ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিমত ॥ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ- শেখ হাসিনার উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ১ মার্চ ২০২০

অভিমত ॥ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ- শেখ হাসিনার উন্নয়ন

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দারুণভাবে সন্তুষ্ট বাংলাদেশের জনগণ। সম্প্রতি এ কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)। শেখ হাসিনার সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এক জরিপ চালায় আইআরআই। আর এতেই বেরিয়ে এসেছে সরকারের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের গভীর আস্থার বিষয়টি। জনমত জরিপে দেখা যায়, সরকারের প্রতি সমর্থন এক বছরে অনেক বেড়েছে। অন্যদিকে আরও কমেছে বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা। তবে জরিপে বলা হয়েছে, সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়লেও দুর্নীতি ও বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৯ শতাংশ দুর্নীতিকেই বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আর ৩১ শতাংশ মনে করছেন, দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাদের জীবনে। অর্থনীতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। এক সময়ের অর্থনৈতিকভাবে মন্দা বাংলাদেশ আজ সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। এক দশক আগেও গ্রামাঞ্চলে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাত দেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটি গোষ্ঠী। অধিকাংশ ঘরবাড়ি ছিল মাটির দেয়াল অথবা পাটকাঠি বা বাঁশের বেড়া আর খড়ের ছাউনির। অধিকাংশ অঞ্চল ছিল বিদ্যুতহীন। তবে সেই চিত্র আর নেই। অধিকাংশ বাড়িঘর দাঁড়িয়ে আছে ইট-সিমেন্ট অথবা টিনের ওপর। জ্বলছে বিজলিবাতি। ক্ষুধা, দারিদ্র্য গ্রামাঞ্চল থেকে প্রায় বিতাড়িত। মঙ্গা শব্দটিও এখন শুধুমাত্র ইতিহাস। বদলে গেছে তলাহীন ঝুড়ির তকমাও। জঙ্গী-সন্ত্রাসীরা অস্তিত্ব সঙ্কটে। গণতন্ত্রের প্রাণ বাঁচিয়ে উন্নয়নের আলোয় ঝলমলে হয়ে উঠছে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।’ এ অর্জন এসেছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ‘উন্নয়নের জাদুকর’ দেশরতœ শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রমের হাত ধরে। আজ তার নেতৃত্বে গড়া মন্ত্রিসভার প্রথম বর্ষপূর্তি। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শপথ নেয়া মন্ত্রিসভার বর্ষপূর্তি ঘিরে রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে অতি সাধারণ মানুষ দেশের সার্বিক চিত্র পাল্টে যাওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন চমৎকারভাবেই। সরকার পরিচালনায় নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসে সৃষ্ট শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি শক্ত হাতে মোকাবেলা করে দেশকে অগ্রগতির মিছিলে শামিল করার পাশাপাশি সামনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্ষমতার দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করল আওয়ামী লীগ সরকার। টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে সাফল্য-ব্যর্থতার পরিমাপে সরকারের ঝুলিতে সাফল্যের পরিমাণ যে বেশি, তা তার সমালোচকরাও মানছেন। মাত্র এক বছরেই বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাই আগের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী তিনি। একটি দলের নেতৃত্বে টানা তিন মেয়াদে সরকার গঠন যে কোন দেশের জন্য নিশ্চয়ই বড় ঘটনা। একইভাবে মন্ত্রিসভা গঠনেও চমকে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার ৩১ জনই নতুন মুখ। চমকপ্রদ শুরুর কারণে প্রত্যাশাও বাড়ে। শুরুর মতো বছরের শেষটা ক্যাসিনো-জুয়াকা- এবং এর বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান সরকার সম্পর্কে জনমনে ইতিবাচক বার্তা দেয়। গত দশকের মতোই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থেকেছে। ফলে দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম সারা বিশ্বেই আলোচনায় ছিল। অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন প্রকল্প নেয়া এবং চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিও ভাল ছিল। আগের কয়েক বছরের সঙ্গে তুলনা করলে মামলা, রাজনৈতিক গ্রেফতার কিংবা নির্যাতন কম ছিল। অতীত সরকারগুলোর বছর পূর্তিতে ব্যর্থতা ও অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বিরোধী পক্ষ দেশব্যাপী ঝড় তুললেও এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। প্রথম বছরের হিসাব মেলাতে গিয়ে চরম বৈরী বিরোধী পক্ষও ব্যর্থতার প্রমাণ হাজির করতে পারেনি; বরং অধিকাংশ মানুষের মূল্যায়নে বেরিয়ে এসেছে সরকারের সঠিক পথে এগিয়ে চলার গল্প। জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধানও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। সরকার গণতন্ত্রের প্রাণ বাঁচিয়ে রেখে দেশের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। এ দেশে সাধ ও সাধ্যে, চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা খুব সহজ নয়। তবে দেশবাসী খোলা মনে প্রথম বছরের ভাল কাজের প্রশংসা এবং মন্দ কাজের সমালোচনা করলেও সরকারের ওপর তাদের আস্থা এতটুকুও কমেনি বরং বেড়েছে। দারিদ্র্য নিরসন ও বৈষম্য কমিয়ে উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এরই মধ্যে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদসহ পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে গ্রামকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রীয় দর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুত ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সব সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে মেগা প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণসহ ১০টি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করাই টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের অন্যতম টার্গেট। স্বপ্নের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এগুলোতে দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ। অবকাঠামো খাতের মধ্যে গত এক বছরে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ৩০ দশমিক ৬ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর অর্ধেকের বেশি এখন দৃশ্যমান। মেট্রোরেলের জন্য নির্মিত উড়ালপথে রেললাইন বসানো শুরু হয়েছে। বিমানের বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী বিদ্যুত প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ ও দোহাজারী-কক্সবাজার পথে নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি ভাল ছিল। বর্তমানে দেশে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট। এটি এ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়নের দিকনির্দেশ করে। বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ এবং বিদ্যুত সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ৯৫ শতাংশ। শেখ হাসিনা জনগণকে দেয়া সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেশকে বিশ্বসভায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ-শান্তিময় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। বিশ্বের কয়েকটি জরিপ প্রতিবেদনেও শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে। বছরটি ছিল সাফল্যের বছর। উন্নয়ন পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের ফলে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশ্বে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া পাঁচটি দেশের মধ্যে এখন বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’ বা তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অভিহিত করেছিলেন। যার মানে হচ্ছে, এখানে যত অর্থই ঢালা হবে, তলা না থাকায় কোন কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। সেই দেশের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা এসে বলে গেছেন- বাঙালী জাতির মেধা, পরিশ্রম আর একাগ্রতার মাধ্যমে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে একসঙ্গে কাজ করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার আগে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে কৌশিক বসু বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। লেখক : সাংবাদিক [email protected]
×