত্ম উপলব্ধি মানুষ অর্জন করতে পারে। প্র্যাকটিসের সঙ্গে সঙ্গে আত্ম উপলব্ধি সম্পন্ন মানুষ শুধু যে নিজের কুদালিনি বুঝতে পারে তা নয়। যোগ ব্যায়াম যেহেতু শরীরের সাতটি শক্তি কেন্দ্রে (চক্র) ঘোরে, এক সম্মিলিত সচেতনতাও মানুষ অনুভব করে, যার মাধ্যমে সে অন্য যে কারও ওপর চোখ স্থির করে তার আধ্যাত্মিক শক্তিও অনুভব করতে পারে। ৫-১০ মিনিট একা থাকার মতো একটি জায়গা খুঁজে বের করুন। একটি চেয়ার অথবা মেঝেতে সোজা হয়ে বসুন। এর আগে জুতা খুলে নিন। দুই হাতের তালু হাঁটুর ওপর রাখুন। হাফ বা ফুল পদ্মাসনে বসতে পারলে ভাল। চোখ বন্ধ করুন। চারপাশ থেকে মনোযোগ নিয়ে কেন্দ্রীভূত করুন আপনার শরীরের কেন্দ্র শিরদাঁড়ায়। এবার খুব ধীরে ধীরে সেটা নিয়ে আসুন শিশুকালে আপনার মাথার উপরের ও সামনের অংশে যেই নরম জায়গাটা ছিল সেখানে। চোখ বন্ধ করে আপনার ডান হাতের তালু দিয়ে সেই জায়গায় চাপ দিন। এবার আস্তে আস্তে তালু নিচে রেখে হাত ৬ ইঞ্চি উপরে ওঠান। এভাবে উপর নিচ করতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি আপনার মাথা ও তালুর মাঝখানে শক্তি অনুভব না করতে পারছেন। আপনি আপনার হাতের তালুতে এটি ঠাণ্ডা বা গরম হিসেবে অনুভব করবেন। মাথার হাত রাখা অংশে মনোযোগ আনুন, তারপর আগের মতো উরুতে হাত নিয়ে আসুন। আপনি বাম হাত দিয়েও ধাপ ৪ এর পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। এটি নির্ভর করে কোন হাতটি বেশি সংবেদনশীল তার ওপর। এভাবে ৫-১০ মিনিট বসে থাকুন। কোন চিন্তা মাথায় আসলে নিজেকে বলুন, আমি মাফ করে দিয়েছি বা এখন নয়। আস্তে আস্তে চোখ মেলুন। আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ যে কোন পরিবর্তন বা মনোযোগের ব্যতিক্রম বোঝার চেষ্টা করুন। আজকাল অনেকেই যোগ ব্যায়াম আর ধ্যানকে একত্র করে পালন করেন। ধ্যান হচ্ছে নিজের আত্মার মুক্তির লক্ষ্যে একাগ্র চিন্তা। মনকে কেন্দ্রীভূত করে, চেতনার গভীর থেকে গভীর স্তরে গিয়ে মনকে প্রশান্ত করার চেষ্টা। ধ্যান মুনি ঋষিরাই করেন বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু এর উপকারিতা যে কতটুকু জানেন না। আপনি যে কোন কঠিন কাজ করার পূর্বে ঠাণ্ডা মাথায় বসে ধ্যান করুন। কাজটি কিভাবে করবেন ভেবে নিন। দেখবেন কর্মক্ষেত্রে গিয়ে কাজটি কত সহজ হয়ে যাচ্ছে। আরেকটা উপকার হবে, আপনি দেখবেন আপনি কত সহজে কোন ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন (রাগ, ক্ষোভ সংবরণ), কারণ আপনি আপনার চিন্তাধারা সম্পর্কে আগে থেকেও বেশি সচেতন হয়ে গিয়েছেন। সময় ঠিক করা। প্রতিদিন নির্দিষ্ট করে কিছু সময় ধ্যান করুন। দিনে ২ বার করলে ভাল। যারা নিয়মিত ধ্যান করেন, তাদের চিন্তা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অন্য অনেকের থেকেই বেশি। ৫-১৫ মিনিট দিয়ে শুরু করে আস্তে আস্তে সময় বাড়াতে থাকুন। ভোরবেলা ধ্যানের উপযুক্ত সময়। দিনের শুরুতে মাথা শান্ত থাকে, দিনের কাজের চাপ তাই এর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না। বিকালে বিশ্রাম নিলে সন্ধ্যা বেলা মন শান্ত থাকে। তাই সেই সময়-ও করা যেতে পারে। অনেকে কাজের চাপ থেকে স্বস্তি পেতে দিনের মধ্যম প্রহরেও ধ্যান করেন। জায়গা নির্বাচন। নবীনরা অবশ্যই খুব শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ বেছে নিবেন। চেষ্টা করবেন টিভি, রেডিও, মোবাইল কিছুই যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। অফিসের কাজের চাপে, আশপাশের পার্ক বা বাগানে স্বল্প সময়ের জন্য ধ্যানে বসা যেতে পারে। আসন যেন জটিল না হয়। আপনাকে যে পদ্মাসনেই বসতে হবে, তা না। চেষ্টা করবেন সহজ আসন নিতে সেটা বসে, শুয়ে যেভাবে ইচ্ছা। শরীর কে শিথিল রাখতে হবে। হাত পা একেবারে মুক্ত থাকবে, কিছু ধরে রাখা যাবে না। নিজের শরীর কে বার বার শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শিথিল করে তুলুন। ধ্যানের অনেক রেকর্ডিং পাওয়া যায়। তা অনুসরণ করা যেতে পারে। একটি নির্দিষ্ট লাইন বা শব্দের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। হিন্দুরা মন্ত্র বা ওম মুখে বা মনে মনে উচ্চারণ করতে পারেন। যারা নবীন তারা নিজেদের নিশ্বাস গুনতে পারেন। ১ থেকে ১০, তারপর আবার ১০ থেকে ১। বিভিন্ন ছবি বা চেহারা আপনার মনকে অস্থির করে তুললে এমন একটি জায়গার কথা চিন্তা করুন যা আপনাকে শান্তি দেয়। মন শান্ত করা। প্রথম প্রথম আপনি নিজের মনকে একটি নির্দিষ্ট জিনিসের প্রতি কেন্দ্রীভূত করুন। আপনার মন ট্রেইন্ড হয়ে গেলে পরবর্তী ধাপ হবে শুধু মনকে পরিষ্কার করা, কোন কিছুর ব্যাপারেই মনকে নির্দিষ্ট না করা। পূর্বের ধাপগুলোতে একটি নির্দিষ্ট ব্যাপারে ফোকাস করার পর চিন্তাটি তাড়িয়ে দিতে পারেন অথবা চিন্তাটি ভাল কি মন্দ না ভেবে নিরপেক্ষতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করুন, আসতে দিন ও যেতে দিন যত দিন না পর্যন্ত আপনার মন একেবারে শান্ত না হয়। ধ্যান ও যোগ ব্যায়াম আমাকে করতেই হবে, এমন মানসিকতা নিয়ে করলে কোন লাভ নেই। প্রথমে নিজের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করুন। এর উপকারী দিকগুলোর প্রতি নিজেকে ও নিজের পরিবারকে বোঝান। ছোটদের অল্প বয়স যেমন ১২-১৩ থেকে অভ্যাস করালে এর ফলাফল আরও দীর্ঘ ও ভাল হবে। আপনার দৈনন্দিন করা দীর্ঘ ও একঘেয়ে কাজগুলো দেখবেন কত হালকা মনে হচ্ছে। নিজের শরীর, মন ও আত্মার উন্নয়ন দেখে আপনি নিজেই অবাক হয়ে থাকুন। তাই অল্প করে শুরু করুন, নিজের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। সুস্থতার এক নতুন উপলব্ধি আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে।
×