ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

সফল উদ্যোক্তার গল্প

প্রকাশিত: ১২:০৭, ১ মার্চ ২০২০

সফল উদ্যোক্তার গল্প

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের (এসএমই) অবদান এখন দৃশ্যমান। এ খাতে নারীরা অনেক বেশি এগিয়ে। বর্তমানে মেয়েরা স্বনির্ভর থাকতে পছন্দ করে। আর তাই সংসার ও সন্তান সামলিয়ে বুটিকসের কাজ করাই নির্ভরযোগ্য মনে হয়েছে শামীম আরা উর্মি নামের মেয়েটির। যার হাতের তৈরি পোশাক চলে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বাবা চাকরিজীবী বিধায় মেয়ে চাকরি করবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিল বাবার। কেননা দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে উর্মি বড়। তাহলে কেন ব্যবসা করছেন উর্মি? উত্তরে যা বলল- একটা প্রজেক্টে পার্টটাইম কাজ করেছি কিছুদিন। তারপর একটি এ্যাডফার্মে ছিলাম বছর দুই। এরপর আমার পছন্দের মানুষটির সঙ্গে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ির মত না থাকায় চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। বাবা ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন। তিনি খুব চাপা স্বভাবের হওয়ায় কোনদিন মুখ ফুটে কিছু বলেননি। শুধু ভাবতাম কি করব, কি করা যায় যাতে দুই পরিবারই সন্তুষ্ট থাকে। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম আমার কাপড় চয়েস খারাপ না তাহলে একবার এইটা নিয়ে ট্রাই করি। ২০১৬ সালের জুন মাসে হাজার তিনেক টাকা ছিল হাতে জমানো সেটা দিয়ে কিছু এক কালারের কাপড় কিনে ফেলি। নিজেই ডিজাইন করে ওয়ান পিস এর কাজ শুরু করি। কাজগুলো দেখার পরে প্রতিবেশী ভাবীরা খুব পছন্দ করল। এক সপ্তাহে তিনটা বিক্রি হলো। তাদের দেখে বেশ কয়েকজন অর্ডার করল। এভাবেই চলছিল। দেখলাম শ্বশুর শাশুড়ী খুব খুশি। শাশুড়ী অনেক সাংসারিক কাজ থেকে অব্যাহিত দিতেন। ব্যবসায়িক পরিবারের এই এক সুবিধা। এরপর তো আশপাশে অনেকেই বলা শুরু করল তুমি একটা শপ নাও। খুব ভাল সেল হবে। কিন্তু প্রথমে কাজগুলো আমি একা করতাম, কিছু কাজে আমার মা হেল্প করতেন। এরপর আমার প্রডাকশন নিয়ে শপ ওপেন করলাম। দেখলাম আমাদের শহর বরগুনা জেলায় বাচ্চাদের ভাল পোশাক পাওয়া যায় না। সেটা নিয়ে আমার প্রডাকশন শুরু করলাম। শ্বশুরকে বলায় সে ভরসা করে কিছু আর্থিক হেল্প করলেন। ঢাকায় বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে ঘুরে শপের প্রডাক্ট কালেক্ট করলাম। শুরু হলো আমার প্রাতিষ্ঠানিক পথচলা। প্রচুর কষ্ট হয়েছে কারণ আমার বেবির বয়স ছিল আড়াই বছর। মার্কেটগুলোতে ঢুকতে চাইত না। প্রচ- বিরক্ত করত। প্রথম দিকের সেই এডজাস্ট হওয়ার দিনগুলো মনে পড়লে এখনও পানি চলে আসে চোখে। যাই হোক, একসময় ভাবলাম আমার প্রোডাক্ট কেন এ শহরের বাইরের মানুষকে জানাচ্ছি না? অনলাইনে একটা পেইজ খুললাম। খুব ভাল রেসপন্স পেয়েছি কিছুদিন পরে আমার পেইজটা আমি হারিয়ে ফেললাম। আইডি হ্যাক হলো। মাস চারেক আগে আবার খুলেছি, ‘রুহীর ঝুড়ি’ নামে। এখন পর্যন্ত ৪৫০ অর্গানিক লাইক আছে এবং বেশির ভাগই আমার রেগুলার কাস্টমার। বর্তমানে উর্মির শপে প্রায় ৮জন মহিলা কাজ করছে। এভাবে অনেক মেয়ে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে আরও অনেক মেয়েকে স্বাবলম্বী করছে। উর্মি এখন তার নিজের চাহিদা, সন্তানের বায়না পূরণ করে সংসারেও সহযোগিতা করতে পারছে। অধিকাংশ মেয়েদের প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অনেক বাধা আসে। উর্মির চলার পথও মসৃণ ছিল না তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি তাকে সফলতা এনে দিয়েছে। মফস্বলে বড় হওয়া মেয়েটি স্বপ্ন দেখেছিল পুরো বাংলাদেশে তার তৈরি পোশাক ছড়িয়ে যাক। আজ সে সফল হয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের অবদান ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ। টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অর্থনীতির মূল স্রোতে নারীদের অংশগ্রহণ একান্তভাবেই অপরিহার্য। দেশের দারিদ্র্য হ্রাসকরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গেও বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে নারীদের অংশগ্রহণের মাত্রা এখনও অপ্রতুল। অর্থনীতি কর্মকা-ে নারীদের অংশগ্রহণে বেশকিছু বাধা বিরাজমান। নারী সমাজের নিষ্ঠা, মনোনিবেশ, উদ্ভাবনী শক্তি ও শ্রম নিপুণতা আমাদের বিস্মিত করে। বিশেষ করে মাইক্রো ক্রেডিট কার্যক্রম ও পোশাক শিল্পে নারীদের অব্যাহত অংশগ্রহণ শিল্পায়নে প্রভূত ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশে নারী উদ্যোক্তাদের এসএমই খাতে অধিকতর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে (এসএমই) নারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে আর্থিক সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
×