স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ইট কাঠ কংক্রিটের শহরের মাঝেই একখন্ড সবুজ অরণ্য। সেখানে ফলজ, বনজ আর ওষধি গাছের সমারোহ। পাখির অভয়ারণ্য, নদীর বয়ে চলা। জায়গায় জায়গায় বসার ডিভান। সব মিলে যেন ছোট এক ইকো পার্ক। সাথে এক টুকরো আঙিনা। সেখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দু’ থেকে সাত বছর বয়সী শিশুদের দিনভর প্রাণোচ্ছ্বল উপস্থিতি। দিনটিতে তাদের ছিলো না কাঁধে বই খাতার বিশাল বোঝা নিয়ে স্কুল অভিমুখে ছুটে চলার ব্যস্ততা, ছিল না ক্লাস রুমে বসে একের পর এক শিক্ষকের দেয়া পাঠ গ্রহণ করার মতো গৎবাধা নিয়ম। ছিল সবুজ প্রকৃতি। যেখানে থেকে ওরা করেছিল সৃজনশীলতা ও মননশীলতার চর্চা। যে যা পেরেছে তাই করে দেখিয়েছে। যেখানে ছিল না কোনো প্রতিযোগিতা। মাটি দিয়ে দিনভর তারা তৈরি করেছে পুতুল, মানুষের অবয়বসহ নানা ধরনের ভাষ্কর্য। আঙিনায় সারি দিয়ে সাজানো শিশুদের হাতে মাটির তৈরি আরেক ভুবন যেন। কেউবা খেলাধুলা ও কেউ আবৃত্তিতে মাতে। হাসি, আড্ডা আর গানে আনন্দ খুঁজে নিয়েছে। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে লেখাপড়ার বাইরে এমন একটি দিন পেয়ে ওরা যেন ভুলে গিয়েছিল প্রতিদিনের রুটিন বাধা জীবনের কথা। এমনিভাবে কাটে সারাবেলা। স্বগতকণ্ঠের ২১ শিশু শিল্পীর নিয়ে বর্ণিক যশোর শনিবার আয়োজন করে উঠোন খেলা। যশোর শহরের পালবাড়ির গাজীর ঘাট রোডে ছোট্ট সোনামনিদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ‘মাটি খেলা চড়ইভাতির দিন’ নামে ব্যতিক্রমী এক অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বর্ণিকের পরিচালক চিত্রশিল্পী সোহেল প্রাণন, স্বগতকণ্ঠের পরিচালক কাজী শাহেদ নওয়াজ, চারুপীঠ সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ, মহিলা পরিষদ যশোরের অর্থ সম্পাদক মাহমুদা খানম, সাহিত্যিক সালমা তালুকদার, সাহিত্য পরিষদ যশোরের সহসাধারণ সম্পাদক শামীমা ইয়াসমিন শম্পাসহ স্বগতকণ্ঠের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন আলোকচিত্রী আরাফাত এইচ শোভন। অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে সোহেল প্রাণন বলেন, ২০১০ সালে শিশুদের নিয়ে প্রথম এমন আয়োজন করা হয়। এ পর্যন্ত ১০টি আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। বই পড়েই আসলে শিক্ষা শেষ হয়ে যায় না। বর্তমান সময়ের শিশুরা লেখাপড়ার ভারে ভারাক্রান্ত। তাদের জীবনে অবসর বলে কিছু নেই। একটি দিন ওরা নিজেদের মতো করে কাটাতে পারলো, যে দিনটিতে ওদের সৃজনশীলতা এবং মননশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ওদের মধ্যে যে গুণগুলো আছে তাই ওরা ওদের কাজ দিয়ে প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন সংগঠন এমন উদ্যোগ নিতে পারে। তাতে শিশুদের সৃজনশীলতা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটবে। স্বগতকণ্ঠের পরিচালক কাজী শাহেদ নওয়াজ বলেন, প্রতিদিনের রুটিন থেকে বেরিয়ে ওরা শিল্প চর্চায় একটি দিন কাটালো। আসলে এটা ছিল একটা বনভোজন। কিন্তু সে বনভোজনের মধ্যে ওরা খেলার ছলে কিছু শিখলো। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বর্ণিক পরিচালক ও চিত্রশিল্পী সোহেল প্রাণন এবং স্বগতকণ্ঠের পরিচালক কাজী শাহেদ নওয়াজ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: