ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ানডে সিরিজের লড়াই শুরু কাল

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ওয়ানডে সিরিজের লড়াই শুরু কাল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ একমাত্র টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হেরে গেছে সফরকারী জিম্বাবুইয়ে। যদিও বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই সাকিব আল হাসানকে ছাড়া স্বাগতিক দলের বিপক্ষে জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটাররা। কিন্তু সাকিব না থাকলেও বাজেভাবে হার দেখেছে তারা। তবে টেস্টের চেয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অনেকখানি শক্তিশালী জিম্বাবুইয়ে। যদিও সর্বশেষ যে ১৩টি ওয়ানডে হয়েছে সবগুলোতেই জিতেছে বাংলাদেশ দল। ২০১৩ সালের ৫ মে বুলাওয়েতে সর্বশেষবার বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে হারিয়েছিল জিম্বাবুইয়ে। কিন্তু এবার সিলেটে পুরো ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামার আগে জয়ের আশাবাদ তাদের। কারণ হিসেবে আবারও সাকিবের অনুপস্থিতিকেই তুলে ধরেছে তারা। ইতোমধ্যেই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলনও করেছে জিম্বাবুইয়ে দল। একই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। ৩ ম্যাচের দিবারাত্রির সিরিজে সফরকারীদের মুখোমুখি হতে শুক্রবার ঘাম ঝরিয়েছে উভয় দল। কোন প্রস্তুতি ম্যাচ না থাকায় আরও একদিন মাঠের অনুশীলনই ভরসা। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে এটিই হতে পারে বাংলাদেশের শেষ ওয়ানডে সিরিজ। রবিবার প্রথম ওয়ানডে বেলা ১টায় মাঠে গড়াবে। ৩ ও ৬ মার্চ একই ভেন্যুতে বাকি দুই ওয়ানডেও হবে দিবারাত্রির। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিলেটে একটি ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ দল। এখন পর্যন্ত এই ভেন্যুতে সেটিই একমাত্র ওয়ানডে ম্যাচ। আর কোন দল, এমনকি স্বাগতিক বাংলাদেশও খেলেনি এখানে ৫০ ওভারের ম্যাচ। একমাত্র সেই ম্যাচে অবশ্য বাংলাদেশ দল ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে ক্যারিবীয়দের। প্রায় দেড় বছর পর আবার সেখানে ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। এবার পুরো সিরিজই অনুষ্ঠিত হবে সেখানে। এই সিরিজে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে অনেক মেরুকরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ঘোষিত প্রথম দুই ওয়ানডে ম্যাচের জন্য দলটিতে ৭টি পরিবর্তন আছে। একেবারে নতুন মুখ দুইজন। টি২০ ক্রিকেটের দুই উঠতি তারকা আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মোহাম্মদ নাইম শেখ প্রথমবার ওয়ানডে দলে জায়গা করে নিয়েছেন। এছাড়া গুঞ্জন রয়েছে অধিনায়ক হিসেবে এটিই মাশরাফির শেষ সিরিজ হতে পারে। এরপর দলে জায়গা পেতে তাকে পারফর্ম করে এবং ফিট প্রমাণ করেই আসতে হবে। এমনটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন নিজেই বলেছিলেন কিছুদিন আগে। তবে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ দল জিতে যাওয়ার পর আবার ভিন্ন কথাই জানিয়েছেন তিনি। সেদিন দাবি করেছেন, মাশরাফির নেতৃত্ব এবারই শেষ এমন কথা বলেননি তিনি। এ কারণে এই সিরিজ শেষেই হয়তো বোঝা যাবে মাশরাফির ভবিষ্যত সম্পর্কে। ওয়ানডের জন্য অপরিচিত উইকেটে খেলতে নামা, বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এবং নেতৃত্ব নিয়ে গুঞ্জন- সবকিছু মিলিয়ে এবারের সিরিজটায় অনেক চ্যালেঞ্জ সামনে বাংলাদেশ দলের। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষে শ্রীলঙ্কা সফরে জুলাইয়ে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ দল। সেই সিরিজে ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি ও অপরিহার্য পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে সেই সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়ে দেশে ফিরেছিল বাংলাদেশ দল। দীর্ঘ ৭ মাস পর আবার ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ফিরছে বাংলাদেশ দল। এর মাঝে টেস্ট ও টি২০ খেলেছে টাইগাররা। তাই নতুন করে ওয়ানডে ক্রিকেটে মানিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জটাও আছে। অপরদিকে জিম্বাবুইয়ের জন্য এই মাঠটি বেশি অপরিচিত। তারা ২০১৮ সালে একটি টেস্ট খেলেছিল এই মাঠে। সেই ম্যাচেই স্বাগতিকদের হারিয়ে দেয়ার সুখস্মৃতি আছে। এবার ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট হার দিয়ে শুরু হলেও এবার তাই ওয়ানডেতে জয় পেতে আত্মবিশ্বাসী তারা। তাছাড়া টেস্ট সিরিজে অনুপস্থিত শন উইলিয়ামস ওয়ানডেতে যোগ হয়েছেন, অভিজ্ঞ পেসার ক্রিস্টোফার এমপোফুও আছেন। অপরদিকে বাংলাদেশ দলের মূলশক্তি বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব নেই আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে। তাই জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক চামু চিভাভা সুযোগ দেখছেন জয়ের। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেটে দলের প্রথমদিনের অনুশীলনের ফাঁকে চিভাভা বলেন, ‘বাংলাদেশ দলে সাকিব না থাকায় বাড়তি সুবিধা পাওয়ার আশা করছি। টেস্ট হারের কষ্ট ওয়ানডেতে জিতে ভুলতে চায় ছেলেরা। তবে এই জয়টা এত সহজ নয়। জিততে হলে এখানে আমাদের সেরাটা দিয়ে লড়তে হবে।’ সাকিবের কথা বিশেষভাবে তার বলার কারণও আছে। দু’দলের মধ্যে ওয়ানডে লড়াইয়ে ব্যাটে-বলে সেরা পারফর্মার সাকিব। তিনি জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৪৫ ওয়ানডে খেলে সর্বাধিক ৭৪ উইকেট নিয়েছেন আর ব্যাট হাতে করেছেন সর্বাধিক ১৪০৪ রান। সিরিজ জয়ের দিকেই দৃষ্টি জিম্বাবুইয়ের। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি সিলেট ভেন্যুটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাত্রা শুরু করেছিল তাদের ম্যাচ দিয়েই। ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ খেলে তারা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে সেই ম্যাচ হেরেছিল তারা। পরে হল্যান্ডের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচে এই ভেন্যুতে জিতেছিল তারা। ২ টি২০ ও ১ টেস্ট খেলেছে তারা সিলেটে। এ কারণেই হয় তো কিছুটা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়ার। যদিও ২০১৩ সালে সর্বশেষ ঘরের মাটিতে সিরিজ জিতেছে তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে। এরপর হেরেছে টানা ৩টি সিরিজে। সেই সিরিজগুলোতে ৫-০, ৩-০ ও ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তারা। সবগুলোই অবশ্য বাংলাদেশের মাটিতেই ছিল। অর্থাৎ ৭ বছরে টানা ১৩ ওয়ানডে (মাঝে ত্রিদেশীয় সিরিজে ২ ম্যাচ) হেরেছে জিম্বাবুইয়ে বাংলাদেশের কাছে। এরপরও এবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে তারা। ২০০১ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশের মাটিতে এসে স্বাগতিকদের ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে গিয়েছিল। এরপর আর বাংলাদেশে এসে ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারেনি। সর্বশেষ ওয়ানডেই তারা বাংলাদেশের মাটিতে জিতেছে ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর মিরপুরে। অর্থাৎ সোয়া ৯ বছর ধরে বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে পরাস্ত করতে পারেনি তারা। এরপরও সাকিব না থাকাতেই এমন আশা করছে জিম্বাবুইয়ে।
×