ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলেমেয়ে পুড়ে কয়লা- রনি-ফেরদৌস জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

প্রকাশিত: ১০:২০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  ছেলেমেয়ে পুড়ে কয়লা- রনি-ফেরদৌস জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ শহিদুল কিরমানি রনি (৪০) ও জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৫) দম্পতি মারাত্মক দগ্ধ হয়ে এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাদের ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে আইসিইউতে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের চার বছরের শিশু একেএম রুশদী ও জুথি (১৭) পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে, তাকে চেনার উপায় নেই। দিলু রোডে সর্বনাশা আগুনে ওদের সাজানো সংসার তছনছ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্তলাল সেন জানান, জান্নাতুলের শরীরের ৯৫ ও রনির ৪৩ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। পুড়ে গেছে শ্বাসনালী। ডাঃ সেন বলেন, এসব রোগী বাঁচানো খুবই কঠিন। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ইস্কাটনের দিলু রোডের একটি আবাসিক ভবনের নিচতলার গ্যারেজ থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে জীবন্ত দগ্ধ হয়েছে তিন। চিকিৎসক ও পুলিশ বলছে, শিশু রুশদী ও আফরিন জান্নাত জুথি (১৭) পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। তাদের চেনা যাচ্ছে না। দগ্ধ আব্দুল কাদের লিটনের লাশকে ঢামেক ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে ঢামেক মর্গে এসে একেএম শহীদুল্লাহ তার নাতি রুশদীর মরদেহ শনাক্ত করেন। তিনি জানান, ‘আগুনে কয়লা’ নাতি রুশদীকে চেনার উপায় নেই। ওখানে আর কোন শিশু ছিল না। শহীদুল্লাহ জানান, এটিই তার নাতির লাশ। শহিদুল্লাহ জানান, বনি-ফেরদৌস দম্পতির দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে জুথি বড় রুশদী ছোট। দিলু রোডের ওই বাসার তিন তলায় শহীদুল্লাহ পরিবার নিয়ে থাকেন গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার শিবপুরে। ছেলে রনি বিআইভিপি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। পাশাপাশি আইসিএমএ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রভাষক হিসেবেও কাজ করতেন। তার স্ত্রী ফেরদৌস বেক্সিমকো ফার্মাসিউক্যাল লিমিটেডের হিসাবরক্ষক ছিলেন। শহীদুল্লাহ কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, নাতি রুশদীকে তার বাবা-মা আঁকড়ে ধরেও বাঁচাতে পারেনি। এদিকে একই সময় পুড়ে অঙ্গার হওয়া ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী জুথি পুড়ে কয়লা হওয়া মরদেহ শনাক্ত করেন তার চাচা সুরুজ্জামান। তিনি জানান, ওই পাঁচতলা ভবনের ছাদের টিনশেডে জুথির বাবা-মা নিয়ে থাকতেন। জুথির বাবা পূর্ত ভবনের প্রশাসনিক সেকশনে চাকরি করেন, মা লাল বানু (৩৫) গৃহিণী। ভাই আশিক আপন (২৪) মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। চার জনের এই পরিবার ওই ভবনের ছাদের একটি রুমে থাকেন। নিহত জুথির চাচা মোঃ সুরুজ্জামান জানান, আগুন লেগেছে ওই আতঙ্কে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিল জুথি। আর ওপর থেকে বাবা ভাই গ্রিল বেয়ে বাইরে দিয়ে নামেন। তারা দুজনই সামান্য আহত হন। মাও নামার সময় পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। তার পা ও কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধারণা করছি, পোড়া মেয়েটি আমাদেরই জুথি। এ ঘটনায় দগ্ধ আব্দুল কাদের লিটনের লাশ শনাক্ত করেন তার শ্যালক জহির আলম। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম নন্দনপুর গ্রামের মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে কাদের। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন তার স্ত্রী। হাতিরঝিল থানার এসআই খন্দকার সেলিম শাহরিয়ার জীবন স্টালিন জানান, মৃত তিন জনের মধ্যে শিশু ও কিশোরীর লাশ পুরোপুরিই পুড়ে গেছে। দেখে চেনার উপায় নেই তাই পোড়া দুজনেরই ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে ফরেনসিক বিভাগকে বলা হয়েছে। একজনের শরীর পোড়েনি। সম্ভবত ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তার নাম আবদুল কাদের। ঢামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি আছেন সুমাইয়া আক্তার (৩২), তার ছেলে মাহাদী (৯), মাহমুদুল হাসানসহ (৯ মাস) তিনজন। ফায়ার সদর দফতরের ডিউটি অফিসার এরশাদ আলী জানান, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে আগুন লাগে। প্রাথমিক পর্যায়ে জানা গেছে, বাসার নিচতলার গ্যারেজে প্রথমে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তিনি জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণের পর নিচতলার বাথরুম থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর ভবনটির দোতলায় সিঁড়ি থেকে এক নারী ও এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
×