ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরে ৫ দিনব্যাপী চলন নাটুয়ার চতুর্থ যাত্রা উৎসব

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১ মার্চ ২০২০

নাটোরে ৫ দিনব্যাপী চলন নাটুয়ার চতুর্থ যাত্রা উৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা সংলগ্ন লালপুর উপজেলার ধুপইল শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে ৫ দিনব্যাপি চলন নাটুয়ার চতুর্থ যাত্রা উৎসব। আয়োজনের শুক্রবার রাতে প্রথমদিন ধুপইলের নাট্য সংগঠন চলন নাটুয়ার পরিবেশনায় যাত্রাপালা ‘মা মাটি মানুষ’ মঞ্চস্থ হয়। ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় রচিত বিখ্যাত এই যাত্রাপালাটির নির্দেশনা দেন সুজিত ঠাকুর। পালার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন আবদুল মালেক, দুলাল চৌধুরী, মানিক, লালন, বজলু মোল্লা, শহিদুল, দুলাল, নজরুল, সুকুমার, রহিম, আলী আহমেদ, ইমামুল, বিফল, মিঠু, সাদেক, খোয়াজ, সামসুল আরও অনেকে। পালাটি শিব ঠাকুর, মহিম গাঙ্গুলী, সাবিত্রী, অসীম, ইন্দ্র নামের চরিত্রগুলোর মাধ্যমে ফুটে ওঠে ঘটনাপ্রবাহ। ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের অনেক আগের রচনা হলেও সময় উপযোগী করে মঞ্চস্থ করা হয়। অসীমের ষড়যন্ত্রের কারণে সাবিত্রীদের মতো নারীরা সম্ভ্রম হরায় এবং ইন্দ্রদের মতো অনেককেই দুর্নীতিবাজের খাতায় নাম লেখাতে হয়। শত প্রতিকুলতা সত্ত্বেও শিবঠাকুররা দেশের জন্য কাজ করে, কুমুদ মুখার্জীর মতো সৎ অফিসারেরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। কাহিনীতে আরও প্রতিফলিত হয়, গৌরিপুরের মহিম গাঙ্গুলী নারী লোলুপ এবং দুর্নীতিগ্রস্থ সমাজপতি। তার ভাই অসীম গাঙ্গুলী আরও জঘন্য চরিত্রের। মহিম-অসীম দুই ভাই মিলে শিব ঠাকুরের ভাইকে কুমন্ত্রণা দিয়ে লোভের ফাঁদে ফেলে। শিবুর ছোটোভাই ইন্দ্রকে দিয়ে টাকা চুরি করায় আবার পুলিশকেও খবর দেয়। ইন্দ্রকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেলে অসীম ইন্দ্রের স্ত্রী সাবিত্রীকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে। জানতে পেরে শিব ঠাকুর তার সমুদয় জমি বিক্রির টাকা জমা দিয়ে ভাইকে ছাড়িয়ে আনে। মহিম গাঙ্গুলী নিজের ভুল স্বীকার করে গ্রামের সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার অঙ্গীকার করে। এইভাবেই এগিয়ে যায় যাত্রাপালার কাহিনী।রাত সাড়ে আটটায় শুরু হয়ে চলে গভীর রাত পর্যন্ত। দয়ারামপুর ধুপইলের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সাধারণ মানুষদের নিয়ে প্রতদিন অভিনয় অনুশীলন করে চলন নাটুয়া। আশেপাশের নাট্যসংগঠনগুলোকে নিয়ে চলন নাটুয়া নাটক যাত্রাকে আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হোসেন। বিভিন্ন সংগঠনকে উৎসাহিত করেন তিনি। সে জন্য প্রতিবছর ধীরাজ সুর নাট্যজন সম্মাননা দিয়ে থাকেন। এছাড়া এ বছর নাট্যজন সম্মাননা দেয়া হয় নাটোরের নাট্যব্যক্তিত্ব সুবিধ কুমার মৈত্র এবং রাজশাহী কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এম এ মালেক। ৫ দিন ব্যাপি চলন নাটুয়ার চতুর্থ যাত্রা উৎসব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন নাটোর-১ (লালপুর- বাগাতিপাড়া) আসনের সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুল। তিনি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে চলন নাটুয়ার যাত্রা আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সংসদ সদস্য ধুপইলের নব নির্মিত মঞ্চের ৭১ মঞ্চ নামে নামকরণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক নাট্য গবেষক কাজী সাইদ হোসেন দুলাল বলেন, হাজার বছরের প্রাচীন বিনোদন যাত্রাপালা হারিয়ে যেতে বসেছে। চলন নাটুয়া দুর্দিনে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি চলন নাটুয়ার আন্দোলনকে শ্রদ্ধা জানাই। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন এসপি আকরামুল হোসেন, বাগাতিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গকুল, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের ইলামিত্র অঞ্চলের সমন্বয়কারী মশগুল হোসেন ইতিসহ আরও অনেকে। উৎসবের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন নূরে আলম সিদ্দিকী।
×