ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাঙ্গাবালীতে বন উজাড় করে চিংড়ি চাষ

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 রাঙ্গাবালীতে বন উজাড় করে চিংড়ি চাষ

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার উপকূলীয় বন বিভাগের কানকুনি বিটের আওতাধীন চর যমুনা এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছপালা কেটে উজাড় করে চলছে চিংড়ি মাছ চাষের উদ্যোগ। এরই মধ্যে বনাঞ্চলের কয়েক শ’ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বেকু মেশিন দিয়ে মাটি তুলে খনন করা হয়েছে বিশাল জলাশয়ের ঘের। তার চারপাশে তৈরি করা হয়েছে মাটির উঁচু বেড়িবাঁধ। এছাড়া, ঘেরের পানি নিষ্কাশনের জন্য নর্দমাও কাটা হয়েছে। আর এসব করেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী। এ ধরনের বেপরোয়া কর্মকান্ডে গোটা বনাঞ্চলই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের কতিপয় কর্মচারীর সঙ্গে গোপন যোগসাজশে এসব করা হয়েছে। যদিও বন বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নোটিস করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু এরপরেও থেমে নেই বন নিধন। বরং নোটিসের পরে আরও বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চর যমুনা এলাকায় ১৯৭৮-১৯৭৯ অর্থবছরে বন বিভাগ কেওড়া, ছৈলা, গেওয়া ও বাইন গাছের চারা লাগিয়ে বনায়ন কার্যক্রম শুরু করে। বন বিভাগ ২০০৩ সালের ৩০ অক্টোবর চর যমুনা এলাকার এক হাজার একর আয়তনের বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা দেয়। ওই ঘোষণায় চর যমুনা সংলগ্ন নদীতে যত চর জাগবে, সে সমস্ত চরও বন বিভাগের আওতায় থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। দীর্ঘ সময়ে বনাঞ্চলের গাছপালা বিশাল আকার নিয়ে বড় হয়ে উঠেছে এবং বনাঞ্চলটি গভীর অরণ্যে রূপ নিয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে চর যমুনা বনাঞ্চলের ওপর নজর পড়ে জুয়েল সিকদার নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালীর। বনের জমির মালিকানা দাবি করে জুয়েল সিকদার বনাঞ্চলের গাছপালা কেটে চিংড়ি মাছের ঘের করার কার্যক্রম শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বেকু মেশিন নামিয়ে মাটি কেটে বাঁধ দিয়ে একটি অংশে চিংড়ি চাষের ঘের তৈরির কাজ শুরু হয়। ঘেরের বাঁধ দিতে গিয়ে বনের কয়েক শ’ কেওড়া, গেওড়া, ছৈলা ও বাইন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ঘেরের পানি নিষ্কাশনের জন্য নর্দমাও তৈরি করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চর যমুনায় কয়েক একর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছপালা উজাড় করে মাটির বাঁধ দেয়া হয়েছে। বেকু মেশিন দিয়ে বনের মাটি কেটে তুলে ঘের তৈরি হয়েছে। প্রচুর গাছের গোড়া পড়ে আছে। কয়েকটি গাছের গোড়া আবার মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। ঘেরের চারপাশের বন কেটে নর্দমাও কাটা হয়েছে। বনাঞ্চল উজাড় করে ঘের করার বিষয়ে জুয়েল সিকদার জানান, বনাঞ্চলের জমি তার রেকর্ডীয় সম্পত্তি এবং নিজের জমি কেটেই তিনি ঘের তৈরি করছেন। এখানে বন বিভাগের কোন জমি নেই। তার নামে মিথ্যা নোটিস পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তবে গাছপালা কাটার বিষয়ে তিনি কোন কথা বলেননি। এ বিষয়ে উপকূলীয় বন বিভাগের পক্ষে রাঙ্গাবালী বিট কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কাওসার জানান, সরেজমিনে গিয়ে ঘেরের সকল কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া জুয়েল সিকদার বরাবরে নোটিস দিয়ে তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গাছকাটা ও জমি দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে বনাঞ্চলের জমিতে জুয়েল সিকদারের পক্ষে বৈধ কাগজপত্র থাকলে তা দেখানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
×