ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচ্ছন্ন গ্রাম পরিচ্ছন্ন শহর স্লোগানে বছরব্যাপী কার্যক্রম

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১ মার্চ ২০২০

পরিচ্ছন্ন গ্রাম পরিচ্ছন্ন শহর স্লোগানে বছরব্যাপী কার্যক্রম

মশিউর রহমান খান ॥ সাড়ম্বরে দেশের সকল পৌরসভায় একযোগে পালিত হবে মুজিববর্ষ। পরিচ্ছন্ন গ্রাম পরিচ্ছন্ন শহর স্লোগানে বছরব্যাপী প্রতিটি পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রতিটি পৌরসভায় নির্দিষ্ট স্থানে বসানো হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংবলিত ম্যুরাল। মূলত স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতির জনকের অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এই উদ্যোগ নিচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিচ্ছন্নতার ওপর আয়োজন করা হবে বিশেষ প্রতিযোগিতার। প্রতিটি ওয়ার্ড কমিশনারকে পরিচ্ছন্নতার জন্য দেয়া হবে পুরস্কার। তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত লাইট ইমিটিং ডায়াটের (এলইডি) তৈরি বিশেষভাবে দৃশ্যমান ডিসপ্লে পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি পৌরসভা বছরব্যাপী মুজিববর্ষ পালনের জন্য ইনোভেটিভ উদ্যোগ গ্রহণ বা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য সকল পৌরসভাকে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদিকে মুজিববর্ষ পালনে সরকার কর্তৃক বিশেষ অর্থ বরাদ্দ প্রদানের দাবি জানাচ্ছেন মেয়ররা। সাড়ম্বরে বর্ষটি পালনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে থোক বরাদ্দ প্রদানের জোর দাবি জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের মোট ৩২৯ পৌরসভায় ভবনের করিডোরের দু’পাশের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সমৃদ্ধ ম্যুরাল স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক ধানম-ি পুরাতন ৩২ নাম্বারের বঙ্গবন্ধু ভবনের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। ম্যুরাল স্থাপনের অনুমতির পর এ নিয়ে কিভাবে ও কোন নক্সায় তা স্থাপন করতে হবে সকল পৌরসভাকে তা নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, পরিচ্ছন্ন গ্রাম পরিচ্ছন্ন শহর স্লোগান বাস্তবায়ন করে মুজিবর্ষে দেশের সকল পৌরসভাকে শতভাগ পরিচ্ছন্ন রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধামনমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছে অনুযায়ী এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মূলত মুজিববর্ষকে সামনে রেখে দেশের প্রতিটি পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে। মূলত মুজিববর্ষে প্রতিটি ওয়ার্ড ও প্রতিটি এলাকা থাকবে শতভাগ পরিচ্ছন্ন। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নবে পৌর কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাড়ম্বরে মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চায় দেশের প্রতিটি ঘরে বর্ষ পালনের অনুষ্ঠানকে ছড়িয়ে দিতে। এরই অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো প্রতিটি পৌরসভায় উৎসব হিসেবে পালন করতে ও সফল করতে পৌরসভার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সেজন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এদিকে যে ওয়ার্ড কমিশনার তার ওয়ার্ডকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ পরিষ্কার রাখবেন ও বর্ষ পালনকে স্বার্থক করতে সহায়তা করবেন তাকে পুরস্কার ও সনদ প্রদান করবেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সরকারের নেয়া বিভিন্ন বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রদানের সময় এসব কমিশনারদের মধ্য থেকেই বিদেশ ভ্রমণে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে। এর বাইরে জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে বা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে মনোনয়নের বেলায় তাদের তালিকায় অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে নিজস্ব ব্যয়ে মুজিববর্ষ পালনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে বছরব্যপী চলা এ উৎসব অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশ কিছু পৌরসভার ক্ষেত্রে তা বহন করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে। কর্মকর্ত কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারছে না দেশের ১৯৯ পৌরসভা। এছাড়া অনেক পৌরসভার মুজিববর্ষ পালনে সরকারের মুজিববর্ষ এ নির্দেশনা শতভাগ মানতে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সূত্র জানায়, মুজিববর্ষ পালনের জন্য যাচাইবাছাই শেষে নির্দিষ্ট কিছু কাজে দেশের সকল পৌরসভাকে অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা যায় কি না তা ভেবে দেখবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে দেশের সকল পৌরসভা মুজিববর্ষ যথাযথভাবে গুরুত্বের সঙ্গে পালনের জন্য সরকার কর্তৃক বিশেষ থোক বরাদ্দ প্রদান করার দাবি জানিয়েছেন পৌর মেয়রগণ। বছরব্যাপী এ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ পরিকল্পনা বা নির্দেশনাও চান তারা। একইসঙ্গে দৃশ্যমান এলইডি ডিসপ্লেতে বঙ্গবন্ধুর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ছবি, ভাষণ উক্তি বা ঘটনা কোন পদ্ধতিতে ও কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে ও তা নিয়মের মধ্যে এনে একটি নীতিমালা তৈরি করা ও একইসঙ্গে নিজস্ব সৃষ্টিশীল বিষয়েও নির্ধারিত বিষয় সংযোজন কারার জন্য পৌরসভার নিজস্ব ইনোভেটিভ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণের নীতিমালার আওতায় না আনলে এলইডি ডিসপ্লেতে ইচ্ছে অনুযায়ী বা বিভিন্ন ভুল তথ্য প্রচারের আশঙ্কা থেকে যেতে পারে বলে এ দাবি করেছেন মেয়রগণ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব শায়লা ফারজানা জনকণ্ঠকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বর্ষ হিসেবে সরকার গৃহীত মুজিববর্ষ ২০২০ পালন উপলক্ষে আমরা নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছি। আমরা চাই এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি পৌরসভার প্রতিটি কোনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নানা স্মৃতি সংবলিত কীর্তি ও জীবনের নানা ইতিহাস ছড়িয়ে পড়ুক। যথাযথ মর্যাদায় এ বর্ষটি পালনের জন্য আমরা প্রতিটি পৌরসভায় সাড়ম্বরে পালনের জন্য ইতোমধ্যেই আমরা ঢাকা বিভাগের পৌরসভার মেয়রদের নিয়ে সমন্বয় সভার মাধ্যমে বিশেষ বৈঠক করেছি। এ সময় মেয়রদের মুজিববর্ষের গৃহীত কর্মপরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তার জন্য নানা নির্দেশনা ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে নিজস্ব উদ্যোগেও পৌরসভার ইনোভেটিভ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। মুজিববর্ষ যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে ও সুন্দরভাবে পালনের জন্য পর্যায়ক্রমে দেশের সকল পৌরমেয়রকে নিয়ে বৈঠক করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, পরিচ্ছন্ন গ্রাম পরিচ্ছন্ন শহর স্লোগানে সাড়ম্বরে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ বা মুজিববর্ষ পালন করব। দেশের প্রতিটি গ্রামে ও প্রতিটি ঘরে এ বর্ষ পালনের উৎসব ছড়িয়ে দেয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে আমরা দেশের প্রতিটি পৌরসভায় তাদের নিজস্ব উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করব। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি ও ইতিহাস সমৃদ্ধ ম্যুরালও প্রতিটি পৌরসভার দ্বারে প্রতিস্থাপন করা হবে। ম্যুরাল স্থাপনের অনুমতির জন্য রাজধানীর ধানম-িতে বঙ্গবন্ধু ভবনের বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। অনুমতি প্রাপ্তির পর প্রতিটি পৌরসভায় তা স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া সারাবছর বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা কাহিনী ও নীতি আদর্শ নতুন প্রজন্মসহ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত লাইট ইমিটিং ডায়াটের (এলইডি) তৈরি বিশেষভাবে দৃশ্যমান ডিসপ্লে পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তা স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছি। মূলত স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতির জনকের অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া মুজিববর্ষে সকল পৌরসভাকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত পরিচ্ছন্ন গ্রাম পরিচ্ছন্ন শহর স্লোগান বাস্তবায়ন করা হবে। প্রতিটি পৌরসভাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুনত্ব এনে পরিচ্ছন্ন রাখতে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারকে কাজ করতে বলা হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিচ্ছন্নতার ওপর আয়োজন করা হবে বিশেষ প্রতিযোগিতার।
×