ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ওমরাহ পালনে নিষেধাজ্ঞায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিমান

করোনার ধাক্কায় এয়ারলাইন্স ও পর্যটন খাতে ধস

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 করোনার ধাক্কায় এয়ারলাইন্স ও পর্যটন খাতে ধস

আজাদ সুলায়মান ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দরুন দুনিয়াব্যাপী পর্যটনে ধস নেমেছে। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। করোনা আতঙ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের পর্যটন, ওমরাহ ও এয়ারলাইন্স খাতে। মোট কথা সব ধরনের পর্যটনে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। ইনবাউন্ড, আউটবাউন্ড ও ডমেস্টিক সব ফর্মেটেই পর্যটনের অবস্থা শোচনীয়। পর্যটনের প্রধান অবলম্বন এয়ারলাইন্স ও হোটেল মোটেল। শুধু করোনার দরুন এসবও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হোটেল মোটেলগুলো খদ্দেরের অভাবে হাহাকার করছে। এয়ারলাইন্সগুলোর লোড হ্রাস পেয়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। এরই মধ্যে হঠাৎ গত বৃহস্পতিবার থেকে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ওমরাহ পালনের ওপর। ওমরাহর ভর মৌসুমে এ ধরনের বিধিনিষেধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ কয়েকটি বিদেশী এয়ারলাইন্স। পরিস্থিতি ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে বিমান ঘোষণা দিয়েছে বিক্রিত টিকেট ফেরত প্রদানের। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, মার্চ মাসের সব টিকেট বিক্রি শেষ। এখন যাত্রীরা ইচ্ছে করলে টাকা ফেরত নিতে পারবেন। অথবা অপেক্ষা করতে পারবেন নিষেধাজজ্ঞা প্রত্যাহার পর্যন্ত। তবে সুখবর হচ্ছে সৌদি থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এই নিষেধাজজ্ঞা খুবই সাময়িক। যে কোন সময়ে এটা প্রত্যাহাার করা হতে পারে। পর্যটন বিশেষজ্ঞ হাকিম আলীর ভাষ্যমতে, ‘পর্যটন বলতে শুধু পাহাড় নদ-নদী ও সমুদ্র সৈকত দেখা নয়। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে ওমরাহ পালনও কিন্তু পর্যটনের আওতায়। এর সঙ্গে হোটেল, এয়ারলাইন্স যাতায়াত ও কেনাকাটা জড়িত। বলতে পারেন এটা ইসলাামিক পর্যটনের প্রধান উৎস। বিলিয়ন ডলারের এই খাত এখন হুমকির মুখে। করোনার দরুন আজ ধস নেমেছে সব ধরনের পর্যটন খাত। একটি বাদে সব মহাদেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ধস নেমেছে এয়ারলাইন্স, হোটেল মোটেল, ও পর্যটন খাতে। কবে নাগাদ এর শেষ হবে-সেটাও অনিশ্চিত। এজন্যই উদ্বেগটা মারাত্মক। যদি একটা সময়সীমা থাকত যে আগামী এত সময়ের পর এটা বন্ধ হয়ে যাবে সেই পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন বিকল্প কিছু করার ব্যবস্থা নেয়া যেত। তাই এই ধস সহসা কাটিয়ে ওঠার মতো। বাংলাদেশে এখনও করোনা না এলেও বৈশ্বিক প্রভাব তো এরই মধ্যে পড়েছে। চীনের সঙ্গে কয়েকটা এয়ারলাইন্স এখনও চলাচল করলেও যাত্রী নেমেছে ৮০ শতাংশের নিচে। এরই মাঝে বন্ধ হয়ে গেছে ওমরাহ। যা সবচেয়ে বেশি এফেক্ট করবে বিমানকে। এটা যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। জানা গেছে- করোনা আতঙ্কে চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার প্রধান পর্যটন স্পটগুলোতে টিকেট বাতিল করেছেন প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশী ভ্রমণকারী। একইভাবে বাংলাদেশে আসার পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণও বাতিল করছেন অনেক বিদেশী পর্যটক। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে এয়ারলাইনস ও পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই পর্যটক আকর্ষণের জন্য বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে নিয়মিত ব্রিফ করার পরামর্শ দিয়েছেন পর্যটন অপারেটররা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ যে এখনও করোনাভাইরাসমুক্ত, তা বহির্বিশ্বে তুলে ধরা প্রয়োজন। এদিকে ট্যুর অপারেটররা বলছেন, করোনার দরুন চলতি পর্যটন মৌসুমে দেশী-বিদেশী পর্যটক নিয়ে আসার উদ্যোগ আপাতত স্থগিতই বলা যায়। বিদেশী পর্যটকরা না আসায় পর্যটন খাতে শুধু ফেব্রুয়ারিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে কমপক্ষে শত কোটি টাকায়। এ পরিস্থিতি এপ্রিল পর্যন্ত চালু থাকলে ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল লিমিটেড (পিএটিএ) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব ও টোয়াবের সাবেক পরিচালক তৌফিক রহমান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের অতিথি বুকিং অন্তত ৪০ শতাংশ কমে গেছে। প্রায় একই অবস্থা অন্য তারকা হোটেলগুলোতেও। বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকদের ভ্রমণে আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বুকিং বাতিল করছেন তারা। এতে ট্যুর অপারেটররা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ক্ষতির মুখে পড়ছে এয়ারলাইনস ও হোটেলগুলোও। আবার অন-এ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেয়ায় বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকরাও আসছেন না। তারা সাধারণত বাংলাদেশে এলে এক-দুই মাসের জন্য হোটেল বুকিং দিয়ে রাখতেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব নিয়মিত অতিথিও হারাচ্ছে হোটেলগুলো। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল এ্যাসোসিয়েশনের (বিহা) সভাপতি হাকিম আলী বলেন- বাংলাদেশে চলমান অনেক প্রজেক্টে চীনা নাগরিকরা কাজ করছেন, যারা সাধারণত দীর্ঘ সময়ের জন্য হোটেল বুকিং দিয়ে থাকেন। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের কারণে তাদের প্রায় সবাই বুকিং বাতিল করছেন। পাশাপাশি অন্য দেশ থেকেও বিদেশীরা কম আসছেন। বর্তমানে হোটেলগুলোর মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কক্ষের বুকিং রয়েছে। কিন্তু এ সঙ্কট চলমান থাকলে হোটেলগুলো লোকসানে পড়বে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে পাঁচতারকা হোটেল রয়েছে ১৭টি। এর মধ্যে ১০টির অবস্থান রাজধানী ঢাকায়, যেগুলোর কক্ষ সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। এর মধ্যে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডে ২৭৭টি, ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় ২২৬টি, র‌্যাডিসন ন ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ২০৫টি, ওয়েস্টিনে ২৩৫টি, লা মেরিডিয়ান ঢাকায় ৩১৭টি, রেনেসাঁস হোটেলসে ২১১টি, ফোর পয়েন্টসে ১৪২টি ও হোটেল আমারিতে ১৩৪টি অতিথি কক্ষ রয়েছে। এ সম্পর্কে বাংলাদেশে পর্যটক আগমন ৬০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারী পর্যটন প্রতিষ্ঠান জার্নি প্লাসের প্রধান নির্বাহী (সিইও) তৌফিক রহমান। বলেছেন- আমার ছয়টি গ্রুপের প্রায় ১০০ জন বাংলাদেশে ভ্রমণ বাতিল করেছেন। এতে অন্য মাত্রার ক্ষতি হচ্ছে। সরকারের উচিত প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ করোনাভাইরাসমুক্ত প্রেস নোট প্রতিনিয়তই আমাদের পর্যটক আসা দেশগুলোসহ বহির্বিশ্বে প্রচার করা। জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মহিবুল হক বলেন-করোনাভাইরাসের কারণে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যাত্রী কমে যাওয়ায় আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমরা এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি লিখব দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। আমরা বাংলাদেশকে নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরব। উদ্ভূত পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশ্বের উদীয়মান পর্যটন গন্তব্যে থাকা চীনের আশপাশের সিঙ্গাপুর, জাপান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ ঝুঁকিতে পড়েছে। এই প্রভাবের বাইরে নয় বাংলাদেশ। এ সম্পর্কে আটাব জানিয়েছে, করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশীরা বহির্বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে পূর্বনির্ধারিত টিকেট বাতিল করছেন। এর সভাপতি বলেছেন, করোনায় এত প্রভাব পড়বে তা আমাদের হিসাবের বাইরে ছিল। টিকেটের ৮০ শতাংশই বাতিল হচ্ছে, যাত্রীরা রিফান্ড (টাকা ফেরত) নিচ্ছেন। শুধু চীনা ফ্লাইটেই খারাপ অবস্থা নয়, অন্যান্য দেশেও এই প্রভাব পড়ছে। সামনের দিনগুলোতে অবস্থা আরও শোচনীয় হবে। এদিকে ফ্লাইটের বুকিং বাতিল করা ছাড়াও টিকেট কনফার্ম (নিশ্চিত) থাকা সত্ত্বেও যাত্রী বিমানবন্দরে উপস্থিত না হওয়ার (নো শো) হার বাড়ছে। চায়না সাউদার্নের বিমানবন্দরে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন-গুয়াংজুগামী ফ্লাইটে কনফার্মেশন কমছেই। নো শো হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। পর্যটন, ব্যবসা ও চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান সিঙ্গাপুর। সেখানকার পর্যটন এলাকাগুলো এখন জনশূন্য, রাস্তাঘাটও ফাঁকা। যাত্রী আগমন ও সেবা বিবেচনায় একাধিকবার বিশ্বে শীর্ষস্থান পেয়েছে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর। কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কে এরই মধ্যে যাত্রী হারাতে শুরু করেছে বিমানবন্দরটি। রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। স্বাভাবিক সময়ে অতিথিতে পূর্ণ থাকে হোটেলটির মোট অতিথি কক্ষের ৮০ শতাংশ। পিক সিজনে খালি কামরা পাওয়াটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। হোটেলটির কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পিক সিজন হওয়ায় চলতি বছরেও মার্চ পর্যন্ত সিংহভাগ কক্ষেই আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন অতিথিরা। কিন্তু গত এক মাসে এ আগাম বুকিংয়ের ৬০ শতাংশেরও বেশি বাতিল করে দিয়েছেন তারা। পাঁচতারকা হোটেলগুলোর ব্যবসার পিক সিজন ধরা হয় বছরের প্রথম তিন মাসকে (জানুয়ারি-মার্চ)। ব্যবসায়িক কারণে এ সময় বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেন প্রচুর বিদেশী। এছাড়া বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনাও এ সময়টাতে থাকে তুলনামূলক বেশি। চাহিদা বেশি থাকায় বছরের এ সময় রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলগুলোয় কক্ষ খালি পাওয়াও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আগাম বুকিং দেয়া থাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আগাম বুকিং দেয়া ছিল হোটেলগুলোর সিংহভাগ কক্ষের। কিন্তু বর্তমানে পাঁচতারকা হোটেলগুলোর এসব আগাম বুকিং বাতিলের হিড়িক পড়েছে অতিথিদের মধ্যে। যারা আসছেন, ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত ফিরে যাচ্ছেন তারাও। হোটেলগুলোয় এ অতিথি সঙ্কটের পেছনে দায়ী করা হচ্ছে চলমান নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্ককে। পর্যটন ব্যবসা কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানার জন্য আমরা যোগাযোগ করি রাজধানীর শীর্ষ কয়েকটি হোটেল মোটেলের সঙ্গে। সরজমিনে দেখা যায়- প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বোর্ডার কমছে হোটেল-মোটেলে। বাতিল হচ্ছে একের পর এক প্রদর্শনী। সব মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলগুলোর ব্যবসায় ধস নেমেছে পিক সিজনেই। হোটেলগুলোয় মার্চ পর্যন্ত ৭০-৮০ শতাংশ অতিথি কক্ষ আগাম বুকিং দেয়া ছিল। বিশেষ কিছু দিনে কোন কোন হোটেলে কোন কক্ষই ফাঁকা ছিল না। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস ইস্যুতে শেষ মুহূর্তে এসে বেশির ভাগ বুকিং বাতিল করছেন ভ্রমণকারীরা। ফলে এসব হোটেলে অতিথির আগমন কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। সে সঙ্গে প্রতিদিনই বাতিল হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান-প্রদর্শনীর আগাম বুকিংও। ফলে হোটেলগুলোর ব্যবসা নেমে এসেছে সক্ষমতার ৪০-৫০ শতাংশে। এ সম্পর্কে হাকিম আলী জানিয়েছেন- রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলগুলোয় বিদেশীদের বুকিং বাতিল শুরু হয় গত ২০ জানুয়ারির পর। চলতি মাসের শুরু থেকে এটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যারা আসছেন, ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে ফিরে যাচ্ছেন তারাও। এ অবস্থায় হোটেলগুলোর ব্যবসা অনেকটা স্থানীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকনির্ভর হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস বিশ্বের ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। কারণ সংক্রমণের ভয়ে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কেউ আর ভ্রমণ করছেন না। ফলে রাজধানীর হোটেলগুলোর ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে গুলশানের তারকা হোটেলগুলোর ৯৭ শতাংশ অতিথিই বিদেশী, যারা মূলত পোশাক খাতের বিদেশী ক্রেতা এবং বিভিন্ন দূতাবাসসংশিষ্ট কর্মকর্তা। পোশাক খাতের বিদেশী ক্রেতারা মূলত চীন থেকে কাপড় কিনে বাংলাদেশ আসেন তৈরির অর্ডার দিতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্রেতারা যেহেতু চীনে যাচ্ছেন না, তাই তারা বাংলাদেশেও কম আসছেন। এরই প্রভাব পড়ছে হোটেলগুলোর বুকিংয়ে। এ বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে রাজধানীর বিমানবন্দর রোডে অবস্থিত একটি হোটেলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে হোটেলটির ৮০ শতাংশের বেশি রম অতিথিতে পূর্ণ থাকে। গত এক মাসে তা নেমে এসেছে ৪০ শতাংশে। এ এক মাসেই কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে হোটেলটি। বিদেশী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রায়ই বাণিজ্যিক প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করে থাকেন বিভিন্ন খাতের দেশী ব্যবসায়ীরা। ভেন্যু হিসেবে এসব মেলা ও প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমেও বেশ ভালো ব্যবসা হয় পাঁচতারকা হোটেলগুলোর। কিন্তু করোনা আতঙ্কে এ ধরনের অনুষ্ঠানও এখন বাতিল হয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান- এশিয়া জুড়ে পর্যটক ও বিজনেস ট্রাভেলারদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। সংক্রমণের আশঙ্কায় এ সময় কেউ কোন দেশে খুব প্রয়োজন না হলে ভ্রমণ করবে না। এরই মধ্যে ফ্লাইটগুলোয় যাত্রী সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এর একটি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। চীন ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশ ভাইরাসটিকে পুরোপুরি নির্মূল করতে না পারলে এশিয়ার ভ্রমণ পর্যটন খাত সহসা গতি পাবে না। বিশেষ করে তারকা হোটেলগুলো দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়বে। এদিকে চীনে করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে বৈশ্বিক এয়ারলাইনসগুলো। আইকাও তথ্য মতে, ৭৩টি এয়ারলাইনস চীন থেকে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং আরও ৫০টি এয়ারলাইনস সম্পর্কিত বিমান পরিচালনা বন্ধ করেছে। ফলে সরাসরি চীন থেকে আসা বিদেশীদের জন্য বিদেশী বিমান সংস্থার সক্ষমতা ৮০ শতাংশ কমেছে এবং চীনা এয়ারলাইনসের ধারণক্ষমতা কমেছে ৪০ শতাংশ। আইকাও বলছে, বৈশ্বিক এয়ারলাইনসের পূর্বাভাসের তুলনায় যাত্রী কমেছে প্রায় দুই কোটি বা ১৬.৪ শতাংশ। এতে বিশ্বব্যাপী বিমান সংস্থাগুলোর জন্য মোট অপারেটিং রাজস্ব কমেছে ৫০০ কোটি ডলার। যদিও করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সিঙ্গাপুরে কঠোর সতর্কতা নিয়েছে সরকার।
×