ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্জন হাতছানি দিচ্ছে মাশরাফি-মুশফিককেও

মাইলফলকের সামনে তামিম-রিয়াদ

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ১ মার্চ ২০২০

মাইলফলকের সামনে তামিম-রিয়াদ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ গত বছর জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে সর্বশেষ ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দলে যারা খেলেছেন, সেখানে মোট ৭টি পরিবর্তন এবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম ২ ম্যাচের ওয়ানডে দলে। ৩ ম্যাচ সিরিজের সবগুলোই সিলেটে, সেখানে ক্রিকেটারদের মধ্যে পারফর্মেন্স দেখিয়ে নিজেকে নিয়মিত করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অভিজ্ঞ তারকাদের যেমন নিজেকে ফিরে পাওয়ার চ্যালেঞ্জ আছে, তেমনি বেশ কিছু মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৭ হাজার রানের সামনে দাঁড়িয়ে ওপেনার তামিম ইকবাল। ৬৮৯২ ওয়ানডে রানের মালিক তামিমের সে জন্য প্রয়োজন এ সিরিজে আর মাত্র ১০৮ রান। আর একটি ইনিংস ব্যাট করলেই দেশের জার্সিতে মুশফিকুর রহিমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ২০০ ইনিংস ব্যাট করার কীর্তি গড়বেন তিনি। আর মাত্র ৬ রান করলেই ওয়ানডেতে চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৪ হাজার রান হবে। দেশের পক্ষে সর্বাধিক ২৬৬ উইকেটে ওয়ানডেতে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার। ৩ ম্যাচে ৪ উইকেট নিতে পারলেই তিনি ছাড়িয়ে যাবেন জেমস এ্যান্ডারসন, মাখায়া এনটিনি ও হরভজন সিংদের। ২ উইকেট নিতে পারলে ওয়ানডের ইতিহাসে পঞ্চম অধিনায়ক হিসেবে ১০০ উইকেট শিকারের বিরল কীর্তিও গড়বেন তিনি। আর ৫৬ রান করতে পারলে দেশের মাটিতে তামিমের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দেশের মাটিতে ৩ হাজার রানের মাইলস্টোন স্পর্শ করবেন মুশফিক। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ। এই ভেন্যুতেই হবে তিন ম্যাচের সবগুলো। ৭ মাস পর আবার ওয়ানডে ক্রিকেটে ফেরা বাংলাদেশ দলে আছে ব্যাপক পরিবর্তন, আছে নানাবিধ চ্যালেঞ্জও। সেই চ্যালেঞ্জসমূহ যেমন দলগত, তেমনি ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগতও। আর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্টে বাদ পড়া অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহর জন্য চ্যালেঞ্জ কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো স্বল্প পরিসরের ক্রিকেটে তার ওপর যে ভরসা রেখেছেন তার প্রমাণ দেয়ার। তিনি বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে সে টেস্ট দলের বাইরে। নিজের ভবিষ্যত ভাবনার বিষয়টি তার ওপরেই ছেড়ে দিয়েছি। আমি তাকে সাদা বলের ক্রিকেটে অনেক বেশি দেখতে চাই। সে ৪৯ টেস্ট খেলেছে এবং বাংলাদেশের জন্য চমৎকার একজন পারফর্মার। এই মুহূর্তে তার জায়গা নেই (টেস্ট দলে)। কিন্তু সে সাদা বলের ক্রিকেটে আমাদের অন্যতম মূল খেলোয়াড়।’ তাই রিয়াদের স্বল্প পরিসরের ক্রিকেটে নিজেকে সেরা পারফর্মার হিসেবে আবারও প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ এবার। ইতোমধ্যে ১৮৫ ওয়ানডে খেলে ৩৯৯৪ রান করেছেন তিনি। মাত্র ৬ রান করতে পারলেই চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডেতে ৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন তিনি। রিয়াদের ওপরে আছেন- ৬১০০ রান করা মুশফিক, ৬৩২৩ রান করা সাকিব আল হাসান ও ৬৮৯২ রান করা তামিম। সেদিক থেকে সবচেয়ে চমকপ্রদ এক মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে তামিম। আর মাত্র ১০৮ রান করতে পারলেই প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁবেন তিনি। গত বছর অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে দেশের স্বীকৃত সেরা ব্যাটসম্যান হয়েও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তামিম। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর সমালোচিত এ বাঁহাতি ওপেনার শ্রীলঙ্কা সফরে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলও হোয়াইটওয়াশ হয়েছে এবং তিনিও ব্যাট হাতে ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দী থেকেছেন। চরম সমালোচনার কারণে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট থেকেই সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন তিনি। তবে এর মধ্যে ওয়ানডে খেলেনি দল। কিন্তু তামিম ফিরেছেন টেস্ট ও টি২০ ক্রিকেটে। রানে ফেরার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছেন তিনি। এবার ওয়ানডেতে নিজেকে পুরনো রূপে ফিরে পাওয়ার চ্যালেঞ্জ দেশের সর্বাধিক ওয়ানডে রানের এই মালিকের। ২০৪ ওয়ানডেতে ২০২ ইনিংস ব্যাট করে ৬৮৯২ রান করা তামিম এখন বিশ্বের ওয়ানডে ইতিহাসে ৪২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৭ হাজার রানের মাইলফলকের সামনে। তার আগে এশিয়ার ২৪ জন ব্যাটসম্যান এই গৌরব দেখিয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেটে। সেদিক থেকে তামিম হবেন ২৫তম এশিয়ান। ওয়ানডেতে রানে ফেরার পাশাপাশি সেই গৌরবটা অর্জনেরও মোক্ষম সুযোগ দেশের মাটিতে তারজন্য। অবশ্য দেশের জার্সিতে ১৯৯ ইনিংস ব্যাট করেছেন, সিলেটে এক ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামলেই মুশফিকের পর (২০২ ইনিংস) দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ২০০ ইনিংসে ব্যাটিং করার গৌরব অর্জন করবেন তিনি। দেশের মাটিতে অবশ্য সর্বাধিক ৩২৬০ রানের মালিক তিনি। তারপরে দ্বিতীয় স্থানে আছেন মুশফিক দেশের মাটিতে ১০৮ ইনিংসে ২৯৪৪ রান করে। আর মাত্র ৫৬ রান করতে পারলেই মুশফিক দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে দেশে ৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন। ওয়ানডে ইতিহাসে দেশের মাটিতে বিশ্বের ৩৭তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি গড়বেন মুশফিক। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজটি ফেরার লড়াই অধিনায়ক মাশরাফির। বিশ্বকাপে বল হাতে চরমভাবে ব্যর্থ মাশরাফি মাত্র ১ উইকেট নিতে পেরেছিলেন। সবমিলিয়ে সর্বশেষ ১০ ওয়ানডেতে সাকুল্যে সেই উইকেটটিই পেয়েছিলেন তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কার্ডিফে। জনি বেয়ারস্টোকে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচে পরিণত করেছিলেন। এরপর আর উইকেটের দেখা পাননি টানা ৫ ম্যাচে। ইনজুরির কারণে শ্রীলঙ্কা সফরে খেলেননি। সর্বশেষ এই পারফর্মেন্সগুলো তাই মাশরাফিকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে। তার অধিনায়কত্ব নিয়েও তুমুল আলোচনা হচ্ছে। গুঞ্জন আছে এবারই নেতৃত্বের শেষ মিশন তার। তাই কঠিন চ্যালেঞ্জে দেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বাধিক ২৬৬ উইকেটধারী ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত মাশরাফি। তবে এই মাশরাফিই অধিনায়ক হিসেবে বিরল কিছু মাইলফলকের একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে। জিম্বাবুইয়েকে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতলে প্রথম বাংলাদেশী অধিনায়ক হিসেবে দলকে ৫০ জয় এনে দেয়ার কৃতিত্ব দেখাবেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট শিকারের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি। দলকে ৮৫ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ৯৮ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন। আর মাত্র ২ উইকেট নিতে পারলেই বিশ্বের ওয়ানডে ইতিহাসে মাত্র পঞ্চম অধিনায়ক হিসেবে ১০০ উইকেট শিকারের বিরল কীর্তি গড়বেন তিনি। সেক্ষেত্রে তিনি নাম লেখাবেন অধিনায়ক হিসেবে ওয়াসিম আকরাম (১৫৮), শন পোলক (১৩৪), ইমরান খান (১৩১) ও জ্যাসন হোল্ডারদের (১০১) সঙ্গে। এই সিরিজে মাত্র ৭ উইকেট নিতে পারলে তিনি দেশের মাটিতে সর্বাধিক ১৪৯ উইকেট (৯৯ ওয়ানডে) শিকার করা সাকিবকে পেছনে ফেলবেন। মাশরাফি দেশের মাটিতে ১০০ ওয়ানডেতে ১৪৩ উইকেট নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ওয়ানডে ইতিহাসে পঞ্চম বোলার হিসেবে দেশের মাটিতে ১৫০ উইকেট শিকারের অনন্য রেকর্ডও গড়বেন। দেশের মাটিতে ১৫০-এর বেশি ওয়ানডে উইকেট আছে- শন পোলক (১৯৩), ব্রেট লি (১৬৯), গ্লেন ম্যাকগ্রা (১৬০) ও মুত্তিয়া মুরলিধরনের (১৫৪)। ৩ ম্যাচে এই ৭ উইকেট শিকার করতে পারলে মাশরাফি পেছনে ফেলবেন ডোনাল্ড (২৭২), এ্যান্ডারসন (২৬৯), আব্দুল রাজ্জাক (২৬৯), হরভজন সিং (২৬৯) ও মাখায়া এনটিনিকে (২৬৬)। ছুঁয়ে ফেলবেন জ্যাক ক্যালিসকে (২৭৩ উইকেট)। এ্যান্ডারসন, হরভজন ও রাজ্জাককে পেছনে ফেলতে অবশ্য মাত্র ৪ উইকেট প্রয়োজন তার। প্রত্যাবর্তন কি রেকর্ডে রাঙাতে পারবেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ আগের মতো লড়াকু মনোভাব দেখিয়ে?
×