ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লীর সহিংসতা নিয়ে সাংবাদিক ও লেখক রঘু কারনাডের বিশ্লেষণ

পরিকল্পিত ও ঠাণ্ডা মাথায় হামলা

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১ মার্চ ২০২০

পরিকল্পিত ও ঠাণ্ডা মাথায় হামলা

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে গত সপ্তাহে সবচেয়ে সহিংস ও ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এতে ৪২ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে প্রায় তিন শত। নিহতদের বেশিরভাগই মুসলিম। বেশিরভাগ হতাহত হয়েছে পুলিশের গুলিতে। জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে মুসলিমদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে একদল হিন্দু জঙ্গী। দাঙ্গায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট, গাড়ি ও কয়েকটি মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। মসজিদের ওপর হনুমানের পতাকা লাগিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। খবর নিউ ইয়র্কারের। মসজিদের ইমাম ও সাংবাদিকদের মারধর করা হয়েছে। বেছে বেছে মুসলিমদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ধ্বংস করা হয়েছে। অনেকের কাপড় খুলে তার ধর্মীয় পরিচয় দিতে হয়েছে। অনেকের চোখ এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে দুষ্কৃৃতিকারীরা। হতাহতরা বেশিরভাগই গরিব পরিবারের। নিহতদের অনেককে কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। এসব ঘটনায় কয়েক জনকে আটক করেছে দিল্লী পুলিশ। দিল্লীর মুসলিম প্রধান অনেক এলাকায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। গত কয় দিনে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। শুক্রবারও অনেক নারী, পুুরুষ ও শিশু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এলাকা ছাড়ে। ইতোমধ্যে আহত ও নিহতদের পরিবার পিছু ক্ষতিপূরণের কথাও ঘোষণা করেছে ভারত। নিহতদের ২ লাখ টাকা সরকারী ক্ষতিপূরণ ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লীর যে এলাকাগুলোতে সহিংসতা হয়েছে সেই এলাকার বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সচেষ্ট হতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত রবিবার ভারতে অবস্থানকালে সহিংসতার শুরু। ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার সম্প্রতি বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সিএএ পাসের পর থেকেই ভারতজুড়ে আন্দোলন চলছে। আইনটিতে মুসলিমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। রবিবার দিল্লী বিজেপির নেতা ও সাংসদ কপিল মিশ্রের এক উস্কানিমূলক বক্তব্যের পর কার্যত দাঙ্গার সূচনা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দিল্লী অবস্থানকালে মুসলিমদের ওপর এ হামলাকে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার পদক্ষেপ বলে সাফাই গাইছে বিজেপি। ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক রঘু কারনাড বলেন, আমি ও কয়েকজন সাংবাদিক রবিবার থেকেই দিল্লীর আশপাশ চষে বেড়িয়েছি। সেখানে দেখেছি হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবকরা এসব হামলায় অংশ নিয়েছে। পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে ছিল। সাংবাদিকরাও সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। হামলার ধরন দেখে মনে হয়েছিল-রবিবারের হামলা অত্যন্ত পরিকল্পিত ও ঠা-া মাথার ছিল। দিল্লী দাঙ্গা নিয়ে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ওআইসি ও জাতিসংঘ গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মুসলিমদের ওপর আঘাতের আবহে ভারত সরকারের উচিত ধর্মের ঊর্ধে উঠে তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দেশটি জানায়, নৃশংস এবং লাগামছাড়া সহিংসতা ঠেকিয়ে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে মোদি সরকার স্রেফ ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফানি দুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে দেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে পুলিশকে আরও ধৈর্য ধরতে হবে। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ গভীরভাবে ভারতে চলমান পরিস্থিতির প্রতি খেয়াল রাখছে। অবশ্য ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অভিযোগ মানতে নারাজ। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা থেকে ওয়াশিংটনকে বিরত থাকতে বলেছে।
×