ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতি ও ভোগান্তি কমবে;###;দ্রুত স্বচ্ছতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত হবে;###;প্রথমে চালু হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে;###;২০২১ সালের মধ্যে সকল ক্ষেত্রে

দিনশেষ লাল ফিতার ॥ আসছে ই-ফাইলিং

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১ মার্চ ২০২০

দিনশেষ লাল ফিতার ॥ আসছে ই-ফাইলিং

তপন বিশ্বাস ॥ লাল ফিতার দৌরাত্ম্য শেষ। ফাইল আটকে রেখে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থ আদায়ও আর সম্ভব নয়। কথা বলুন, আলাপ করুন, ব্যাখ্যা দিন ইত্যাদি বলে নিচ থেকে ওপরে আবার ওপর থেকে নিচে ফাইল চালাচালির যুগও শেষ। ব্রিটিশ আমল থেকে ফাইল চালাচালির সংস্কৃতিতে মানুষের ভোগান্তি, সিদ্ধান্তে স্থবিরতা-দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে আসছে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এবার সকল ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম চালানো হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে ই-ফাইলের মাধ্যমে সকল কার্যক্রম চালানো হবে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সকল ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং চালু করার প্রস্তুতি রয়েছে। এতে স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সূত্র জানায়, ই-ফাইলিং-এর জন্য প্রতি মন্ত্রণালয়ে রিসিভিং ডেস্ক থাকবে। একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটির কাছে যে কোন বিষয়ে আবেদন বা ফাইল জমা দিতে হবে। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় কাগজ বা তথ্য নিশ্চিতের পর আবেদন বা ফাইল রিসিভ করা হবে। প্রয়োজনীয় তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করে একটি সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে তা জমা রাখা হবে। কোন আবেদন জমা রাখার পর সর্বোচ্চ একবার সেবাগ্রহীতার কাছে যৌক্তিক কোন তথ্য বা কাগজ চাইতে পারবেন। এছাড়া কখনও তথ্য ঘাটতি বলে ফাইল ঘুরানো বা আলাপ করুন বলে ফাইল নিচে (ডাউন করা) পাঠানো যাবে না। এছাড়া প্রতিটি ফাইল সিরিয়াল অনুযায়ী চলবে। সিরিয়াল অনুযায়ী ফাইল নিষ্পত্তিও করতে হবে। সে ক্ষেত্রে জমাকৃত সকল ফাইল তিন সিরিয়ালে ভাগ করা হবে। জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, অফিসিয়াল এবং ব্যক্তিগত। প্রতিটি সিরিয়ালের ফাইল ক্রমিক নাম্বার অনুযায়ী নিষ্পন্ন হবে। কোন অবস্থায় ক্রমিক নাম্বার বাইপাস করে অন্য ফাইল নিষ্পত্তি করা যাবে না। তবে কোন যৌক্তিক ডকুমেন্টের প্রয়োজন দেখা দিলে তা সেবাগ্রহীতাকে তৎক্ষণাৎ জানাতে হবে এবং সেবাগ্রহীতা যথাযথ ডকুমেন্ট সরবরাহ করলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা সম্পন্ন করতে হবে। ই-ফাইলিং কার্যক্রম চালু হলে দুর্নীতি ৯০ শতাংশ কমে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এছাড়া কাজের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোন ফাইল সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিংয়ের সুযোগ থাকবে। তাতে কোন কর্মকর্তা অযৌক্তিক কারণে ফাইল আটকে রাখতে পারবেন না। কোন কর্মকর্তা ফাইল নিষ্পত্তিতে দেরি করলে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে জবাব সন্তোষজনক না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা পর্যন্ত হতে পারে। এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তাকে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এর পর পর্যায়ক্রমে সকল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে, সেই মন্ত্রণালয়ে ই-ফাইলিং কার্যক্রম শুরু হবে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সকল অধিদফতর/পরিদফতর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভায় ই-ফাইলিং চালু করা হবে। সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সকল সরকারী অফিসে ই-ফাইলিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে কিছু কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রশাসন, ভূমি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ডিজিটালইজড পদ্ধতিতে করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং চালু করা হবে। এদিকে বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনে ই-নথি তথা ই-ফাইলিং চালু করা হচ্ছে। সম্প্রতি সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঘোষণা করেছেন, আরও দ্রুত নাগরিক সেবা নিশ্চিতে ১ মার্চ থেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে (সিসিক) চালু হচ্ছে ই-নথি কার্যক্রম। এ লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুই দিনব্যাপী ই-নথি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে মেয়র আরিফুল হক বলেন, ১ মার্চ থেকে মেয়র দফতরের সব সেবা কার্যক্রম ই-নথিতে ডিজিটাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ক্রমান্বয়ে সিসিকের সব কার্যক্রম ই-নথির আওতায় আনা হবে। এজন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে সিসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ই-নথি চালু করতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনেও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকও নির্দেশ দিয়েছেন, ই-নথি দ্রুত বাস্তবায়নের। খুলনার জেলা প্রশাসক অধিকাংশ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছেন ই-নথির মাধ্যমে। তিনি তার অধিনস্থ সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ই-নথির মাধ্যমে বিভিন্ন নির্দেশ দিয়ে থাকেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, সকল ক্ষেত্রে ই-নথি চালু হলে কাজের গতি অনেকাংশে বেড়ে যাবে। বাড়বে প্রশাসনের স্বচ্ছতা। সাধারণ মানুষও দ্রুত সেবা পাবেন। কমবে দুর্নীতিও। রাজধানীর পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনে কাজের গতি বাড়বে। এমনকি মাঠ প্রশাসনে কোন সিদ্ধান্ত দেয়ার প্রয়োজন হলে মন্ত্রণালয় তা দ্রুত দিতে পারবে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ যে কোন ফাইল চাইলে এক দিনে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
×