ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমি কি চোর?’ ক্ষুব্ধ মাশরাফির পাল্টা প্রশ্ন

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১ মার্চ ২০২০

‘আমি কি চোর?’ ক্ষুব্ধ মাশরাফির পাল্টা প্রশ্ন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে আজ প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে। এ সিরিজ মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্বের শেষ সিরিজ হতে পারে। সিরিজের আগেই উত্তেজনা ছড়িয়ে গেছে। উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছেন খোদ অধিনায়ক মাশরাফি। আত্মসম্মানের এক প্রশ্ন উঠতেই ক্ষোভ দেখা গেল মাশরাফির কণ্ঠে। যে মাশরাফি সাংবাদিকদের প্রশ্ন খুব সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, তিনিই ক্ষুদ্ধ হয়ে গেলেন। বলে বসলেন, প্রশ্ন করে বসলেন, ‘আমি কি চোর?’ অবসর নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে গেছে। তা সামলেছেন। পারফর্মেন্স নিয়েও কম কথা হয়নি। তাতেও কখনই নিয়ন্ত্রণ হারাননি মাশরাফি। এবার যখন আত্মসম্মানবোধের প্রসঙ্গ উঠল, তখন ক্ষুদ্ধ হয়ে গেলেন। এত ব্যর্থতার পর এখন পারফর্ম করাটা আত্মসম্মানের ব্যাপার কি না? এমন প্রসঙ্গ উঠতেই শনিবার বললেন, ‘আত্মসম্মান বা লজ্জা! আমি কি চুরি করি মাঠে? আমি কি চোর? খেলার সঙ্গে লজ্জা, আত্মসম্মান, এসব আমি মেলাতে পারি না। এত জায়গায় চুরি-চামারি হচ্ছে, তাদের লজ্জা নাই? আমি মাঠে এসে উইকেট না পেলে লজ্জা লাগবে? আমি কি চোর?’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি কি বাংলাদেশের হয়ে খেলছি, নাকি অন্য কোন দেশের হয়ে যে লজ্জা পেতে হবে। আমি পারিনি, আমাকে বাদ দিয়ে দেবে। ব্যাপারটি সিম্পল। কিন্তু লজ্জা-আত্মসম্মানবোধ আমি কার সঙ্গে দেখাতে যাব? আমি তো বাংলাদেশের হয়ে খেলছি। আমি কি বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষের মানুষ? এখন যে কেউ পারফর্ম না করতেই পারে। তার যদি নিবেদন না থাকে, শৃঙ্খলা না থাকে, সেসব নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। সমালোচনা হতেই পারে। উইকেট না পেলে। পুরো বিশ্ব জুড়েই হয়। কিন্তু আত্মসম্মানবোধ বা লজ্জা, এ বিষয়টার সঙ্গে আমি একমত নই। উইকেট না-ই পেতে পারি। আমার সমালোচনা আপনারা করবেন। সমর্থকরা করবে। কিন্তু লজ্জা পেতে হবে কেন? উইকেট না পেলে সমালোচনা হবেই। কথা যখন আসে লজ্জা-আত্মসম্মানের তখন আমার প্রশ্ন থাকে। সমালোচনা করুক, সমস্যা নেই। কিন্তু ক্রিকেট খেলতে এসে আমি কি আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে এসেছি? আমি কি অন্য দেশের হয়ে খেলছি নাকি চুরি-চামারি করছি?’ বিশ্বকাপে ব্যর্থ হন মাশরাফি। এরপর আর বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলেননি। গত বছর জুলাইয়ের পর আর জাতীয় দলের হয়ে নামা হয়নি। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ ছিল। তাতে চোটের জন্য খেলতে পারেননি। এবার যখন জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে খেলতে নামছেন, তখন চ্যালেঞ্জ থাকছে। সর্বশেষ নিজের ১০ ম্যাচে মাত্র ১ উইকেট পান মাশরাফি। পারফর্ম করার চাপ থাকছে। সঙ্গে এ সিরিজই নেতৃত্বের শেষ সিরিজ, এমন যে বলা হয়েছে, পারফর্ম দিয়ে নিজেকে সামনে তুলে ধরার চ্যালেঞ্জ থাকছে। সাত মাস পর আবার বোলিং করতে নেমে নিজেকে প্রমাণ করার ব্যাপারও থাকছে। অথচ দেশের ক্রিকেটে মাশরাফি যে কত বড় নাম, কতটা প্রেরণাদায়ক তা সবারই জানা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অবশ্য একবার মাশরাফির অধিনায়কত্বে শেষ সিরিজ ইঙ্গিত দেয়ার পর এ রকম কিছু বলেননি বা বোঝাননি বলে জানান। কিন্তু ধরেই নেয়া হচ্ছে এ সিরিজই মাশরাফির অধিনায়কত্বে শেষ সিরিজ। আর তাতে করে সিরিজ নিয়ে উত্তাপও ছড়াচ্ছে। যখন মাশরাফিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে অধিনায়কত্বে শেষ সিরিজের কথা, তখন আবার যেন ক্ষুদ্ধ হয়ে কথাবার্তা বললেন মাশরাফি। অবসর নিয়েও বারবার প্রশ্ন উঠাতে রাগান্বিতও হন মাশরাফি। এমন তিক্ত সময়ের মধ্যে যে এর আগে কখন পড়েননি। এবারই প্রথম পড়লেন। আর তাই মাশরাফি শনিবার বলেন, ‘এত প্রশ্ন থাকতে বারবার অবসরের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন কেন? অবসরের বিষয়ে কিছু বললে বোর্ডকে বলব। একই প্রসঙ্গে বারবার আসা বিরক্তিকর।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘সবারই একটা বয়স আছে। যখন মুশফিক, তামিমরাও এই বয়সে যাবে। তখন নতুন খেলোয়াড়দের সঙ্গে পারফর্মেন্স মেলাবেন। ক্লিয়ার (অধিনায়কত্বে শেষ সিরিজ) করার কী আছে? সব তো বোর্ড প্রেসিডেন্ট বলেছেন। আমার সঙ্গে তার কি কথা হয়েছে তা আমার মনে হয় না উচিত আপনাদের বলা। ক্রিকেট বোর্ড যা বলেছে সেটা তো আপনারা জানেনই। সেটাই তো আপনাদের জন্য যথেষ্ট। আমি আর কী বলতে পারি? সেটা তো আমি জানি না। এখন আসলে আপনাদের তো আমার বলার কিছু নেই। যদি থাকত তবে বলতাম। যেহেতু বোর্ড প্রেসিডেন্ট এটা বলেছেন, সেটা তো আপনারা জেনেছেন। এটা আবার আমার মুখ থেকে শোনার দরকার কী?’ নিজে ভাল করার চেষ্টা করে যাবেন, সেই কথাও বলেছেন মাশরাফি। জানিয়েছেন, ‘দলে থাকব কি-না সেটা আমার ভাববার বিষয় নয়। ওটা ভাববে ম্যানেজমেন্ট। আমার নতুন করে প্রমাণের কিছু নেই। নিজের প্রমাণ দিতে খেলিও না। খেলি দেশকে জেতাতে। একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমি সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করব। তবে গ্যারান্টি দিয়ে কেউ ভাল খেলতে পারে না।’ জিম্বাবুইয়েকে সহজেই ধবলধোলাই করার কথাই বলা হচ্ছে। বারবার যে তা করা যাচ্ছে। কিন্তু মাশরাফি বিষয়টিকে এভাবে দেখতে রাজি নন। তিনি জিম্বাবুইয়ের কাছে দল হারতেও পারে। এমন ভাবছেন, ‘জিম্বাবুইয়ের কাছেও আমরা হারতে পারি। এমন নয় যে, আমরা জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে আগে কখন হারিনি। এমনকি যদি আমরা শেষ চার-পাঁচটা ম্যাচের দিকে তাকাই তাহলে দেখব হারতে হারতে জিতেছি আমরা। তার মানে আমরা জিম্বাবুইয়ের কাছে ওই ম্যাচে হারতে পারতাম বা তারা আমাদের হারাতে পারে।’ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ শেষে পাকিস্তানেও একটি ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টের আগে একটি ওয়ানডে ম্যাচও রয়েছে। যদি সেই ওয়ানডেতে রাখা হয়, তাহলে কী করবেন? মাশরাফি প্রস্তুত খেলতে। তিনি বলেছেন, ‘আমি জানি না জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে এই সিরিজের পর কি হবে। তবে বাংলাদেশ দলের প্রয়োজনে আমাকে যেখানে ডাকা হবে সেখানেই আমি যাব। আমি মনে করি ক্রিকেট বোর্ড আমাদের অভিভাবক। বোর্ড আমাদের কথা একবার দুইবার নয়, ১০বার ভেবে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা বোর্ডকে রেসপেক্ট করি। আমাদের উচিত বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ভাবার।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘পাকিস্তানে গিয়ে যদি আমাদের কোন ক্রিকেটারের কোন কিছু হয়, তবে তাদের পরিবারের চেয়ে বোর্ড সবচেয়ে কষ্ট পাবে। উনারা এইটা দশবার ভেবেই সিদ্ধান্ত নেন এবং আমাদের হান্ড্রেড পারসেন্ট নিরাপত্তা তারা নিশ্চিত করবেন। আমি মুশফিকের সিদ্ধান্তকে শতভাগ সম্মান করি। আসলে বোর্ড থেকেই এই না যাওয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যখন পাকিস্তান সফরের জন্য সিলেকশন হবে আমাকে যদি ডাকে তাহলে যাব।’
×