ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মামুনুর রশীদের জন্মদিন ঘিরে ৬ দিনব্যাপী বর্ণিল উৎসব

প্রকাশিত: ১০:৫০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 মামুনুর রশীদের জন্মদিন ঘিরে ৬ দিনব্যাপী বর্ণিল উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মঞ্চ থেকে মাইকে ভেসে আসছে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘একি লাবণ্যে পূর্ণপ্রাণ প্রণেশ হে আনন্দবসন্ত সমাগমে’। মঞ্চের চারদিকের উৎসুক শ্রোতা পিন পতন নীরবতায় শুনছে সে গান। মঞ্চের তিন দিকের জলরাশির মধ্য থেকে নানান রঙের আলো ঝলমল করছে। সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। দেশের নবনাট্যধারার অন্যতম প্রাণপুরুষ আরণ্যক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা মামুনুর রশীদের জন্মদিনের আয়োজনটা ছিল এমনই। মামুনুর রশীদ জীবন আর শিল্পের সীমারেখাকে একাকার করে দিয়ে নাটককে তিনি পরিণত করেছেন আন্দোলন, সংগ্রাম আর স্বপ্নপূরণের হাতিয়ারে। আগামীকাল শনিবার ২৯ ফেব্রুয়ারি ৭২ বছর বয়সী মামুনুর রশীদের ১৮তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো ‘দ্রোহ দাহ স্বপ্নের নাট্য আয়োজন’ শীর্ষক ছয় দিনব্যাপী বর্ণিল উৎসব। সঙ্গীত, নৃত্য, সেমিনার, প্রদর্শনী, গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, সংবর্ধনা, নাটক মঞ্চায়নসহ নানা কর্মসূচীতে সাজানো এ উৎসবের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় উদ্বোধনী আয়োজন। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে অনুষ্ঠিত এ আনন্দ আয়োজনে মাদলের বাজনার সঙ্গে মামুনুর রশীদের জন্মদিনের এ উৎসবের উদ্বোধন করেন অধ্যাপক ড. হায়াত মামুদ। নাট্যব্যক্তিত্ব হারুন-অর-রশিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিবিদ সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, ভারতের কলকাতার সংস্কৃতিজন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেশের বরেন্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ। উদ্বোধক অধ্যাপক ড. হায়াৎ মাহমুদ বলেন, আমার তৃতীয় শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আমার বয়স এখন ৮২ চলছে। আমার সৌভাগ্য হলো এখানে যারা আছেন তারা সকলে আমাকে ভালবাসেন এবং আমি সকলকে শ্রদ্ধা করি। নাটক যারা পছন্দ করেন, নাটক পাঠ করেন, নাটক শোনেন এই সভা তাদের ডেকে এনেছে। সেজন্য সকলেই আমাদের প্রিয়জন। বাংলাদেশে নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে আপনারা সকলেই চমৎকার শ্রোতা, দর্শক বলেই এখানে যারা নবীন লেখক তারা অনুপ্রেরণা পান। সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, মামুনুর রশীদ এখনও সেই ১৮ বছরের উদ্যোগ নিয়ে এখন মঞ্চ নাটক, স্বজ্ঞানে ছোট ও বড় পর্দায় সব জায়গায় দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। মুমুনুর রশীদ আমাদের আরও সুন্দর সুন্দর নাটক উপহার দিবে এই আশা রাখি। নতুন যারা আসবেন তারা নিশ্চয়ই মামুনকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাবেন। সেটাই মামুনের জন্মদিনের শ্রেষ্ঠ শুভেচ্ছা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। শমীক বন্দোপাধ্যায় বলেন, আপনারা ভাগ্যবান। আপনারা মামুনের অভিনয়, তার প্রযোজনা, এগুলো বার বার দেখবার সুযোগ পান। সেই সুযোগ থেকে ভারতে আমরা এক প্রকার বঞ্চিত বলা যায়। আমরা খানিকটা দূর থেকে মামুনুরকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি। একটা দীর্ঘ সময় ধরে ওর সঙ্গে আমার একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়। ভারতে নানা অনুষ্ঠানে যখন আমরা নাটক নিয়ে আলোচনা করেছি, একটা বিশ্ব প্রেক্ষিতে আলোচনা করেছি তার সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে আমরা জালিয়ে নিয়েছি। তাতে মামুনের যোগদান এবং তার বুদ্ধিদীপ্ত অবদান আমাদের বার বার মুগ্ধ করেছে। একটা অন্য দৃষ্টিতে আমরা থিয়েটারকে দেখেছি যেটা তার একান্ত নিজস্ব ভাবনা এবং অভিজ্ঞতা প্রসূত। সেই ভাবনাকে আমরা সম্মান করেছি। তার আকর্ষণ এবং তার প্রতি শ্রদ্ধায় আমি আজ এখানে আসতে পেরে খুব স্লঘা বোধ করছি। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে মামুনুর রশীদ বলেন, উপস্থিত আমার বন্ধু-বান্ধব, নাট্যকর্মী, শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিবর্গ আসলে আজ আমার বলার কথা ছিল না। তবুও দুটি কথা বলি। একটি হচ্ছে আমার ১৮ বছর বয়স। কবি সুকান্তের একটি অসাধারণ কবিতা আছে। যে ১৮ বছরের বয়স একটা মারাত্তক সময়। এই সময়ে মানুষের আসলেই দ্রোহ দাহ এবং স্বপ্নের জায়গা। আমার চার বছর পর পর জন্মদিন হওয়ার কারণে বয়স ১৮ বছর হয়েছে। আজ আরণ্যক নাট্যদল আমার জন্মদিনের যে আয়োজন করেছে এটা সম্পূর্ণভাবে তাদের বিষয়। তার ওপর এ দেশের নাট্যকর্মীরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মিডিয়ায় যারা অভিনয় করেন তারা যুক্ত হয়েছে। সবার কাছে আমি, কৃতজ্ঞ।
×