ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাবার নাম ও ঠিকানায় মিল থাকায় জেল খাটছেন নিরপরাধ ব্যক্তি

বরিশালের কাদের যেন আরেক জাহালম!

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  বরিশালের কাদের  যেন আরেক জাহালম!

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ এবার টাঙ্গাইল নয়, বরিশালে ঘটছে আরেকটি ‘জাহালম কান্ড’। এখানেও পুনরাবৃত্তি ঘটছে টাঙ্গাইলের মতো অনুরূপ ঘটনার। ফলে তছনছ হতে চলেছে এক নিরপরাধ ব্যক্তির জীবন এবং একটি নিরীহ দরিদ্র পরিবার। নাম-ঠিকানায় মিল থাকায় পুলিশ কাদের নামে এক ব্যক্তিকে ধরে এনে সোজা শ্রীঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক জটিলতার। আর সাজা ভোগ করছে নিরপরাধ ব্যক্তি। অথচ পুলিশ দাবি করছে সঠিক আসামিকেই তারা গ্রেফতার করেছে। এদিকে অর্থাভাবে ঋণগ্রস্ত পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। জানা গেছে, দেশব্যাপী আলোচিত টাঙ্গাইলের জাহালমের মতো বরিশালের আব্দুল কাদেরের বাবার নাম এবং বাড়ির ঠিকানা মিল থাকায় দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ঢাকার একটি মামলার আসামি ‘জুয়েল রানার’ পরিবর্তে পুলিশ ‘আব্দুল কাদেরকে’ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়ে দিয়েছে। শুধু বাবার নাম ও বাড়ির ঠিকানায় মিল থাকায় সাজাপ্রাপ্ত জুয়েল রানার পরিবর্তে আব্দুল কাদের দীর্ঘদিন থেকে কারাগারে সাজাভোগ করছেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, এইচএসসি পাস যুবক আব্দুল কাদের (৩৯) বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে স্ট্যাম্প বিক্রি এবং বাড়িতে একটি মুরগীর খামার নির্মাণ করে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে জীবন যাপন করছিলেন। এর আগে আব্দুল কাদের নগরীর রূপাতলীর সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলে চাকরি করতেন। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবি) ঢাকার বংশাল শাখা থেকে জালিয়াতি করে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ২০০৮ সালে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করে সড়ক বিভাগ। দুদক ওই মামলার তদন্ত করে আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন। যেখানে চার নম্বর আসামির নাম জুয়েল রানা। ২০১৬ সালে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামিদের কারাদ-ের রায় ঘোষণা করেন। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এইচএসসি পাস করা আব্দুল কাদের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে স্ট্যাম্প বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছিলেন। এর আগে আব্দুল কাদের বরিশাল নগরীর রূপাতলীর সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলে চাকরি করতেন। তার বাবার নাম মৃত আয়নাল ঢালী। জুয়েল রানা নামের অন্যকেউ থাকলেও আব্দুল কাদের অন্য কোন নামে পরিচিত নয়; তিনি আব্দুল কাদের নামেই পরিচিত। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারী কৌঁসুলি একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মামলায় যখন চার্জশীট হয়েছে তখন আসামির দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এখানে কোথাও একটা ঝামেলা হয়ে থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, আব্দুল কাদের না জুয়েল রানা এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত করলেই মূল রহস্য বের হয়ে আসবে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) খাইরুল আলম বলেন, সম্প্রতি আমি এ খবরটি জানার পর পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখানে কারও বিরুদ্ধে কোন গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×