ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রবির তালিকাভুক্তি শেয়ারবাজারের গভীরতা বাড়াবে

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১ মার্চ ২০২০

রবির তালিকাভুক্তি শেয়ারবাজারের গভীরতা বাড়াবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির চাহিদা থাকলেও ২০০৯ সালের পরে এ জাতীয় কোন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। তবে দীর্ঘদিন পরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে শেয়ারবাজারে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বহুজাতিক মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি আজিয়াটা। এই কোম্পানির তালিকাভুক্তির মাধ্যমে শেয়ারবাজারের গভীরতা বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, রবির শেয়ারবাজারে আসা ভাল খবর। এমন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির মাধ্যমে শেয়ারবাজারের পিলার শক্ত হয় এবং বাজারের গভীরতা বাড়ে। একইসঙ্গে অন্যান্য ভাল কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হয়। তাই করে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও রবিকে তালিকাভুক্ত করা যৌক্তিক হবে। বৃহৎ স্বার্থে এই ছাড় দেয়া উচিত। গত ২১ ফেব্রুয়ারি রবি আজিয়াটার শেয়ারবাজারে আসার কথা ঘোষণা দিয়েছে মূল মালিক মালয়েশিয়ার কোম্পানি আজিয়াটা মালয়েশিয়া। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে শেয়ারবাজারে আসতে চায়। এ কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে ইস্যুর মাধ্যমে ৩৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা সংগ্রহের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এতে সহযোগিতা বা ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করবে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পারফরমেন্স খুব ভাল। সুশাসনের কারণে ওই কোম্পানিগুলোর ব্যবসা যেমন ভাল, একইভাবে লভ্যাংশ প্রদানের হারও দেশীয় কোম্পানিগুলোর থেকে অনেক বেশি। এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নগদ লভ্যাংশে বিশ্বাসী। প্রতারণার জন্য বা প্রকৃত ব্যবসায়িক চিত্র আড়াল করার জন্য বোনাস শেয়ার দেয় না। এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, কমিশন রবি আজিয়াটা ও ওয়ালটনের মতো কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে আন্তরিক। এ জাতীয় কোম্পানিকে তালিকাভুক্তিতে কমিশন প্রয়োজনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে প্রস্তুত। এছাড়া ওইসব কোম্পানির ফাইল গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। আগামীতে এ জাতীয় কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোসহ স্টক এক্সচেঞ্জকে আহ্বান করেন তিনি। ভাল কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে কমিশনের আন্তরিকতার প্রমাণ পাওয়া গেছে ওয়ালটনের ক্ষেত্রে। এ কোম্পানিটিকে অন্যসব কোম্পানির থেকে অনেক কম সময়ে বিডিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া এই কমিশনই রবিকে তালিকাভুক্তিতে আসার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে। বাংলাদেশে বহুজাতিক ইউনিলিভার, বাংলালিংকের মতো দেশীয় সিটি গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ, আকিজ গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানি ভাল ব্যবসা ও মুনাফা করছে। এছাড়া স্কয়ার গ্রুপের অ-তালিকাভুক্ত ভাল কোম্পানি রয়েছে। শেয়ারবাজারে কর সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ওইসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত আগ্রহী না। এদের আগ্রহী করার জন্যও কেউ কাজ করছে না। বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স পরিপালন ও কর ফাঁকি দেয়া বন্ধ হওয়ার ভয়ে বড় এবং ভাল কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসতে অনাগ্রহী। এছাড়া শেয়ারবাজারে ভাল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না বলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হলেও স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শুরু করে কেউ এই সমস্যারোধে দৃশ্যমান সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। যাতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও তালিকাভুক্তির বাইরে রয়ে গেছে। এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ডিএসইর আরেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, রবির মতো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে সাধুবাদ জানাই। এমন কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের। এ জাতীয় কোম্পানির আগমনে শেয়ারবাজার শক্তিশালী হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত হবে। তাই রবি এবং ওয়ালটনের মতো কোম্পানিকে যত তালিকাভুক্ত করা যাবে, ততই উপকৃত হবে শেয়ারবাজার। অজিয়াটার তথ্য মতে, দেশে রবির সেবাগ্রহীতার সংখ্যা এখন ৪ কোটি ৭৩ লাখ, যা দেশের মোট গ্রাহক সংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। মালয়েশিয়ার কোম্পানি আজিয়াটা রবির ৬৮ দশমিক ৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক।
×