ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষাসংগ্রামী রওশন আরা বাচ্চু

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ভাষাসংগ্রামী রওশন আরা বাচ্চু

‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ জীবনের জয়যাত্রার প্রতি পদক্ষেপে হাসি কান্নার এক অলীক অনুভব। ‘নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু/ পাশাপাশি’ -প্রকৃতির এই সারসত্য! কিন্তু সব মৃত্যুই শেষযাত্রায় শেষ বা বিস্মৃত হয়ে যায় না! ব্যতিক্রমী এসব মৃত্যু-শোক শক্তিতে পরিণত হয়। ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে দেদীপ্যমান। তিনি ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু। অমিত সাহস আর মাতৃভাষার জন্য অশেষ ভালবাসা তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। এই আলোকিত নারী ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সিলেটের মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার উছলাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জননী মনিরুন্নেসা খাতুনের কোল উজালা করে। তাঁর বাবা এএম আরেফ আলী। তখনও উচ্চশিক্ষার আলো নারী সমাজকে আলোকিত করতে পারেনি। দৃঢ়চিত্ত রওশন আরা সমাজ সংসারের অন্ধকারাচ্ছন্ন বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আলোর ঠিকানায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। যেভাবে তিনি বায়ান্নর ভাষা সংগ্রাম ভেঙেছিলেন পুলিশের ব্যারিকেড! তিনি ১৯৪৭ সালে পিরোজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৪৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫৩ সালে দর্শনে অনার্স ডিগ্রীপ্রাপ্ত হন। এরপর কিছুটা সময় বিরতি। ১৯৬৫ সালে বিএড এবং ১৯৭৪ সালে ইতিহাসে এমএ করেন। রওশন আরা সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সদস্য নির্বাচিত হন। উইম্যান-স্টুডেন্টস রেসিডেন্সেরও এর সদস্য নির্বাচিত হন। ভাষাকন্যা গণতান্ত্রিক প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্ট এর সঙ্গে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। শিলংয়ে পিতার কর্মস্থলে প্রপিতামহের তৈরি নিজস্ব বাড়িতে প্রাথমিক পড়াশোনার পাঠ সমাপ্ত করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে গৌরবান্বিত ভূমিকা রাখেন। আমরা সহজে অনুমান করতে পারি সেই সময়কালে মুসলিম পরিবারের মেয়েরা নানা বাধাবিপত্তিতে দুর্দশাগ্রস্ত ছিলেন। সমাজ সংসার কন্যা সন্তানের জীবন শৃঙ্খলে বেঁধে রাখতে ছিল অঙ্গীকারাবদ্ধ। সেই সময়ে ভাষাকন্যা ভেঙ্গেছিলেন ১৪৪ ধারার নিদারুণ ব্যারিকেড। মায়ের মুখের মধুর বুলি বাংলা ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে। ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ এই দৃঢ়কণ্ঠ দাবিতে কেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশ নামের এই ভূখ-। উর্দুকে হটিয়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় বসাতে মূলত ছাত্র সমাজ অকুতোভয় ভূমিকা রাখেন। তাঁদের ঋণ কখনও শোধ হার নয়। রওশন আরা বাচ্চুর ভূমিকা এই মহিমান্বিত অধ্যায়ে ছিল কিংবদন্তির শামিল। এখানে একটি বিষয় স্মরণীয় ভাষার আন্দোলনে পুরুষদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়। সব মর্যাদায় নারী ভাষাসৈনিকদের মূল্যায়ন আজও করা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ১৯৪৮ সাল। মার্চে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা এলেন। রেসকোর্স ও কার্জন হলে ইংরেজীতে ভাষণ দেন। কার্জন হলে ব্যক্ত করেন অনমনীয় ভাষণ, -Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan তাৎক্ষণিকভাবে শ্রোতাদের মধ্যে থেকে -ঘড়. ঘড়.’ ধ্বনিতে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে সভাস্থল। জিন্নাহ এর পরও, ‘ও hope Bengali will no fail me.’ আন্দোলনের ধারা যতই তীব্রতর হতে শুরু করল- দমন-পীড়ন ততই বেড়ে উঠল। ১৯৫২ সালে ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে আবারও খাজা নাজিমুদ্দীন ঘোষণা করলেন, ‘একমাত্র উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা।’ অধিকার সচেতন বাঙালীর শিরদাঁড়া সটান হলো বিক্ষোভে। আমতলার ঐতিহাসিক সমাবেশে সভাপতির আসনে আসীন গাজীউল হক। ছাত্রনেতারা একজনার পর আরেকজন দিয়ে চলেছেন দীপ্ত ভাষণ। এক পর্যায়ে নেতাদের পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা পেয়ে উত্তেজিত, মনোবলে বলীয়ান উপস্থিত দেশপ্রেমিক ছাত্রজনতা। ভাষাকন্যার রওশন আরার ভাষ্য, ‘বাংলাবাজার থেকে মিছিল করে ফিরে আসি ছাত্রীদের নিয়ে। দীর্ঘ পথ হেঁটে আসতে ক্লান্ত ছিলাম আমি। ...এ সময়ের একটি মজার ঘটনা- ‘মাথায় জিন্নাহ টুপি পরে সভায় এসেছেন শামসুল হক। বক্তৃতা দিতে উঠে নানা যুক্তি দিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার পক্ষে মতামত দিচ্ছিলেন জোরালোভাবে। তার এ ধরনের বক্তৃতায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন হাসান হাফিজুর রহমান। লাফ দিয়ে চলে যান মঞ্চে। হেঁচকা টানে মাথা থেকে নিয়ে যান জিন্নাহ টুপি। তারপর দূরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে ইংরেজীতে বলেন- You have no right to speak here.’ এসব ঘটনার এক পর্যায়ে কথা বলার দায়িত্ব লাভ করেন আব্দুল মতীন। ...এর মধ্যে সাধারণ ছাত্রদের মধ্য থেকে কেউ একজন কিছু বলতে চান। ... আর সেই লোকটি দিলেন একটি ঐতিহাসিক প্রস্তাব। ১০ জন ১০ জন করে আমরা একটি গ্রুপ করিয়ে বেরিয়ে যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পুলিশের ব্যারিকেড ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকল। লাঠি দিয়ে তৈরি করেছে ব্যারিকেড। কেউ কেউ নানাভাবে ব্যারিকেড অতিক্রম করছিলেন। টপকে বা নিচু হয়ে। ভাষাকন্যার ভাষ্য প্রনিধানযোগ্য, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল পুলিশের ব্যরিকেড ভাঙব। লাঠির ওপর দিয়ে লাফিয়ে যাওয়া কিংবা মাথা নিচু করে লাঠির নিচ দিয়ে চলে যাওয়া ব্যারিকেড ভাঙা হলো না। পুলিশের লাঠি ঠেলে সরিয়ে যেতে হবে। তাই করতে থাকি আমি। দু’পাশ থেকে দু’পুলিশের দুটি লাঠিকে ঠেলতে থাকি গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে। ...আমি ঠেলছি প্রাণপণ। ...এক সময় দেখি আরও অনেকে এসে যোগ দিয়েছে আমার সঙ্গে।’ এক সময় ভেঙ্গে পড়ল পুলিশের ব্যারিকেড। পুলিশের লাঠির আঘাতে ভাষাসৈনিকের সর্বশরীর আক্রান্ত। তিনি দৌড়াচ্ছেন। পুলিশও আঘাত করেই চলেছে। গেটের কাছাকাছি ছিল একটি বইয়ের দোকান আর দুটি রেস্টুরেন্ট। মেডিক্যালের মোড়ে। একপর্যায়ে রওশন আরা রিক্সার অনেক ভাঙ্গা পাদানি ও অন্যান্য আবর্জনার পাশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ‘শানে পাঞ্জাব’ রেস্টুরেন্টের পাশের আবর্জনার অন্তরালে যখন ভাষাসৈনিক তখন তিনি ক্ষত-বিক্ষত দেহমনে ভীষণ ক্লান্ত। ক্ষোভে উত্তাল ছাত্ররা বেরিয়ে এসেছে রাজপথে। মুখে একটাই স্লোগান ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।’ এর মধ্যে অনেক ছাত্রকে ট্রাকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। নিপীড়ন বাড়তেই লাগল। লাঠিচার্জ এবং টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন চারপাশ। এই সময় একটা শেল গিয়ে পড়ে গাজীউল হকের ওপর। ওই সময় বেলতলার পুকুরের দিকে ছুটতে লাগল বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। রুমাল ভিজিয়ে টিয়ার গ্যাসের তীব্র ঝাঁজ মুছতে থাকে তাঁরা। এরপরও ছাত্ররা গণপরিষদের দিকে ছুটতে থাকে। ঢাকার জেলা প্রশাসক মি. কোরেশী হুকুমে গুলি চালাল পুলিশ। বিকট শব্দে গর্জে উঠল আগ্নেয়াস্ত্র। লুটিয়ে পড়লেন বরকত, সালাম। গুলিবিদ্ধ অনেকেই রক্তে ভেজা রাজপথের ওপর ছটফট করতে লাগলেন। এই সময়ে রওশন আরা আবর্জনার স্তূপ থেকে বেরিয়ে ছুটতে লাগলেন প্রভোস্ট এস ওসমান গনি সাহেবের বাড়ির দিকে। পথে কাঁটাতারের বেড়ায় জড়িয়ে পড়ে তাঁর শাড়ির আঁচল। অবশেষে সহৃদয় কেউ একজন তাঁকে কাঁটাতার থেকে মুক্ত করলে তিনি গনি সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ভেতরে গিয়ে দেখতে পান- সারা তৈফুর, সুফিয়া, ইব্রাহিম ও বোরখা শামসুন। জর্জরিত দেহমন নিয়ে গনি সাহেবের বাড়ি থেকে খবরাখবর রাখছেন রওশন আরা বাচ্চু। জ্বালাময়ী বক্তৃত্তা দিচ্ছেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ। ২২ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের গয়েবানা জানাজা হয়। নামাজ পড়ান মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা আবুল কাসেম, ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ প্রমুখ। জানাজা শেষে বের হয় মিছিল। সে মিছিলে যোগ দিতে আসেন পুরনো ঢাকার মহল্লা সর্দারগণ। শহিদদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে চরম প্রতিক্রিয়া হয় মহিলা সমাজের মধ্যে। ১২ নম্বর অভয়দাস লেনে বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম কাজী মোতাহের হেসেন প্রমুখের নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রকাশ করেন মহিলা সমাজ। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমুন্নত করার সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক কর্মকা-ের সমুদয় চিত্র তুলে ধরতে বিস্তৃত পরিসর প্রয়োজন। এ যেন এক অনিঃশেষ যাত্রার প্রতীক! অবশেষে আজ বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষার মর্যাদার সুরক্ষা হয়েছে। ভাষাকন্যা রওশন আরা বাচ্চু যে ইতিহাস রচনা করে গেছেন তার সূচনা বুঝি আরও অতীতের ইন্ধনে। ভাষাকন্যা উজ্জ্বল প্রদীপ হয়ে অমর হয়ে রইলেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে। কিন্তু এই প্রদীপের সল্তে পাকানো হয়েছিল বহু পূর্বে। তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারায়। তাঁর রক্তপ্রবাহে মুক্ত চিন্তা-চেতনার বীজ রোপিত হয় বহু পূর্বে। তিন পুরুষের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক রওশন আরা বাচ্চু। প্রমিতামহ মোহাম্মদ আবিদ পুত্র আমজাদ আলীকে সুশিক্ষিত করার উদ্দেশে নিয়ে যান অসমের শিলংয়ে। সেখানে তিনি একটি বাড়িও নির্মাণ করেন। আমজাদ আলী নিজেকে একজন মুক্তমনের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সফলকাম হন। তাঁর পুত্র-সন্তানরাও সেই বাড়িতে থেকে সুশিক্ষিত হয়ে ওঠেন। তাঁকে চাকরি জীবনের সাফল্যের স্বীকৃতস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার দুটি খেতাব দেন। খান সাহেব ও খান বাহাদুর। কিন্তু আমজাদ আলী ছিলে স্বাধীনচেতা। স্বাদেশিকতার চেতনায় খান সাহেব ও খান বাহাদুর খেতাব পরিত্যাগ করেন। নেমে আসেন জনতার কাতারে। আমজাদ আলী সাহেবের পুত্র আবুল মোজাফফর আশরাফ আলী ভাষাসৈনিক রওশন আরার ভাগ্যবান পিতা। সাব-রেজিস্টার হিসেবে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। মাতা মনিরুন্নেছা খাতুন ছিলেন স্বশিক্ষিত। সংস্কৃতিমনা। তিনি সাংসারিক কাজ কর্মের ফাঁকে গুন গুন করে গাইতেন স্বদেশি গান, ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি। আমি হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসি।’ তিনি স্বাদেশিকতা লালন করতেন সমস্ত চেতনায়। কন্যাও শৈশবকাল থেকেই স্বাদেশিকতার বীজ অবচেতন মনে রোপন করেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ডামাডোলে সারা পৃথিবী প্রকম্পিত হয়। নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু গঠন করে আজাদ হিন্দ ফৌজ। রওশন আরা মনে প্রাণে আজাদ হিন্দু ফৌজের সমর্থক ছিলেন। তিনিও গুন গুন করে নিজেকে শোনাতেন স্বাদেশিকতার গুঞ্জন। কদম কদম বাড়ায়ে যা। দিকে দিকে গায়ে যা। জিন্দেগি হ্যায় কওম কি। কওম সে লুটায়ে সে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে পড়বার সময় সান্নিধ্য পান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দার্শনিক প্রফেসর ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেবের। তিনি ছাত্রীদের উপদেশ দিতেন সস্নেহে, তাঁরা যেন শিক্ষা জীবন শেষ করে হেঁশেলে ঢুকে না পড়েন। প্রত্যেককেই জ্ঞান বিতরণের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। রওশন আরা এ উপদেশকে কায়মনোবাক্যে গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তী জীবনে ভাষাকন্যা শিক্ষকতা পেশাকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা হোক’ আন্দোলনে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে যেতে পারঙ্গম হলেন। সে সময়টায় মেয়েদের সযতেœ গৃহকোণে বন্দী করে গৃহকর্ম, ধর্মকর্মে ‘শিক্ষিত’ করার প্রয়াস চলছিল। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে কথা বললে ছিল দশ টাকা ফাইন! তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন কুলাউড়া গার্লস স্কুলে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষয়িত্রী হিসেবে। এছাড়াও ঢাকার আনন্দময়ী স্কুল, লিটল এ্যাঞ্জেলস, আজিম গার্লস স্কুল, নজরুল একাডেমি, কাকলি হাইস্কুল এবং শেষে আলেমা একাডেমিতে শিক্ষকতা করেন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি শিক্ষকতার পরম ব্রতী নিবেদিত ছিলেন। তাঁর চারকন্যা সমাজে প্রতিষ্ঠিত। প্রথমা কন্যা মনোবিদ, দ্বিতীয় কন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তৃতীয় কন্যা শিক্ষক এবং চতুর্থ কন্যা এনজিও কর্মী। ভাষাকন্যার স্বামী মহহুম এসএ ওয়াহেদ এটি। তিনি ছিলেন কৃষিবিদ, কৃষিকর্মকর্তা। স্বামীর পরিবারটিও শিক্ষায় দীক্ষায় প্রগতিশীল ছিল। আমাদের স্মরণে রাখতে হবে মধ্যযুগের অন্যতম কবি আবদুল হাকিম লিখেছিলেন, ‘যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।’ ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু মুক্ত চেতনার মহীয়সী নারী। তাঁর সঠিক মূল্যায়ন আজো হয়নি। এ বড় পরিতাপের বিষয়। ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ এই ক্ষণজন্মা নারী ছিয়াশি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। ]‘নয়ন সমুখে তুমি নাই/ নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই’ পরপারে শান্তিতে থাকুন ভাষাসৈনিক। তিনি থাকবেন বাঙালর অন্তরে সত্য সুন্দরের প্রতীক হয়ে।
×