ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সত্যিই মাশরাফির অধিনায়কত্বের শেষের শুরু রবিবার?

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  সত্যিই মাশরাফির অধিনায়কত্বের শেষের শুরু রবিবার?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সত্যিই কী বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্বের শেষের শুরু হয়ে যাচ্ছে রবিবার? এ প্রশ্নই এখন ক্রিকেটপাড়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রবিবার যে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার প্রথম ওয়ানডে দিয়ে দুই দলের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হয়ে যাবে। আর এ সিরিজ শেষ হতেই মাশরাফির অধিনায়কত্ব শেষ হয়ে যেতেও পারে। সত্যিই কী তা হবে? নাও হতে পারে। আর যদি তা হয় তাহলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে অধিনায়ক করা হতে পারে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচগুলো। ১ মার্চ প্রথম, ৩ মার্চ দ্বিতীয় ও ৬ মার্চ তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। যদি এই সিরিজই মাশরাফির অধিনায়কত্বের শেষ সিরিজ হয় ৬ মার্চ ম্যাচটি শেষ হতেই তার ইতি ঘটার কথা। বিসিবি থেকে তাই জানানো হয়েছিল। সত্যিই কী এমনটি হবে? যতদূর জানা যাচ্ছে, শুধু ওয়ানডে খেলা চালিয়ে যাওয়া মাশরাফির বেলাতে আপাতত তা নাও হতে পারে। আর সেই সম্ভাবনাই জোরালো। প্রথমত, মাশরাফি নিজে থেকে অধিনায়কত্ব ছাড়ার বিষয়ে ইতিবাচক নন। আপাতত ক্রিকেট ছাড়ার ব্যাপারে যেহেতু ভাবনা নেই, আরও এক বছর খেলতে চান, তাই অধিনায়কত্ব ছাড়ার প্রশ্নই আসে না। মাশরাফির ব্যাপারে তাই বিসিবি থেকে এর আগে যাই বলা হোক, মাশরাফির অধিনায়কত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই কঠিন। বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজ শেষে বোর্ড সভায় মাশরাফির অধিনায়কত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে সেই সিদ্ধান্ত মাশরাফির অধিনায়কত্ব আপাতত থাকার বিষয়েই হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো বলেই বিসিবি সূত্রে জানা যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, জাতীয় দলের স্পন্সর খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু টাইটেল স্পন্সর খুঁজতে বিসিবিকে ভালই বেগ পেতে হচ্ছে। সাকিব আল হাসান নেই। তিনি নিষিদ্ধ। এর মধ্যে আবার যদি মাশরাফিও দলের সঙ্গে না থাকেন তাহলে ‘ব্র্যান্ড ভেল্যু’ কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাতে স্পন্সর পাওয়ার বিষয়েও বেগ পেতে হচ্ছে। আর তাই মাশরাফিকে শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক রেখে দেয়ার ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত হতে পারে। তৃতীয়ত, এখন যদি মাশরাফিকে অধিনায়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তাহলে অধিনায়কত্ব করবেন কে? বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সফরে তামিম ইকবালকে নেতৃত্ব দেয়া হয়। হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমকে অনেক বলেও আর অধিনায়ক করা যাচ্ছে না। টেস্টে যখন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারায় বাংলাদেশ, এরপর মুশফিকের নেতৃত্ব কেড়ে নেয়া হয়। অভিমান থাকাই স্বাভাবিক। মুশফিক তাই অধিনায়ক হতে রাজি নন। তাছাড়া জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ শেষে যে পাকিস্তান সফর রয়েছে, সেখানে মুশফিক যাবেন না, তা বলে দিয়েছেন। আগেও বলেছেন। এখনও তাই বলছেন। পাকিস্তান সফরে একটি ওয়ানডে রয়েছে। মুশফিককে পাওয়া যাচ্ছে না। মানে তার অধিনায়ক হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। মাশরাফিকে অধিনায়ক থেকে যদি শেষ পর্যন্ত সরিয়ে দেয়াই হয় তাহলে মাহমুদুল্লাহর কাঁধে টি২০’র মতো ওয়ানডের নেতৃত্বও পড়বে। মাহমুদুল্লাহ আবার পাকিস্তান সফরে ওয়ানডে ম্যাচটি খেলেই দেশেও ফিরে আসবেন। সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে টেস্ট দলে থাকতে পারবেন না। যদিও তিনি জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টেও ছিলেন না। ওয়ানডে খেলেই ফিরে আসবেন মাহমুদুল্লাহ। তাহলে কি বোঝাই যাচ্ছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে অধিনায়ক থাকবেন মাহমুদুল্লাহ। সেই সিদ্ধান্ত নেয়াও কঠিন। চতুর্থত, এ বছর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজটি শেষে এপ্রিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি ওয়ানডে, মে মাসে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ও ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ আছে। এছাড়া আর কোন ওয়ানডে খেলা নেই। কাউকে যদি অধিনায়ক করা হয় তাহলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি ও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ পর্যন্ত অধিনায়ক করা হবে। কারণ অক্টোবরের পরই সাকিব ফিরবেন। আর ফিরবেন মানেই ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় সাকিবই অধিনায়ক থাকবেন। মাঝপথে চার ম্যাচের জন্য শুধু নতুন অধিনায়ক করার বিশেষ কোন মানে আছে কিনা, তা খোঁজা হচ্ছে। আর সেই খোঁজার ভেতর মাশরাফিকেই শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক রেখে দেয়া হতে পারে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ শুরুর আগে বলেছিলেন, ‘সামনের ওয়ানডে বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে আমাদের দল গোছাতে হবে। একজন অধিনায়কও ঠিক করতে হবে। বিশ্বকাপের আগে অন্তত দুই বছর যেন ওই অধিনায়কের নেতৃত্বে টিমটা খেলতে পারে। সুতরাং খুব দ্রুত আমরা ওয়ানডেতে নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করব। মাশরাফি এই (জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ) সিরিজে অবশ্যই খেলছে এবং সেটা অধিনায়ক হিসেবে। ওর (মাশরাফির) সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেয়ার, আর কতদিন খেলবে। খুব দ্রুতই আমরা আগামী বিশ্বকাপে যে নেতৃত্ব দেবে এমন একজনকে ওয়ানডে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেব।’ নতুন অধিনায়ক ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন বিসিবি সভাপতি। অবশ্য জিম্বাবুইয়েকে টেস্টে হারানোর পরই আবার বলেন, ‘আমি তো এ রকম কিছু বলিনি। পরবর্তী যেটা বোর্ড মিটিং মাসখানেকের মধ্যে হবে সেখানে অধিনায়ক কে হবে সেই সিদ্ধান্ত নেব। সে খেলবে কি খেলবে না, অধিনায়ক থাকবে কি থাকবে না, ওই মিটিংয়ের আগে বলতে পারছি না। তবে এটুকু বলতে পারছি, এখন পর্যন্ত এই সিরিজে (জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে) সে ওকে। আগে বোর্ড সভা হোক। সেখানেই আসলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা অধিনায়ক ঠিক করব নেক্সট বোর্ড মিটিংয়ে।’ বিসিবি সভাপতির কথাতেই স্পষ্ট, বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হবে। আর তাতে করে মাশরাফিই আপাতত এ বছর ওয়ানডেতে অধিনায়কও থাকতে পারেন। সাকিব দলে ফিরলেই হয়তো মাশরাফির অধিনায়কত্ব শেষ হতে পারে। অবশ্য মাশরাফির দিকে তীক্ষè দৃষ্টিও থাকবে। সিলেটে ওয়ানডে সিরিজ মাশরাফির জন্যই আরও বেশি করে জমে ওঠার সম্ভাবনা আছে। সবাই মাশরাফির শেষ অধিনায়কত্বের সিরিজ ভেবেই উৎসুক। এ সিরিজের পর অধিনায়কত্ব শেষ হবে কিনা তা বোর্ড সভাতেই বোঝা যাবে। তবে যেভাবে মাশরাফির অধিনায়কত্বে শেষ ওয়ানডে সিরিজ ভেবে নেয়া হয়েছে তাতে সিরিজের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মাশরাফির অধিনায়কত্ব আসলে তার এ সিরিজে পারফরর্মেন্সের ওপরও নির্ভর করছে। বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে ওয়ানডে খেলেননি। প্রায় আট মাস পর ওয়ানডে খেলবেন। সেই সিরিজটির দিকে সবার নজর থাকছে। বিসিবির নজর থাকছে তার পারফর্মেন্সের দিকে। যদি মাশরাফি বাজে নৈপুণ্য দেখান তাহলে নেতৃত্ব চলেও যেতে পারে। মাশরাফির অধিনায়কত্ব নিয়ে অনেক হিসেব সামনে আছে। আর তাই সত্যিই কী মাশরাফির অধিনায়কত্বের শেষের শুরু হচ্ছে রবিবার? এই প্রশ্নই উঠছে।
×