ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রন্থমেলা প্রতিদিন

ছন্দ আর অন্তঃমিলে কবিতার সঙ্গে কাটল কয়েক দিন

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১ মার্চ ২০২০

ছন্দ আর অন্তঃমিলে কবিতার সঙ্গে কাটল কয়েক দিন

মনোয়ার হোসেন ॥ ছন্দ আর অন্তঃমিলে কবিতার সঙ্গে কেটে গেল কয়েকটি দিন। যাপিত জীবনের সঙ্গে কল্পনার মিশেলে আশ্রিত উপন্যাসের কাহিনীতে কেটে গেল বিভোর সময়। মেলা থেকে সংগৃহীত গল্পগ্রন্থটি আছে পাঠকের পড়ার অপেক্ষায়। রাজনীতিবিষয়ক বইয়ের পাশাপাশি বহুমাত্রিক বিষয়ের প্রবন্ধ পাঠে সমৃদ্ধ হয়েছে আপন মনন। ভিন দেশের অজানা প্রকৃতি, সংস্কৃতি থেকে যাপিত জীবনকে জানার তৃষ্ণা মিটিয়েছে ভ্রমণকাহিনী। এভাবেই বইপ্রেমীদের অনুসন্ধিৎসু মনকে আলোড়িত করে শেষ হলো সুন্দরের প্রতিচ্ছবিময় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। একটি ছোট্ট বইয়ের রঙিন মলাটে অন্তর্ভুক্ত বিষয়কে পৃষ্ঠা উল্টে পড়ার মতোই শনিবার শেষ হলো ২৮ দিনের বইমেলাটি। ভাষা চেতনার সাক্ষ্যবহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গকৃত মাসব্যাপী বই উৎসবটির সূচনা হয়েছিল দোসরা ফেব্রুয়ারি। শনিবার শেষ দিনে মেলার দ্বার খুলেছে সকাল ১১টায়। বেলা ১টা পর্যন্ত চলমান শিশুপ্রহরের ছিল খুদে পাঠকদের আনাগোনা। সিসিমপুর চত্বরের প্রিয় চরিত্র ইকরি, হালুম, টুকুকি ও শিকুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে বইয়ের সঙ্গে গড়েছে মিতালী। অভিভাবকের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে ছড়াগ্রন্থ, কমিক্স, রূপকথার গল্প থেকে কল্পবিজ্ঞান, কিশোরদের উপযোগী ভাষা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বই সংগ্রহ করেছে এই পাঠকেরা। দুপুরের পর বদলে যায় মেলার দৃশ্যপট। আসতে থাকেন পরিণত বয়সী পাঠকেরা। বিকেল গড়ানো সন্ধ্যায় নামে বইপ্রেমীদের জনস্রোত। শেষ দিনে দেখা গেছে। এ বছর একাডেমির হিসাবে বইমেলায় বিক্রির রেকর্ড দেখানো হলেও হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানই এবার বইমেলায় গতবছরের তুলনায় কম বলে জানিয়েছে। একাডেমি তথ্যানুযায়ী, এবার রেকর্ড পরিমাণ বই বিক্রি হয়েছে এবারের বইমেলায়। এ বছর একাডেমির হিসাবে ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। গতবছর মেলায় ৮০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। ২০১৮ সালের মেলায় বই বিক্রি হয়েছিল ৭০ কোটি টাকার। নতুন বই প্রকাশের ক্ষেত্রেও অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে এবার নতুন বই এসেছে চার হাজার ৯১৯টি। তবে এ হিসাব বাংলা একাডেমির তথ্য কেন্দ্রে জমা পড়া বইয়ের। এর বাইরেও মেলায় নতুন বই প্রকাশ হয়েছে। এ বছর বাংলা একাডেমির বিচারে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ৭৫১টি। গতকাল শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী দিনে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এ বছর সর্বোচ্চ বই প্রকাশিত হয়েছে কবিতার। সংখ্যার হিসাবে এক হাজার ৫৮৫টি। এ ছাড়া এ বছর গল্প ৬৪৪, উপন্যাস ৭৩১টি, প্রবন্ধ ২৭১টি, গবেষণা ১১২, ছড়া ১১১, শিশুতোষ ২০৩টি, জীবনী ১৪৯, রচনাবলী ৮, মুক্তিযুদ্ধ ১৫২, নাটক ৩৪, বিজ্ঞান ৮৩, ভ্রমণ ৮২, ইতিহাস ৯৬, রাজনীতি ১৩, স্বাস্থ্য ৩৬, রম্য ৪০, ধর্মীয় ২০, অনুবাদ ৫৭, অভিধান ১৪, বৈজ্ঞনিক কল্পকাহিনী ৬৭, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ১৪৪ এবং বিবিধ বিষয়ে বই এসেছে ২৬৮টি। সন্ধ্যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর সমাপনী অনুষ্ঠান মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’-এর সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ‘কথাপ্রকাশ’-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে আবুল হাসনাত রচিত ‘প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য’ গ্রন্থের জন্য ‘জার্নিম্যান বুকস’, মঈনুস সুলতান রচিত ‘জোহানেসবার্গের জার্নাল’ গ্রন্থের জন্য ‘প্রথমা’ প্রকাশনকে এবং রফিকুন নবী রচিত ‘স্মৃতির পথরেখা’ গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্সকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়। ২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘অভিযান’ (এক ইউনিট), ‘কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড’ (২-৪ ইউনিট) এবং ‘বাংলা প্রকাশ’ (প্যাভেলিয়ন)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়। মেলায় তিন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন শনিবার গ্রন্থমেলায় তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। বাঙ্গালা গবেষণা থেকে প্রকাশ হয়েছে কাজী সুলতান জাহান রুবির ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ ‘সুদূরের পিয়াসি’, অধ্যাপক দিলরুবা জলিল শাহিনের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ‘একাত্তরের কিশোরী সূর্যসারথি’। বই দুটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে একঝাঁক লেখকদের আগমন ঘটে। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাজী সুলতানা জাহান রুবি, অধ্যাপক দিলরুবা জলিল শাহিন, আফজালুল বাশার, কোয়েল তালুকদার, আফাজ উদ্দিন, ইকবাল সোহেল, সবুর আহমেদ, আনোয়ারা শিরিন, আকতারুজ্জামান, এ্যাডভোকেট আশিক আল জলিল, তারিক আল জলিল, হ্যাপী রহমান, মাকসুদা খানম, ইকবাল আজম মোর্শেদ সোহেল, ইফফাত আরা বেগম, শাফিন ও অরণি।
×